ETV Bharat / state

ছত্রধরেও ছোঁয়া হল না মন, জঙ্গলমহলে আলাদা দল ঘোষণা করতে চলেছে কুড়মিরা - কুড়মি সম্প্রদায়েj অসন্তোষ

কিছুদিন আগে রাজ্যে নতুন দল ঘোষণা করেছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি ৷ আসাদউদ্দিন ওয়াইসিসের মিমও রাজ্য বিধানসভায় ভোটে লড়াই করবে ৷ তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে ধ্বস নামার আশঙ্কা যখন ঠিক সেসময়ই জঙ্গলমহলে কুড়মিরাও পৃথক দল তৈরি করে ভোটে লড়াি করার কথা জানাল ৷ জঙ্গলমহলে হারানো জমি ফিরে পেতে ছত্রধর মাহাতোকে নিয়ে এসেও কুড়মি অসন্তোষ তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷

kurmi
আলাদা দল ঘোষণা করতে চলেছে কুড়মিরা
author img

By

Published : Jan 23, 2021, 8:43 PM IST

মেদিনীপুর, 23 জানুয়ারি : দাবি আদায়ে আর ভরসা নেই বিজেপি সিপিএম তৃণমূলের উপর। তাই এবার নিজেদের প্রার্থী তালিকা দিয়ে একুশের ভোটে লড়তে চাইছে কুড়মি সম্প্রদায়। এভাবেই চাইছে তাদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে। জঙ্গলমহলে কুড়মিরা পৃথক প্রার্থী দিলে তা নিশ্চিত ভাবেই তৃণমূল বিজেপি উভয়েরই মাথা ব্যাথার কারণ হবে ৷ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে যখন তরজা চলছে সেই আবহে কুড়মিদের পৃথক দল গড়ার সঙ্কত নিশ্চিতভাবেই শাসক শিবিরের মাথাব্যথার কারণ হবে ৷ তৃণমূল শাসনে সংখ্যালঘু মুসলিমরা বঞ্চিত, এই অভিযোগে ইতিমধ্যে ফুরফুরা শরিফের আব্বাস সিদ্দিকি নতুন দল ঘোষণা করেছে ৷ এই দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট লড়ার ঘোষণা করেছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম ৷ এরপরে জঙ্গলমহলে কুড়মিরা পৃথক দল ঘোষণা করলে শাসক দলের স্নায়ুচাপ আরও বৃদ্ধি করবে ৷ কুড়মি সম্প্রদায়ের ছত্রধর মাহাতোকে দলের মুখ করেও কুড়মি মন ছুঁতে না পারায় আবারও চ্যালেঞ্জ তৃণমূল নেত্রীর কাছে ৷

গত বছরে 'করম' উৎসবে রাজ্য সরকারের ছুটির নির্দেশিকায় অসন্তুষ্ট হয় কুড়মিরা ৷ সরকারের ছুটির নির্দেশিকায় কুড়মিদের নাম উল্লেখ না থাকায় তারা এই উৎসবে যোগ দিতে অসুবিধায় পরে ৷ ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর সন্ধ্যায় কুড়মিরা এই উৎসব করেন ৷ তাদের কাছে এটা গণউৎসব ৷ অথচ সেই উৎসবে ‘সেকশনাল হলি ডে’ ঘোষণা করে রাজ্য সরকার ৷ কুড়মিরা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত না হওয়ায় এই উৎসবে এই ছুটি নিতে অসুবিধায় পড়ে ৷ নিজেদের অসন্তোষের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানালেও কোনও সমাধান হয়নি ৷ সেই ক্ষোভের আগুনই এবার বিধানসভা ভোটে কুড়মিরা উজার করতে প্রস্তুত হচ্ছে ৷ শুধু জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া, উত্তর 24 পরগনাতেও কুড়মিরা বসবাস করেন ৷ এমনকি উত্তরবঙ্গেও কয়েক হাজার কুড়মির বাস ৷


