পশ্চিম মেদিনীপুর, 7 এপ্রিল: একবিংশ শতকের শুরুতেও গরমকালে গৃহস্থ বাড়িতে গেলে তালপাতার হাতপাখার দেখা পাওয়া যেত ৷ লোডশেডিং হলেই বেরিয়ে পড়ত তালপাতা দিয়ে তৈরি নানান কারুকার্য করা হাতপাখা ৷ গ্রাম বাংলা তো বটেই এমনকি মফঃস্বল ও শহরেও দেখা যেত এই পাখা ৷ কিন্তু, সময় যত এগিয়েছে, তত উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি ৷ গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুৎ ৷ এমনকি লোডশেডিংও আর তেমন হয় না ৷ আর হলেও প্রযুক্তি তারও সমাধান বের করে ফেলেছে ৷ লোডশেডিংয়ের সময় ইনভার্টারে বাড়ির পাখা-লাইট সব চালানো যায় ৷ আবার প্লাসটিক আর এভাবেই ক্রমশ বিলুপ্তির পথে তালপাতার তৈরি হাতপাখা ৷ এমনকি জঙ্গলমহলেও হাতপাখা এখন নস্টালজিয়ার জায়গা নিয়েছে ৷
90'র দশকে মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল তথা গ্রাম বাংলার গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় ছিল তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখা ৷ পরবর্তী সময়ে গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছালেও, লোডশেডিং ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী ৷ আবার, আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে সেই বিদ্যুৎ পরিষেবা থেকেও অনেকেই বঞ্চিত ছিলেন ৷ তাই হাতপাখার প্রয়োজনীয়তা কখনওই ফুরায়নি ৷ কিন্তু, সময় যত এগিয়েছে, মানুষ আধুনিক হয়েছে ৷ ফলে, ধীরে ধীরে নিজের অস্তিত্ব হারাচ্ছে তালপাতার তৈরি হাতপাখা ৷
এই হাতপাখার চল শুধু গ্রামবাংলা বা মফঃস্বলে নয় ৷ শহুরে জীবনেরও অঙ্গ ছিল ৷ কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাচ্ছে ৷ বলা ভালো হাতপাখার বিকল্প চলে এসেছে ৷ গরমকালে কম খরচে তালপাতার সেই মৃদুমন্দ বাতাসের আনন্দ মানুষ ভুলতে বসেছে ৷ বদলে এসি-র ঠাণ্ডা বাতাস এখন মানুষের বেশি প্রিয় ৷ অন্তত শহর ও মফঃস্বলে ৷ গ্রামীণ বাংলাতেও বহু জায়গায় এসি পৌঁছে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ৷
তা সত্ত্বেও, এখনও উঁকিঝুকি মারলে মাঝে মধ্যে তালপাতার তৈরি সেই হাতপাখার খোঁজ পাওয়া যায় বইকি ! তবে, আর আগের মতো 5-10 টাকা দাম নয় ৷ কোনওটা 15, আবার কোনওটা 20-25 টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৷ তেমনি এক বিক্রেতাকে দেখা গেল মেদিনীপুর শহরে ৷ যিনি সাইকেলে করে তালপাতার তৈরি হাতপাখা তৈরি ও বিক্রি করেন ৷ তেমনি কয়েকজনকে দেখা গেল, সেই হাতপাখা কিনতেও ৷ বলাই সিং, রাধারানি পাল, কমলা দাসরা জানালেন, হাতপাখার চল তেমন না থাকলেও এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি ৷ তাঁদের কথায়, সবার পক্ষে এসি বা লোডশেডিংয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না ৷ তাই হাতপাখার চল কমলেও, তা একেবারে উঠে যায়নি ৷
আরও পড়ুন: এসি, কুলারের দাপটে ধুঁকছে হাতপাখার ব্যবসা, সরকারি সাহায্যের আবেদন শিল্পীদের
বিক্রেতা গৌতম কর্মা জানালেন, বিক্রি অবশ্যই আগের মতো নেই ৷ তবুও, কিছু মানুষ কেনেন ৷ কারণ, গ্রাম বাংলা বিশেষত, প্রত্যন্ত এলাকায় হাতপাখাই এখনও ভরসা ৷ আবার কেউ কেউ সখে কেনেন বলে জানান তিনি ৷ তবে, তালপাতার হাতপাখার জায়গায় বেত ও প্লাস্টিকের তৈরি হাতপাখার চল বেড়েছে ৷ তবে, তালপাতার সেই পাখার আরাম কি দিতে পারে ? প্রশ্ন থেকেই যায় ৷ তালপাতার পাখা হল ঐতিহ্য ৷