ETV Bharat / state

নেতাজির জন্মদিনে গুলি ছুড়ে ভলিবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন! দাঁড়িয়ে দেখল পুলিশ - MALDA FIRING

পুলিশ জানিয়েছে, চারটি বন্দুক এবং চারটি লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । তবে যারা গুলি ছুড়েছে তাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় নি।

Firing in Volleyball Tournament Inauguration in Malda
নেতাজির জন্মদিনে গুলি ছুড়ে উল্লাস (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 24, 2025, 3:32 PM IST

মালদা, 24 জানুয়ারি: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভলিবল টুর্নামেন্ট ৷ নৈশকালীন টুর্নামেন্টের উদ্বোধনে একাধিক রাইফেল থেকে শূন্যে ছোড়া হল গুলি ৷ সে সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে ৷ তাঁদের সামনে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি কীভাবে চলল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷ মানিকচক ব্লকের নুরপুর এলাকার এই ঘটনা ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শোরগোল পড়েছে জেলায় ৷ যদিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাতেই চারটি বন্দুক বাজেয়াপ্ত করেছে মানিকচক থানার পুলিশ ৷

প্রতি বছরের মতো গতকাল বিকেলেও নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে নুরপুর হাইস্কুল মাঠে নৈশকালীন ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে স্থানীয় টিপটপ ক্লাব ৷ টুর্নামেন্টে দেশের ছ’টি রাজ্যের ছ’টি দল অংশগ্রহণ করে ৷ দীর্ঘদিনের পুরনো প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন মানিকচক ব্লক তৃণমূলের একাধিক নেতাও ৷ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সেখানেই চলে গুলি ৷ গোটা ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানান, এই ঘটনায় আইন যে লঙ্ঘিত হয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত চারটি বন্দুক এবং সেগুলির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ এই ঘটনায় চার লাইসেন্সপ্রাপক মনসুর আহমেদ খান, আমিনুর রহমান খান, আলকামা খান চৌধুরী এবং মহম্মদ বখতাওয়ার খানের বিরুদ্ধে আর্মস অ্যাক্টের 30 ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ এই চারজন নুরপুরের পাঠান পাড়ার বাসিন্দা ৷ গোটা ঘটনায় পুলিশি তদন্ত জারি রয়েছে ৷

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডলের অভিযোগ, “ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে তিনজন বন্দুকধারী পরপর গুলি করছে ৷ এটা এককথায় ভীতি প্রদর্শন করা ৷ জানি না, বন্দুকগুলির লাইসেন্স রয়েছে কি না ৷ সেটা প্রশাসন এবং থানার আইসি বলবেন ৷ সরকার থেকে নিজের বা বাড়ির সুরক্ষার জন্য বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয় ৷ হয়তো মজা করার জন্য বা মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য-এই সরকার বন্দুকের লাইসেন্স দিয়েছে ৷ এখন খুন, ধর্ষণ, বোমাবাজি, তোলাবাজি তৃণমূলের কালচার ৷ মাননীয়ার নির্দেশেই গোটা এলাকায় সন্ত্রাস হয় ৷ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এই সরকার অপারগ ৷ পুলিশও ব্যর্থ ৷ তৃণমূলের লোকজনই ওই খেলার আয়োজন করেছিল ৷ তাঁদের মদতেই সেখানে গুলি চালানো হয়েছিল ৷ আমরা এদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি ৷ তবে তৃণমূলের স্ট্যাম্প লাগানো থাকলে পুলিশও কিছু করে না ৷”

Firing in Volleyball Tournament Inauguration in Malda
ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত চারটি বন্দুক এবং সেগুলির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে (ইটিভি ভারত)

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, “প্রতি বছর 23 জানুয়ারি নুরপুরে ওই ক্লাবের উদ্যোগে ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয় ৷ গতকালও হয়েছিল ৷ অদ্ভুতভাবে দেখলাম, সেখানে কয়েকজন বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে খেলার উদ্বোধন করছেন ৷ সেই বন্দুকগুলি লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে পারে ৷ কিন্তু এই ঘটনা সমাজের পক্ষে ভালো নয় ৷ নিজের নিরাপত্তার জন্য কেউ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক রেখেছেন, সেটা ঠিক আছে ৷ কিন্তু সেই বন্দুক এসব কাজে ব্যবহার না-হওয়াই কাম্য ৷ এসব আচরণ সমাজে অন্য বার্তা দেয় ৷ গত একমাস ধরে আমাদের জেলায় বিভিন্ন রাজ্যের দুষ্কৃতীরা নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে ৷ যা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোদ মুখ্যমন্ত্রীও ব্যতিব্যস্ত ৷ তাঁকে মালদায় ছুটে আসতে হয়েছে ৷ কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, এ নাকি ট্র্যাডিশন ৷ সেক্ষেত্রে সেই ট্র্যাডিশন ভেঙে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি ৷ আমাদের সমাজে এমন কোনও উদাহরণ তৈরি করা উচিত নয়, যা পরবর্তী প্রজন্ম বা যুব সমাজকে ভুল বার্তা দেবে ৷”

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর বক্তব্য, “নুরপুরে ভলিবল টুর্নামেন্টে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার যে ঘটনা ঘটেছে তাতে পুলিশ ইতিমধ্যে সেই বন্দুকগুলিকে বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ খেলার উদ্বোধনে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার জন্য জেলাশাসকের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না সেটাও তারা খতিয়ে দেখছে ৷ অস্ত্র আইন অনুযায়ী অনুমতি না-নিয়ে গুলি চালানো হলে বন্দুকগুলির লাইসেন্স বাতিল হবে ৷ যে বা যারা বন্দুক থেকে গুলি চালিয়েছিল, তাদের সাজা হবে ৷ এক্ষেত্রে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে ৷’’

