মেদিনীপুর 19 নভেম্বর : জেলাশাসক কার্যালয়কে নতুন রূপ দিতে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেটর লক্ষ্যে পটচিত্র অঙ্কন। এই পট চিত্রের ফলে পটশিল্পীদের নগদ যোগানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে ৷ অন্যদিকে পটচিত্রের ফলে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে ৷ এই লক্ষ্য রেখেই এই ছোট্ট প্রয়াস বলে জানান জেলাশাসক ডক্টর রেশমি কোমল।
কোরোনা সংক্রমণ এবং তার জেরে দীর্ঘ লকডাউনে বহু মানুষের রুজিরোজগার বন্ধ ৷ কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ । ছোটখাটো কম্পানিতে কাজ করতেন এমন অনেকের কাজ চলে গিয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ঘরানার শিল্পীদেরও হাতে কাজ নেই। এই শিল্পীরা নিজস্ব শিল্পের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরকমভাবে জেলার পট শিল্পীরা পটচিত্র অঙ্কন করে সংসার চালাতেন । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা এলাকার পটশিল্পের জন্য বিখ্যাত ৷ এখানে প্রায় একশ থেকে দেড়শ পরিবার এই পটচিত্র অঙ্কন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। উৎসব অনুষ্ঠানে কাজের অর্ডার পান। কিন্তু কোরোনা আবহে তাঁদের হাতে কাজ নেই ৷ রুজি-রোজগার বন্ধ ৷ সংসার টানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে ৷পটশিল্পীদের তুলিতে ফুটে উঠেছে বাংলা আর বাঙালির পার্বণের নানা রূপ এ অবস্থায় তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলো পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসন। মেদিনীপুর জেলাকে একটি জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেটর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে ৷ আর এজন্য জেলাশাসক কার্যালয়ে পটচিত্র অঙ্কনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ আর এই কাজে লাগানো হয়েছে কয়েকজন পটশিল্পীদের। কয়েক মাস ধরেই তাঁরা এখানে একাজ করে চলছেন। এই পটশিল্পীদের তুলিতে ফুটে উঠেছে বাংলা আর বাঙালির পার্বণের বিশেষ দিকগুলি । এই শিল্পীরা দেবদেবী সহ বিভিন্ন পার্বণের ছবি ফুটিয়ে তুলছেন ৷ তেমনি সমস্ত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তাঁরা তৈরি করে ফেলেন তৎকালীন সময়ে আনুষাঙ্গিক সমাজের রীতি-নীতি। জেলাশাসক কার্যালয়ে তাঁরা গড়ে তুলেছেন বারো মাসে তেরো পার্বণের লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক সহ বিভিন্ন দেবদেবীর রূপ। তাঁদের তুলির টানে ফুটে উঠছে ছিন্নমস্তা সহ দশ মহাবিদ্যার নানা রূপ ৷ আবার ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের সঙ্গে শোভা পাচ্ছেন দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিনী কালী ৷ এই কাজের ফলে পটশিল্পীদের নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে ৷ অপরদিকে জেলাশাসকের কার্যালয় নতুন রূপ পেতে চলেছে। মেদিনীপুর জেলাশাসক কার্যালয়ে চারজন পটশিল্পী গত দুমাস ধরে গড়ে তুলছেন নানা ধরণের পটচিত্র। আগামী দিনে অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয়েও এই ধরনের পটচিত্র গড়ে তোলা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
পটশিল্পের ছোঁয়ায় রঙিন জেলাশাসকের কার্যালয় জেলাশাসক ডক্টর রেশমি কোমল বলেন, "এই পটচিত্র অন্যান্য রাজ্যে ও জেলায় রয়েছে। জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেটর হিসেবে গড়ে তুলতে জেলায় এই ধরনের পটচিত্রের কাজ আমরা কাজ শুরু করেছি। দীর্ঘ লকডাউনে শিল্পীরা কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিলেন ৷ তাঁদের উৎসাহ দিতে এবং কাজের সঙ্গে নগদ যোগানের ব্যবস্থা করতে আমরা ছোট্ট একটা প্রয়াস করেছি। এই কাজ যদি ভাল হয় আগামী দিনে আমরা সমস্ত কার্যালয়ে এই ধরনের চিত্র গড়ে তুলবো। এতে একদিকে যেমন নতুন রূপ পাবে এ কার্যালয়গুলি তেমনি পট শিল্পীদের জীবন-জীবিকা চালাতে সক্ষম হবে এই নগদ যোগানে।" পটশিল্পী বাহাদুর চিত্রকর বলেন," আগে আমরা এ কাজের জন্য শুধু জেলা বা রাজ্যে নয় দেশ-বিদেশেও যেতাম ৷ আমরা এ পটচিত্র অঙ্কন করে প্রচুর টাকা রোজকার করতাম। কিন্তু এই কোরোনা সংক্রমণের ফলে সেগুলো সব বন্ধ। আমরা নিঃস্ব বেকার হয়ে পড়েছিলাম। এরপর স্থানীয় BDO মারফত আমাদের কাছে খবর যায় এখানে কাজ করার জন্য ৷ আমরা পটচিত্র তৈরির অর্ডার পাই । আমাদের হাতে নগদ যোগান আসছে।এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। এইভাবে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যদি শিল্পীদেরও কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে জেলার এবং মানুষের অনেকটাই সুবিধা হবে বলে মনে করছেন জেলার মানুষ।