মেদিনীপুর, 12 সেপ্টেম্বর: মেদিনীপুরে (West Midnapore) বৈঠক করতে গিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) তুলোধোনা করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র (Suryakanta Mishra) । তিনি বলেন, ‘‘উপনির্বাচন নিয়ে যে মুখ্যমন্ত্রীর এত তাড়াহুড়ো, সেই মুখ্যমন্ত্রীই পৌরসভাগুলিতে বছরের পর বছর নির্বাচন না-করে সংবিধান বিরোধী মেন্টর নিয়োগ করেছেন ।’’ এ ছাড়াও ভোটের পর এবং ভোটের আগে বামেদের দলে দলে বিজেপি ও তৃণমূল যাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর মত, বামেদের কোনও নেতা নেতৃত্ব ছেড়ে যাননি বরং সাধারণ মানুষ জামাই খাতির পাওয়ার জন্য গিয়েছিলেন, আবার ভুল ভাঙতে তাঁরা ফিরে এসেছেন ।
রবিবার মেদিনীপুরে একটি বৈঠক করতে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র । তিনি বৈঠক করার পর দলবিরোধী কাজের জন্য কয়েক জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয় । এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি ৷ তখনই রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার সংবিধানবিরোধী মেন্টর নিয়োগ করে বছরের পর বছর পৌরসভাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রীর উপনির্বাচন নিয়ে যতটা তাড়াহুড়ো করছেন, ততটা সদিচ্ছা নেই পৌরসভা নির্বাচনে । যার ফলে পৌরসভাতে বিগত তিন চার বছর ধরে ভোট হয়নি । বরং অসাংবিধানিকভাবে মেন্টর নিয়োগ করেছেন । মেন্টর দিয়ে পৌরসভাগুলি চালানোর ফলে পৌর সুযোগ সুবিধা থেকে মানুষ যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনই একতরফা শাসন চালাচ্ছে বর্তমান শাসকদল ।’’
আরও পড়ুন: Derek on Yogi: ‘ঠগী আদিত্যনাথ’ ! বিজ্ঞাপন বিতর্কে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধলেন ডেরেক
সূর্যকান্তের কথায়, "আমরাও 34 বছর সরকার চালিয়ে এসেছি, কেউ বলতে পারবে না কোনও পৌরসভা কোনও পঞ্চায়েত বা কোনও জেলা পরিষদে ভোট করতে বিলম্ব হয়েছে । এঁদের রেকর্ড হচ্ছে এখনও পর্যন্ত কোনও পঞ্চায়েত নির্বাচন করাননি ৷ এঁরা আরেকটা যেটা ভুল কাজ করছে, সেটা হল সংবিধানবিরোধী ভাবে মেন্টর নিয়োগ করা । যেটা সংবিধানে কোথাও লেখা নেই । এটাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আমরা ইতিমধ্যে কোর্টে মামলা করেছি ।"
আরও পড়ুন: Behala murder: বেহালা মা-ছেলে খুনে ধৃত মৃতার দুই মাসতুতো ভাই
বাম ছেড়ে কর্মীদের তৃণমূল ও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এইসব ভাবনা আপনাদের না-ভাবলেও চলবে । ওটা আমাদের পার্টির উপর ছেড়ে দিন । পার্টি আলোচনা করছে, পার্টি ভাবছে । সম্মেলনে ওগুলো নিয়ে আলোচনা হবে । এ ছাড়া পার্টি পুনর্গঠিত হচ্ছে । আমাদের পার্টিতে সব ঠিক আছে । আমি ধীরে ধীরে 18টি জেলায় ইতিমধ্যে বৈঠক করে ফেলেছি ৷ আরও দুটো করব । আমাদের পার্টির মেম্বার আমাদেরই আছে। যদি তৃণমূলে কেউ যায় তাতে খুশি হব ।"
একসময় বাম ছেড়ে বহু নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন, এবিষয়ে সূর্যকান্ত বলেছেন, "আমাদের কোনও লোক কোনও পার্টিতে যাননি । আমাদের লোক আমাদের পার্টিতেই আছেন । যাঁরা গিয়েছেন তাঁরা সাধারণ মানুষ । সেই কথাটা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করছেন সাংবাদিকরা । আসলে মানুষ ভেবেছেন তৃণমূলের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বিজেপিকে চাঙ্গা করতে হবে ৷ তাই মানুষ গিয়েছেন ৷ যদিও ভালবেসে যাননি তাঁরা । আবার কিছু লোক মনে করেছেন যে, বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূলে যাওয়া দরকার, তাই তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন । যদিও সংখ্যালঘুরা ভোট দেন না বিজেপিকে, তাঁরা বিজেপিতে যাবেন না । কারণ গোটা দেশজুড়ে তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন ৷ তাই তাঁরা বিজেপিতে যাবেন না, তাঁরা যাবেন তৃণমূলে ।"
আরও পড়ুন : ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতেন না সুস্মিতা, থাকতে পারে একাধিক আততায়ী
প্রাক্তন বিরোধী দলনেতার কথা, গোটা দেশজুড়ে ধর্মীয় রাজনৈতিক মেরুকরণ চলছে ৷ তিনি বলেন, "আরএসএস ও বিজেপি এই মেরুকরণ করছে। যাঁরা স্লোগান দিয়েছিলেন, এ বারে রাম, পরের বার বাম - সেই স্লোগান শুনে কিছু মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন ৷ তাঁরা হচ্ছেন সাধারণ মানুষ । যদিও তাঁরা আবার ভুল ভাঙতে ফিরে এসেছেন । তাঁদের গায়ে তো কোনও ছাপ নেই, তাই বলতে পারব না সঠিক কোন মানুষগুলো গিয়েছিলেন, কারা ফিরে এসেছেন ৷ আমাদের কোনও পার্টির কর্মী বা সদস্য যাননি । কারণ আমাদের কেউ গেলে আমাদের পাঁচ মিনিট সময় লাগে সেই সব নেতা-কর্মীকে বাদ দিতে ।"
সূর্যকান্ত মিশ্র ইতিমধ্যে জঙ্গলমহলের সব ক'টি জেলা ঘুরে বৈঠক সেরে ফেলেছেন । পৌরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে বামেরা ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে । বিগত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে বামেদের যে ভরাডুবি হয়েছে, পঞ্চায়েত ও পৌরসভাতে সেই অবস্থার উন্নতির চেষ্টায় এখন থেকেই ময়দানে নামতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ৷