কুড়মি সমন্বয় মঞ্চের সদস্যরা বলেন, রাজ্যে 50 লাখ তাদের সম্প্রদায়ের মানুষজন রয়েছে। অথচ গত 70 বছরে কিছুতেই এসটি ভুক্ত করছে না কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। যার ফলে তারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে। জঙ্গলমহলে পাতা বাঁশের বিভিন্ন কাজ করে মূলত তারা জীবন নির্বাহ করে। কুড়মিদের কাছে টানতে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি নানা প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ কুড়মিদের ভোট পেয়ে জঙ্গলমহলে তৃণমূলকে কোণঠাসা করে গেরুয়া শিবির ৷ কিন্তু তারপরেও কুড়মিদের কোনও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি ৷ সেজন্য নিজেদের দাবি দাওয়া পূরণে এবার বিধানসভা ভোটে নিজেদের দলের প্রার্থী দেবে কুড়মিরা ৷ সমন্বয় মঞ্চের এক কর্তা বলেন," তৃণমূল বিজেপি উভয়কেই ক্ষমতায় এনেছি ৷ কিন্তু ফলাফল শূন্য। নিজেদের দাবি দাওয়া কোন দিনই পূরণ হয়নি। তাই আগামী 7 ফেব্রুয়ারি একটি সভা মঞ্চ থেকেই প্রার্থী ঘোষণার ডাক দেওয়া হবে ৷" তবে তাঁদের ক্ষোভ অনেক বেশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ আর সেই ক্ষোভ লোকসভা ভোটে টের পেয়েছে তৃণমূলও ৷ স্বাধীনতার আগে থেকে সাঁওতাল,মুন্ডা, কুড়মি সহ মোট 13 টি জাতি প্রিমিটিভ ট্রাইব ছিল ৷ 1931 সাল থেকে এই প্রিমিটিভ ট্রাইভে ছিল কুড়মিরা । ইতিহাস বলে, স্বাধীনতার পর সংবিধান রচনার সময় হৃদয় নারায়ণ কুজুর নেতৃত্বে মোট 15 জন নির্দিষ্ট সাংসদকে নিয়ে গঠিত হয় ট্রাইবেল কমিশন।এই কমিশন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে জিজ্ঞাসা করেন, স্বাধীন ভারতে কাদের সিডিউল ট্রাইবের তালিকায় রাখা হচ্ছে ? নেহরুও 1931 সালের তালিকাকেই স্বীকৃতির কথা জানান ৷ কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে স্বাধীন ভারতে 1950 সালের 6 সেপ্টেম্বর এসআরও -৫১০ তে সিডিউল ট্রাইভের তালিকায় কুড়মিদেরকে বাদ দেওয়া হয় ৷ পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারের কাছে কেন্দ্র সরকার সংশোধিত এসটি-র তালিকা পাঠাতে বললেও রাজ্য সরকারও সে বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ জঙ্গলমহলে ছত্রধর মাহাতোকে তৃণমূল নিজেদের মুখ করে কুড়মিদের কাছে টানতে চেষ্টা করছে ৷ ছত্রধর নিজেও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ ৷ কিন্তু তারপরেও সেই 'মুখ'-কে অস্বীকার করে কুড়মিদের নিজস্ব প্রার্থী দাড় করাবার সিদ্ধান্ত শাসক দলকে আরও অস্বস্তি বাড়াল ৷ স্বাধীনতার পর কুড়মিদের ওবিসি অর্থাৎ অনগ্রসর তালিকাভূক্ত করেই রাখা আছে ৷ রাজ্য সরকার কুড়মিদের আদিবাসী প্রমাণের জন্য কালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সংশোধিত তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠায়নি ৷

