খেমাশুলি (পশ্চিম মেদিনীপুর), 6 এপ্রিল: বিভিন্ন দাবিতে মঙ্গলবার থেকে রেল ও সড়ক অবরোধ শুরু করেছে কুড়মিরা ৷ বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনও তাদের আন্দোলন অব্যাহত ৷ এরই মধ্যে বুধবার রাতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘিরে পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের একজনকে গাড়ির ধাক্কা দেওয়া হয় ৷ সেই কারণেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ৷ আর তার জেরেই ভাঙচুর হয় বলে জানা গিয়েছে ৷ এদিকে এই অবরোধের জেরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে যানবাহন চলাচল ৷ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে ।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সংযোগস্থলে খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে 6 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে কুড়মিরা ৷ খড়্গপুর ডিভিশনের অন্তর্গত খড়্গপুর-টাটানগর লাইনের খেমাশুলিতে ও আদ্রা ডিভিশনের আদ্রা-চাণ্ডিল লাইনে কুস্তাউরে চলছে রেল অবরোধ । দক্ষিণ পূর্ব রেলের এই দুই ডিভিশনে (আদ্রা ও খড়্গপুর) বাতিল করা হয়েছে প্রায় 78 থেকে 80টি ট্রেন । যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে 8-10টি ট্রেনের ।
দক্ষিণ পূর্ব রেলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হাওড়া-পুনে আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস (12130), হাওড়া-জগদলপুর এক্সপ্রেস (18005), হাওড়া-আমেদাবাদ এক্সপ্রেস (12834), হাওড়া-পুনে দুরন্ত এক্সপ্রেস (1224), হাওড়া-পুরুলিয়া-হাওড়া (12883/12884) এক্সপ্রেস, খড়্গপুর-হাতিয়া-খড়্গপুর এক্সপ্রেস (18035/18036) সহ আদ্রা-পুরুলিয়া-আদ্রা মেমু, টাটানগর-খড়্গপুর-টাটানগর মেমু, পুরী-নিউ দিল্লি এক্সপ্রেস, হাওড়া-বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি-ঝাড়গ্রাম-সাঁতরাগাছি মেমু, আসানসোল-রাঁচি মেমু, খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম মেমু, হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম মেমু, ধানবাদ-টাটানগর মেমু-সহ প্রায় 78টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে ।
অন্যদিকে বুধবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি ও জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার । বৈঠকে কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি । ফলে আন্দোলনেও ইতি পড়েনি ৷ জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে । তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে, রমজান মাস চলছে । সঙ্গে খড়্গপুর গ্রামীণের মাদপুরে চলছে মনসা পুজো উপলক্ষে মেলা । বহু মানুষের সমস্যা হচ্ছে । তাই রাজ্য সরকার যেহেতু বিষয়টি দেখছে, আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করা হোক ।
তবে, জেলা প্রশাসনের সেই প্রস্তাবে রাজি হননি আন্দোলনকারীরা । আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাঁদের জোর করে হুঁশিয়ারি দিয়ে আন্দোলন তোলাতে চেয়েছিলেন জেলাশাসক ৷ তিনি কুড়মি সমাজের প্রতি সম্মানও প্রদর্শন করেননি । তাই আন্দোলন চলবে । তবে আগামী 12 তারিখের পর থেকে বড় আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে ।
আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতৃত্ব কমলেশ মাহাতো ও কুড়মি সমাজের রাজ্য নেতা রাজেশ মাহাতো জানান, সরকারকে অবিলম্বে সিআরআই রিপোর্ট সংশোধন বা জাস্টিফাই করে পাঠাতে হবে । তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে । তবে, তাঁরা তাঁদের উচ্চ নেতৃত্বকে সব জানাবেন । তবে এই আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সমস্ত দায় তাঁরা সরকারের উপরই চাপিয়েছেন । কমলেশ মাহাতো পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর প্রসঙ্গে জানান, তাঁদের আন্দোলনে একটি গাড়ি খুব দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়ে ও এক কর্মীকে ধাক্কা মারে । এই ঘটনায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে যেতে পারে ।
আরও পড়ুন: কুড়মি বিক্ষোভে ব্যাহত পরিষেবা, বাতিল 78 জোড়া ট্রেন