মেদিনীপুর, 14 জুন: এবার ধাক্কা খেলেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের যুবরাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন খোদ তৃণমূলেরই দুই প্রার্থী । নবজোয়ারে গিয়ে দুই প্রার্থীকে বেছে নিয়েছিলেন খোদ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই মতো কেশপুর থেকে শেখ হোসিরুউদ্দিন এবং মঞ্জু দলবেরাকে পঞ্চায়েতের প্রার্থী করেছিল তৃণমূল । কিন্তু প্রার্থী হওয়ার 24 ঘণ্টাও কাটল না, তার মধ্যে শেখ হোসিরুদ্দিন সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি প্রার্থী হতে পারছেন না ।
পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বের মাঝেই বেশ কয়েকটি জেলায় তৃণমূল ছাড়ার হিড়িক লেগেছে। এমনকী বীরভূমেও দলের শক্তিক্ষয় অব্যাহত । এর মাঝেই এবার ধাক্কা খেলেন অভিষেক । তাঁর মনোনিত প্রার্থীই এবার ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ালেন । সেক্ষেত্রে কেশপুরের প্রার্থী শেখ হোসিরুদ্দিনের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, ওষুধের দোকানের কাজই তাঁর জন্য ভালো । পঞ্চায়েত প্রার্থী হওয়া তাঁর কম্ম নয়। আর তাতেই ফের নতুন করে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুরে জনসভা করতে এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেশপুরের আনন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভামঞ্চ থেকে তিনি এই তিন ‘মুখ’কে তুলে ধরেন। প্রকাশ্য জনসভায় তাঁদের বাড়ির ছবি দেখিয়ে বোঝান, দুর্নীতি দূর অস্ত, ভাঙা বাড়িতে থেকেও তাঁরা আবাস যোজনার ঘর পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন এই তিন ব্যক্তি। এঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন গোলারের শেখ হোসিরুদ্দিন। তাঁকে মঞ্চে ডেকে অভিষেক বলেছিলেন, "ইনি তৃণমূল করেন না। কোনও দল করেন না। এঁকে কি দেখে মনে হয়, ইনি চোর, ডাকাত, দুর্নীতিগ্রস্ত? এঁর বাড়ি দেখুন। কিন্তু আবাস যোজনায় ঘর নেননি। সামনে মেয়ের বিয়ে। এত কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছেন, তবু আবাস যোজনার ঘর নেননি। ইনি কেশপুরে পঞ্চায়েত স্তরের মুখ। এঁরাই আমাদের সম্পদ।"
বুধবার দলের তরফে জানানো হয়েছে শেখ হোসিরুদ্দিন এবং মঞ্জু দলবেরা কেশপুর এলাকার কলাগ্রাম ও গোলারের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী। সেইমতো এদিন সকাল দশটায় তাদের যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়। সেই কাগজপত্র নিয়েই পঞ্চায়েত অফিসে তাদের নির্দিষ্ট ডিসিআর কাটা হয়। কিন্তু সেই ঘটনার 24 ঘণ্টা কাটল না, ইতিমধ্যে হোসিরুদ্দিন দলকে জানিয়ে দিল সে তার ওষুধের দোকানের কাজ ছেড়ে কিছুতেই এই পঞ্চায়েত প্রার্থী হবে না। আর তাতেই এর নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। আর এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই কেশপুরে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। এইদিন এক বিবৃতিতে হোসিরুদ্দিন জানান, তাঁর ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে এই ওষুধের দোকানে কাজ করে যে অল্প টাকা রোজগার করেন, সেই টাকায় কোনওক্রমে সংসার চলে যাচ্ছে। পঞ্চায়েত প্রার্থী হয়ে তিনি সেই টাকা ইনকাম করতে পারবেন না বলেও জানান হোসিরুদ্দিন।
তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত সদস্য হয়ে গেলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁকে যুক্ত হতে হবে। তাতে তিনি ওষুধের দোকানে কাজ করার সময় পাবেন না। এতে তার উপার্জনের পথ যেমন বন্ধ হয়ে যাবে তেমনি সংসারে অভাব অনটন দেখা দেবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাই আমি। কিন্তু আমি এই পঞ্চায়েত পদে দাঁড়াতে পারব না। ক্ষমা করবেন অভিষেকবাবু।" এই ঘটনায় ফাঁপরে পড়েছে শাসক দল তৃণমূল।
আরও পড়ুন: 'ভোট লুঠ করতে দেব না', কমিশনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে শুভেন্দু-সহ বিজেপি নেতৃত্ব
যদিও এ বিষয়ে এলাকার বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, "আমরা সেই সব মানুষকেই পঞ্চায়েতে প্রার্থীর জন্য খুঁজেছি যাঁরা সত্যিই সততার প্রতীক এবং যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে চান । নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে মঞ্জু দলবেরা এবং হোসিরুউদ্দিন ঠিক সেরকমই প্রার্থী আমাদের। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে তাদের কথা দিয়েছিলেন সেই কথা মত আমরা তাদের পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে মনোনয়ন করলাম। কিন্তু হোসিরুউদ্দিনের এই সদস্যপদ ত্যাগ করা প্রসঙ্গে মন্ত্রীর বক্তব্য উনি এই পঞ্চায়েত ভোটে নাও লড়তে পারেন সেটা ওনার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমরা আমাদের কথা রেখেছি।" তৃণমূল এখন এই পদে কার নাম প্রস্তাব করে সেটাই এখন দেখার। যদিও হাতে মাত্র রয়েছে একটা দিন। এরই মধ্যে না করতে পারলে পঞ্চায়েত কাজ চালানোর জন্য সমস্যায় পড়বে শাসক দল।