এদিন সমন্বয় মঞ্চের অশোক মাহাতো বলেন," দীর্ঘ স্বাধীনতার আগে থেকেই কুড়মি সম্প্রদায় প্রিমিটিভ ট্রাইব হিসাবে উল্লেখ ছিল।কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে অদ্ভূত কারণে কুড়মি মানুষজন বঞ্চিত হয়ে আছে। তাদেরকে এসটি ভুক্ত করার জন্য বহুবার আবেদন-নিবেদন জানানো হয়েছে কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। ভোট হলে নেতা নেতৃত্ব বলে তাদের দাবিগুলো পূরণ হয়ে যাবে ৷ ক্ষমতায় আসার পর কিন্তু তা পূরণ হয়নি। তাই 1911 এবং 1921 থেকে 1922 সালের পর এই জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখিত থাকার পরও বর্তমানে অদৃশ্য কারণে এ কুড়মি জাতি এলাকা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে ।" এই দাবি নিয়ে গত 7 ডিসেম্বর 'দিয়াকো দিয়া নাই দিয়া তো হুড়কা দিয়া' এবং 7 জানুয়ারি 'চাক্কা জ্যাম' আন্দোলন করে কুড়মিরা ৷ এরপর প্রশাসনের পক্ষে আশ্বাস দেওয়া হয়, তাদের দাবি মানার ৷ কিন্তু তারপর যেই কে সেই। অশোক মাহাতো বলেন,"আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে ভোট করিয়ে নেয় এই শাসক ও বিরোধী দল। কিন্তু তারপর আর মনে পড়ে না আমাদের। তাই আমরা আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে দাবি দাবি আদায়ে সচেষ্ট হব।" সূত্রের খবর অনুযায়ী পুরুলিয়া শালবনি, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া সহ বেশিরভাগ এলাকায় কুড়মিরা তাদের 20-25 জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে। কুড়মিদের তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গলমহল পুরুলিয়া বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম পশ্চিম মেদিনীপুরে কুড়মিদের প্রায় 50 লাখ মানুষ রয়েছে। যার মধ্যে পুরুলিয়ার মানবাজার,জয়পুর, কাশিপুর সহ নয়টি এলাকায় কুড়মি আছে 40.125 শতাংশ ৷ এখানে অন্যান্য এসটি 18.45 শতাংশ ও SC 19.38 শতাংশ । বাঁকুড়ার রানিবাঁধ রাইপুর তালডাংরা এলাকায় রয়েছে 32. 25 শতাংশ ৷ এখানে এসটি 29.38 শতাংশ ও এসসি 24.84 শতাংশ ৷ ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে গোপীবল্লভপুর নয়াগ্রাম বিনপুর এলাকায় কুড়মি রয়েছে 41.87 শতাংশ ৷ সেখানে সাঁওতাল 18. 88 শতাংশ ভূমি 05.25 শতাংশ অন্যান্য -05 শতাংশ ৷ এছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি খড়গপুর গ্রামীণ সালবনি গড়বেতায় রয়েছে কুড়মি 33.88শতাংশ ৷ ভূমি 06.74শতাংশ সাঁওতাল 15.58শতাংশ ,বাগদী 09.37 শতাংশ ও সদগোপ ৷

মেদিনীপুর, 23 জানুয়ারি : দাবি আদায়ে আর ভরসা নেই বিজেপি সিপিএম তৃণমূলের উপর। তাই এবার নিজেদের প্রার্থী তালিকা দিয়ে একুশের ভোটে লড়তে চাইছে কুড়মি সম্প্রদায়। এভাবেই চাইছে তাদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে। জঙ্গলমহলে কুড়মিরা পৃথক প্রার্থী দিলে তা নিশ্চিত ভাবেই তৃণমূল বিজেপি উভয়েরই মাথা ব্যাথার কারণ হবে ৷ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে যখন তরজা চলছে সেই আবহে কুড়মিদের পৃথক দল গড়ার সঙ্কত নিশ্চিতভাবেই শাসক শিবিরের মাথাব্যথার কারণ হবে ৷ তৃণমূল শাসনে সংখ্যালঘু মুসলিমরা বঞ্চিত, এই অভিযোগে ইতিমধ্যে ফুরফুরা শরিফের আব্বাস সিদ্দিকি নতুন দল ঘোষণা করেছে ৷ এই দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট লড়ার ঘোষণা করেছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম ৷ এরপরে জঙ্গলমহলে কুড়মিরা পৃথক দল ঘোষণা করলে শাসক দলের স্নায়ুচাপ আরও বৃদ্ধি করবে ৷ কুড়মি সম্প্রদায়ের ছত্রধর মাহাতোকে দলের মুখ করেও কুড়মি মন ছুঁতে না পারায় আবারও চ্যালেঞ্জ তৃণমূল নেত্রীর কাছে ৷

