মালদা, 24 জানুয়ারি: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভলিবল টুর্নামেন্ট ৷ নৈশকালীন টুর্নামেন্টের উদ্বোধনে একাধিক রাইফেল থেকে শূন্যে ছোড়া হল গুলি ৷ সে সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে ৷ তাঁদের সামনে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি কীভাবে চলল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷ মানিকচক ব্লকের নুরপুর এলাকার এই ঘটনা ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শোরগোল পড়েছে জেলায় ৷ যদিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাতেই চারটি বন্দুক বাজেয়াপ্ত করেছে মানিকচক থানার পুলিশ ৷
প্রতি বছরের মতো গতকাল বিকেলেও নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে নুরপুর হাইস্কুল মাঠে নৈশকালীন ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে স্থানীয় টিপটপ ক্লাব ৷ টুর্নামেন্টে দেশের ছ’টি রাজ্যের ছ’টি দল অংশগ্রহণ করে ৷ দীর্ঘদিনের পুরনো প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন মানিকচক ব্লক তৃণমূলের একাধিক নেতাও ৷ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সেখানেই চলে গুলি ৷ গোটা ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
|
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডলের অভিযোগ, “ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে তিনজন বন্দুকধারী পরপর গুলি করছে ৷ এটা এককথায় ভীতি প্রদর্শন করা ৷ জানি না, বন্দুকগুলির লাইসেন্স রয়েছে কি না ৷ সেটা প্রশাসন এবং থানার আইসি বলবেন ৷ সরকার থেকে নিজের বা বাড়ির সুরক্ষার জন্য বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয় ৷ হয়তো মজা করার জন্য বা মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য-এই সরকার বন্দুকের লাইসেন্স দিয়েছে ৷ এখন খুন, ধর্ষণ, বোমাবাজি, তোলাবাজি তৃণমূলের কালচার ৷ মাননীয়ার নির্দেশেই গোটা এলাকায় সন্ত্রাস হয় ৷ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এই সরকার অপারগ ৷ পুলিশও ব্যর্থ ৷ তৃণমূলের লোকজনই ওই খেলার আয়োজন করেছিল ৷ তাঁদের মদতেই সেখানে গুলি চালানো হয়েছিল ৷ আমরা এদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি ৷ তবে তৃণমূলের স্ট্যাম্প লাগানো থাকলে পুলিশও কিছু করে না ৷”

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, “প্রতি বছর 23 জানুয়ারি নুরপুরে ওই ক্লাবের উদ্যোগে ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয় ৷ গতকালও হয়েছিল ৷ অদ্ভুতভাবে দেখলাম, সেখানে কয়েকজন বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে খেলার উদ্বোধন করছেন ৷ সেই বন্দুকগুলি লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে পারে ৷ কিন্তু এই ঘটনা সমাজের পক্ষে ভালো নয় ৷ নিজের নিরাপত্তার জন্য কেউ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক রেখেছেন, সেটা ঠিক আছে ৷ কিন্তু সেই বন্দুক এসব কাজে ব্যবহার না-হওয়াই কাম্য ৷ এসব আচরণ সমাজে অন্য বার্তা দেয় ৷ গত একমাস ধরে আমাদের জেলায় বিভিন্ন রাজ্যের দুষ্কৃতীরা নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে ৷ যা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোদ মুখ্যমন্ত্রীও ব্যতিব্যস্ত ৷ তাঁকে মালদায় ছুটে আসতে হয়েছে ৷ কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, এ নাকি ট্র্যাডিশন ৷ সেক্ষেত্রে সেই ট্র্যাডিশন ভেঙে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি ৷ আমাদের সমাজে এমন কোনও উদাহরণ তৈরি করা উচিত নয়, যা পরবর্তী প্রজন্ম বা যুব সমাজকে ভুল বার্তা দেবে ৷”
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর বক্তব্য, “নুরপুরে ভলিবল টুর্নামেন্টে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার যে ঘটনা ঘটেছে তাতে পুলিশ ইতিমধ্যে সেই বন্দুকগুলিকে বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ খেলার উদ্বোধনে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার জন্য জেলাশাসকের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না সেটাও তারা খতিয়ে দেখছে ৷ অস্ত্র আইন অনুযায়ী অনুমতি না-নিয়ে গুলি চালানো হলে বন্দুকগুলির লাইসেন্স বাতিল হবে ৷ যে বা যারা বন্দুক থেকে গুলি চালিয়েছিল, তাদের সাজা হবে ৷ এক্ষেত্রে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে ৷’’