আরও পড়ুন

ব্যারাকপুর গুলিকাণ্ডে ধৃত 3, জেরায় অপরাধ স্বীকার

মালদা, 24 জানুয়ারি: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভলিবল টুর্নামেন্ট ৷ নৈশকালীন টুর্নামেন্টের উদ্বোধনে একাধিক রাইফেল থেকে শূন্যে ছোড়া হল গুলি ৷ সে সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে ৷ তাঁদের সামনে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি কীভাবে চলল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷ মানিকচক ব্লকের নুরপুর এলাকার এই ঘটনা ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শোরগোল পড়েছে জেলায় ৷ যদিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাতেই চারটি বন্দুক বাজেয়াপ্ত করেছে মানিকচক থানার পুলিশ ৷

প্রতি বছরের মতো গতকাল বিকেলেও নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে নুরপুর হাইস্কুল মাঠে নৈশকালীন ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে স্থানীয় টিপটপ ক্লাব ৷ টুর্নামেন্টে দেশের ছ’টি রাজ্যের ছ’টি দল অংশগ্রহণ করে ৷ দীর্ঘদিনের পুরনো প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন মানিকচক ব্লক তৃণমূলের একাধিক নেতাও ৷ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সেখানেই চলে গুলি ৷ গোটা ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানান, এই ঘটনায় আইন যে লঙ্ঘিত হয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত চারটি বন্দুক এবং সেগুলির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ এই ঘটনায় চার লাইসেন্সপ্রাপক মনসুর আহমেদ খান, আমিনুর রহমান খান, আলকামা খান চৌধুরী এবং মহম্মদ বখতাওয়ার খানের বিরুদ্ধে আর্মস অ্যাক্টের 30 ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ এই চারজন নুরপুরের পাঠান পাড়ার বাসিন্দা ৷ গোটা ঘটনায় পুলিশি তদন্ত জারি রয়েছে ৷

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডলের অভিযোগ, “ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে তিনজন বন্দুকধারী পরপর গুলি করছে ৷ এটা এককথায় ভীতি প্রদর্শন করা ৷ জানি না, বন্দুকগুলির লাইসেন্স রয়েছে কি না ৷ সেটা প্রশাসন এবং থানার আইসি বলবেন ৷ সরকার থেকে নিজের বা বাড়ির সুরক্ষার জন্য বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয় ৷ হয়তো মজা করার জন্য বা মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য-এই সরকার বন্দুকের লাইসেন্স দিয়েছে ৷ এখন খুন, ধর্ষণ, বোমাবাজি, তোলাবাজি তৃণমূলের কালচার ৷ মাননীয়ার নির্দেশেই গোটা এলাকায় সন্ত্রাস হয় ৷ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এই সরকার অপারগ ৷ পুলিশও ব্যর্থ ৷ তৃণমূলের লোকজনই ওই খেলার আয়োজন করেছিল ৷ তাঁদের মদতেই সেখানে গুলি চালানো হয়েছিল ৷ আমরা এদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি ৷ তবে তৃণমূলের স্ট্যাম্প লাগানো থাকলে পুলিশও কিছু করে না ৷”

Firing in Volleyball Tournament Inauguration in Malda
ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত চারটি বন্দুক এবং সেগুলির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে (ইটিভি ভারত)

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, “প্রতি বছর 23 জানুয়ারি নুরপুরে ওই ক্লাবের উদ্যোগে ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয় ৷ গতকালও হয়েছিল ৷ অদ্ভুতভাবে দেখলাম, সেখানে কয়েকজন বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে খেলার উদ্বোধন করছেন ৷ সেই বন্দুকগুলি লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে পারে ৷ কিন্তু এই ঘটনা সমাজের পক্ষে ভালো নয় ৷ নিজের নিরাপত্তার জন্য কেউ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক রেখেছেন, সেটা ঠিক আছে ৷ কিন্তু সেই বন্দুক এসব কাজে ব্যবহার না-হওয়াই কাম্য ৷ এসব আচরণ সমাজে অন্য বার্তা দেয় ৷ গত একমাস ধরে আমাদের জেলায় বিভিন্ন রাজ্যের দুষ্কৃতীরা নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে ৷ যা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোদ মুখ্যমন্ত্রীও ব্যতিব্যস্ত ৷ তাঁকে মালদায় ছুটে আসতে হয়েছে ৷ কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, এ নাকি ট্র্যাডিশন ৷ সেক্ষেত্রে সেই ট্র্যাডিশন ভেঙে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি ৷ আমাদের সমাজে এমন কোনও উদাহরণ তৈরি করা উচিত নয়, যা পরবর্তী প্রজন্ম বা যুব সমাজকে ভুল বার্তা দেবে ৷”

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর বক্তব্য, “নুরপুরে ভলিবল টুর্নামেন্টে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার যে ঘটনা ঘটেছে তাতে পুলিশ ইতিমধ্যে সেই বন্দুকগুলিকে বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ খেলার উদ্বোধনে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার জন্য জেলাশাসকের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না সেটাও তারা খতিয়ে দেখছে ৷ অস্ত্র আইন অনুযায়ী অনুমতি না-নিয়ে গুলি চালানো হলে বন্দুকগুলির লাইসেন্স বাতিল হবে ৷ যে বা যারা বন্দুক থেকে গুলি চালিয়েছিল, তাদের সাজা হবে ৷ এক্ষেত্রে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে ৷’’

আরও পড়ুন

ব্যারাকপুর গুলিকাণ্ডে ধৃত 3, জেরায় অপরাধ স্বীকার

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.