গত বছরে 'করম' উৎসবে রাজ্য সরকারের ছুটির নির্দেশিকায় অসন্তুষ্ট হয় কুড়মিরা ৷ সরকারের ছুটির নির্দেশিকায় কুড়মিদের নাম উল্লেখ না থাকায় তারা এই উৎসবে যোগ দিতে অসুবিধায় পরে ৷ ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর সন্ধ্যায় কুড়মিরা এই উৎসব করেন ৷ তাদের কাছে এটা গণউৎসব ৷ অথচ সেই উৎসবে ‘সেকশনাল হলি ডে’ ঘোষণা করে রাজ্য সরকার ৷ কুড়মিরা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত না হওয়ায় এই উৎসবে এই ছুটি নিতে অসুবিধায় পড়ে ৷ নিজেদের অসন্তোষের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানালেও কোনও সমাধান হয়নি ৷ সেই ক্ষোভের আগুনই এবার বিধানসভা ভোটে কুড়মিরা উজার করতে প্রস্তুত হচ্ছে ৷ শুধু জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া, উত্তর 24 পরগনাতেও কুড়মিরা বসবাস করেন ৷ এমনকি উত্তরবঙ্গেও কয়েক হাজার কুড়মির বাস ৷


কুড়মি সমন্বয় মঞ্চের সদস্যরা বলেন, রাজ্যে 50 লাখ তাদের সম্প্রদায়ের মানুষজন রয়েছে। অথচ গত 70 বছরে কিছুতেই এসটি ভুক্ত করছে না কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। যার ফলে তারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে। জঙ্গলমহলে পাতা বাঁশের বিভিন্ন কাজ করে মূলত তারা জীবন নির্বাহ করে। কুড়মিদের কাছে টানতে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি নানা প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ কুড়মিদের ভোট পেয়ে জঙ্গলমহলে তৃণমূলকে কোণঠাসা করে গেরুয়া শিবির ৷ কিন্তু তারপরেও কুড়মিদের কোনও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি ৷ সেজন্য নিজেদের দাবি দাওয়া পূরণে এবার বিধানসভা ভোটে নিজেদের দলের প্রার্থী দেবে কুড়মিরা ৷ সমন্বয় মঞ্চের এক কর্তা বলেন," তৃণমূল বিজেপি উভয়কেই ক্ষমতায় এনেছি ৷ কিন্তু ফলাফল শূন্য। নিজেদের দাবি দাওয়া কোন দিনই পূরণ হয়নি। তাই আগামী 7 ফেব্রুয়ারি একটি সভা মঞ্চ থেকেই প্রার্থী ঘোষণার ডাক দেওয়া হবে ৷" তবে তাঁদের ক্ষোভ অনেক বেশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ আর সেই ক্ষোভ লোকসভা ভোটে টের পেয়েছে তৃণমূলও ৷ স্বাধীনতার আগে থেকে সাঁওতাল,মুন্ডা, কুড়মি সহ মোট 13 টি জাতি প্রিমিটিভ ট্রাইব ছিল ৷ 1931 সাল থেকে এই প্রিমিটিভ ট্রাইভে ছিল কুড়মিরা । ইতিহাস বলে, স্বাধীনতার পর সংবিধান রচনার সময় হৃদয় নারায়ণ কুজুর নেতৃত্বে মোট 15 জন নির্দিষ্ট সাংসদকে নিয়ে গঠিত হয় ট্রাইবেল কমিশন।এই কমিশন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে জিজ্ঞাসা করেন, স্বাধীন ভারতে কাদের সিডিউল ট্রাইবের তালিকায় রাখা হচ্ছে ? নেহরুও 1931 সালের তালিকাকেই স্বীকৃতির কথা জানান ৷ কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে স্বাধীন ভারতে 1950 সালের 6 সেপ্টেম্বর এসআরও -৫১০ তে সিডিউল ট্রাইভের তালিকায় কুড়মিদেরকে বাদ দেওয়া হয় ৷ পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারের কাছে কেন্দ্র সরকার সংশোধিত এসটি-র তালিকা পাঠাতে বললেও রাজ্য সরকারও সে বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ জঙ্গলমহলে ছত্রধর মাহাতোকে তৃণমূল নিজেদের মুখ করে কুড়মিদের কাছে টানতে চেষ্টা করছে ৷ ছত্রধর নিজেও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ ৷ কিন্তু তারপরেও সেই 'মুখ'-কে অস্বীকার করে কুড়মিদের নিজস্ব প্রার্থী দাড় করাবার সিদ্ধান্ত শাসক দলকে আরও অস্বস্তি বাড়াল ৷ স্বাধীনতার পর কুড়মিদের ওবিসি অর্থাৎ অনগ্রসর তালিকাভূক্ত করেই রাখা আছে ৷ রাজ্য সরকার কুড়মিদের আদিবাসী প্রমাণের জন্য কালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সংশোধিত তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠায়নি ৷

