মেদিনীপুর, 27 জুন : বিশ্ব বাজারে বন্দিত ৷ ভারতেওএখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাগন ফল ৷ মূলত অ্যামেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়এর বিপুল চাহিদা ৷ বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই এই ফলের চাষ করা হয় ৷ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে ৷ যে কোনওহার্টের অসুখ সারাতে সাহায্য করে এই ফল ৷ একইসঙ্গে কোলেস্টেরল কমাতে এর জুরি মেলাভার । তাই স্বাদে সাধারণ হলেও চাহিদা বাড়ছে ড্রাগন ফলের ৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যেরবিভিন্ন বাজারে এই ফল পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া গেলেও মেদিনীপুর জেলায় এতদিন সেভাবেদেখা যায়নি ফলের দুনিয়ায় অন্যতম সেরা এই ফলকে ৷ কিন্তু বর্তমানে মেদিনীপুরেরবাজারেও এই ড্রাগন ফলের রমরমা দেখা যাচ্ছে ৷
কোরোনারদাপটে কাবু বিশ্ব ৷ এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি এই মারণ রোগের ৷বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করতে একমাত্র ভরসা শরীরের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা ৷ আর চিরকিৎসকদের মতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই ড্রাগনফলের জুড়ি মেলা ভার ৷
কিন্তুকী এই ড্রাগন ফল ৷ অত্যন্ত উপকারি এই ফলের নামকরণ হয়েছে এর রূপের জন্য ৷ সারাশরীরে আঁশযুক্ত ডিম্বাকৃতির এই ফল অনেকটা রূপকথার ড্রাগনের মতো দেখতে ৷ সাধারণতচার রকমের হয় এই ফলটি ৷ তিনটি প্রজাতির ফলের ত্বকের রং গোলাপি ৷ ও একটি প্রজাতিরত্বকের রং হলুদ ৷ প্রথম তিন প্রজাতির ফলের শাঁসের রঙও ভিন্ন ৷ একটির রং সাদা, একটি লাল ও অন্যটি বেগুনি ৷ হলুদ রংপ্রজাতির ফলের শাঁসের রং সাদা ৷
দেখতেবা খেতে সাধারণ মানের হলেও এর উপকারিতা প্রচুর ৷ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এই ফল৷ ক্যালোরি কম করতে এর জুড়ি মেলা ভার ৷ এর মধ্যে ভরপুর থাকে ভিটামিন ও মিনারেল ৷এই ফল ক্যানসারের আশঙ্কাকেও অনেকাংশে কম করে ৷ এর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমানেভিটামিন C দীর্ঘদিনেরবিভিন্ন রোগ সারাতে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ৷ এইফলের মধ্যে ফাইবারের পরিমানও যথেষ্ট ৷ সাধারণত শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণেও এই ফলগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷
বর্তমানেএই ড্রাগন ফলেই মজেছে গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মানুষ । পশ্চিম মেদিনীপুরেরগড়বেতা, ঘাটাল, খড়গপুর, কেশিয়াড়ি ফলের বাজার এখন এই ফলেররমরমা ৷ ড্রাগন ফলের দাম 500-600 টাকাপ্রতি কেজি । কখনও কখনও সিজন হিসাবে দাম কমে বা বাড়ে । এই ফলের নির্দিষ্ট ক্রেতাওরয়েছেন ।
এইড্রাগন ফল নিয়ে অনেকের অনেক অভিমত রয়েছে । কারও কারও মতে এই ড্রাগন ফল খেলেশরীরের নানা জটিল অসুখ সেরে যায় । বিশেষ করে সুগার,ডায়াবেটিস,ক্যানসারের মত যাবতীয় পীড়া থেকেমুক্তি ঘটে । এই ড্রাগন ফলে খাওয়ার ফলে শরীরে ইমিউনিটি বাড়ায় । এই রকমই বিভিন্নঅভিমত নিয়ে ড্রাগন ফল কেনা বেচা চলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় । যদিও বর্তমানেড্রাগন ফলের চাষও করা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলাতে ৷
এইড্রাগন ফল কিনতে আসা দীপঙ্কর দে বলেন, ‘‘আমরা ড্রাগন ফলের গুণ তো জানি না ।তবে অন্যান্য ফলের মতো এই ফল যেভাবে নজর কাড়ছে তাই নিয়ে গিয়ে দেখব,এর স্বাদ কেমন ? শুনেছি খুব ভালো খেতে এবং এই ফল খেলেনাকি শরীরের খুব উপকার হয় ।’’ আর একজন ক্রেতা সুবীর মাঝি বলেন, ‘‘ড্রাগন ফল শরীরের পক্ষে খুব উপকারী ৷এমনই শুনেছি ইউটিউব চ্যানেলে । তাই এই ফল কিনতে আসেছি ৷’’
একড্রাগন ফল বিক্রেতা পলাশ রায় বলেন, ‘‘ড্রাগন ফল সিজনের ফল ৷ মাত্র কয়েকমাসইপাওয়া যায় । এরপর আর পাওয়া যায় না । আমরা অল্প পরিমাণে দোকানে তুলেছি ।বর্তমানে এই ফলের চাহিদা প্রচুর । তাই ভবিষ্যতে আরও বেশি করে এই ফল দোকানে নিয়েআসব ৷’’ তারমতে ফলের দাম বেশি হলেও তা কিনতে পিছপা হন না ক্রেতারা ৷
যদিওএ বিষয়ে মেদিনীপুরের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, ‘‘এই ড্রাগন ফল জেলায় ধীরে ধীরেজনপ্রিয় হয়ে উঠছে ৷ বর্তমানে আম, লিচু, কলার মত ড্রাগন ফলের চাহিদাও বাড়ছেজেলায় । আমরা যদিও ড্রাগন ফল চাষ করার জন্য চেষ্টা করছি । প্রথমদিকেপরীক্ষামূলকভাবে গড়বেতার পিংলায় এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে । তবে জেলায় আরও বেশি করেচাষ করার কথা ভাবা হচ্ছে ৷’’
ড্রাগনফলের উপকারিতা নিয়ে বিশিষ্ট প্রসূতি চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়া বলেন, ‘‘এই ড্রাগন ফল সত্যিই শরীরের পক্ষেউপকারী । বিশেষ করে প্রসূতি রোগীদের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল খুব উপকারি । শরীরেরনানাবিধ জটিল রোগ এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ড্রাগন ফল অতুলনীয় ।অন্যান্য ফলের মতো এই ফলের যথেষ্ট গুণাগুণ রয়েছে । যার জন্য জেলায় এত চাহিদা ।’’