কলকাতা, 24 জানুয়ারি: বিনোদিনী থিয়েটারে 'বিনোদিনী-একটি নটীর উপাখ্যান' সিনেমার মুক্তি ৷ এটাই সবথেকে বড় জয় এই ছবির ৷ জীবনে প্রথমবার পূর্ণ দৈর্ঘের বাংলা সিনেমা বানিয়ে সাড়া ফেলে দিলেন মুম্বই নিবাসী বাঙালি পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়। পাঁচ বছর ধরে চলেছে বিনোদিনীকে গড়ে তোলার লড়াই। রুক্মিণী মৈত্র যে নিজের নাম ভুলেই গিয়েছিলেন তা তাঁর অভিনয়ে স্পষ্ট।
হলফ করে বলা যায়, এর আগে এমন সুন্দর কোনও ছবিতে লাগেনি রুক্মিণী মৈত্রকে। পাশাপাশি তাঁর অভিনয়শৈলী দিয়ে তিনি বোঝালেন তিনিও পারেন অন্যরকমভাবে নিজেকে মেলে ধরতে। তাঁর কত্থক নৃত্যশৈলী আলাদা নজর কেড়েছে। এই প্রসঙ্গে বলতেই হয়, রুক্মিণীর সঙ্গে যাঁরা নেচেছেন তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যেই অভিনয় আছে। কেউই হিরোইনের থেকে কম নজর কাড়েননি এই দৃশ্যে। প্রসঙ্গত, নাচের যে মহল তৈরি হয়েছে এই ছবিতে তাতে এক লহমায় চোখে ভেসে ওঠে 'মুঘল-এ-আজম' ছবির সেই 'মোহে পনঘট পে নন্দলাল' গানে মধুবালার নাচের দৃশ্য।
ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োতে গড়ে উঠেছিল এক টুকরো তৎকালীন লর্ড কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট। তৈরি করেছিলেন আর্ট ডিরেক্টর তন্ময় চক্রবর্তী। রাস্তাঘাট, দোকানপাট সবই ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োতে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। দেখে বোঝা দায় সত্যিই লর্ড কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট নাকি বানানো হয়েছে জায়গাটা। রামকমল বলছিলেন প্রথমবার কোনও হিরোইনের জন্য এত বড় একটা শহরের সেট লাগানো হয়েছে।
প্রত্যেকের অভিনয় নজর কেড়েছে এই ছবিতে। রাহুল বোস থেকে শুরু করে মীর, ওম সাহানি নিজেদের ক্যারিশ্মা বুঝিয়ে দিয়েছেন অল্প সময়ের মধ্যেই। গিরিশ ঘোষের চরিত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় অনবদ্য। গিরিশ ঘোষের সেদিনের ভিলেনি ইমেজ এতটুকু ধরতে পারেননি বিনোদিনী। এই ছবিতে কৌশিকের অভিনয়ও বুঝতে দেয়নি যে বিনোদিনী দেবীকে পশ্চাতে ফেলার নায়ক তিনিই। গোলাপের চরিত্রে চান্দ্রেয়ী ঘোষের অভিনয় দুর্দান্ত। এরকম চরিত্রে তিনি সবসময়েই উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন।
কুমার বাহাদুর অর্থাৎ ওম সাহানির সঙ্গে রুক্মিণী মৈত্রর রসায়ন নতুনত্বের স্বাদ দেবে। রামকৃষ্ণের চরিত্রে চন্দন রায় সান্যাল থেকে দাশুর ভূমিকায় গৌতম হালদার প্রত্যেকের অভিনয় চোখ সরাতে দেবে না। মনে রাখার মতো দৃশ্য যেখানে ব্রিটিশ মহিলা সাংবাদিক এবং ব্রিটিশ ফোটোগ্রাফার রুক্মিণীকে আবিষ্কার করছে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে। আর নির্ভুল ইংরেজিতে বিনোদিনী পৌঁছে যাচ্ছেন নিটোল আন্তর্জাতিকতায়।
ছবির গান আগেই হিট। সবথেকে বড় কথা হল একটি গানও জোর করে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে হয়নি। সঠিক সময়ে হয়েছে সঠিক গানের ব্যবহার। শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে 'কানহা' থেকে অন্বেষার কণ্ঠে 'আজই বরিষ রাতে', কিংবা শুচিস্মিতার গলায় 'হরি মন মজায়ে' মানুষের মন কেড়ে নিচ্ছে। 'হরি মন' চোখে জল আনছে। আসলে ছবিটাতে কোনওকিছুরই অভাব নেই। গান, ঘটনা, নাচ, রোম্যান্স অর্থাৎ বিনোদনের ফুল প্যাকেজ আছে ছবিতে। কিছু জায়গায় অতি নাটকীয়তা ঠাহর হলেও হতে পারে। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। ভালো মুহূর্তগুলো সেখানে অনেক বেশি শক্তিশালী।
রামকমলকে স্যালুট এমন একখানা ছবি বাঙালি দর্শককে উপহার দেওয়ার জন্য। যে ছবি চোখের আরাম দেয়, ইতিহাস মেলে ধরে, একটা সময়কে তুলে ধরে, এমন এক রুক্মিণী মৈত্রকে উপহার দেয়। এমন পরিচালক পেলে নিজেকে প্রমাণ করার আরও সাহস পাবেন নায়িকাও। পাশাপাশি দেবকেও সাধুবাদ জানাতে হয় ইতিহাসনির্ভর ছবি নির্মাণের প্রতি তাঁর আগ্রহের কারণে।