এদিন সমন্বয় মঞ্চের অশোক মাহাতো বলেন," দীর্ঘ স্বাধীনতার আগে থেকেই কুড়মি সম্প্রদায় প্রিমিটিভ ট্রাইব হিসাবে উল্লেখ ছিল।কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে অদ্ভূত কারণে কুড়মি মানুষজন বঞ্চিত হয়ে আছে। তাদেরকে এসটি ভুক্ত করার জন্য বহুবার আবেদন-নিবেদন জানানো হয়েছে কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। ভোট হলে নেতা নেতৃত্ব বলে তাদের দাবিগুলো পূরণ হয়ে যাবে ৷ ক্ষমতায় আসার পর কিন্তু তা পূরণ হয়নি। তাই 1911 এবং 1921 থেকে 1922 সালের পর এই জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখিত থাকার পরও বর্তমানে অদৃশ্য কারণে এ কুড়মি জাতি এলাকা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে ।" এই দাবি নিয়ে গত 7 ডিসেম্বর 'দিয়াকো দিয়া নাই দিয়া তো হুড়কা দিয়া' এবং 7 জানুয়ারি 'চাক্কা জ্যাম' আন্দোলন করে কুড়মিরা ৷ এরপর প্রশাসনের পক্ষে আশ্বাস দেওয়া হয়, তাদের দাবি মানার ৷ কিন্তু তারপর যেই কে সেই। অশোক মাহাতো বলেন,"আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে ভোট করিয়ে নেয় এই শাসক ও বিরোধী দল। কিন্তু তারপর আর মনে পড়ে না আমাদের। তাই আমরা আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে দাবি দাবি আদায়ে সচেষ্ট হব।" সূত্রের খবর অনুযায়ী পুরুলিয়া শালবনি, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া সহ বেশিরভাগ এলাকায় কুড়মিরা তাদের 20-25 জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে। কুড়মিদের তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গলমহল পুরুলিয়া বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম পশ্চিম মেদিনীপুরে কুড়মিদের প্রায় 50 লাখ মানুষ রয়েছে। যার মধ্যে পুরুলিয়ার মানবাজার,জয়পুর, কাশিপুর সহ নয়টি এলাকায় কুড়মি আছে 40.125 শতাংশ ৷ এখানে অন্যান্য এসটি 18.45 শতাংশ ও SC 19.38 শতাংশ । বাঁকুড়ার রানিবাঁধ রাইপুর তালডাংরা এলাকায় রয়েছে 32. 25 শতাংশ ৷ এখানে এসটি 29.38 শতাংশ ও এসসি 24.84 শতাংশ ৷ ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে গোপীবল্লভপুর নয়াগ্রাম বিনপুর এলাকায় কুড়মি রয়েছে 41.87 শতাংশ ৷ সেখানে সাঁওতাল 18. 88 শতাংশ ভূমি 05.25 শতাংশ অন্যান্য -05 শতাংশ ৷ এছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি খড়গপুর গ্রামীণ সালবনি গড়বেতায় রয়েছে কুড়মি 33.88শতাংশ ৷ ভূমি 06.74শতাংশ সাঁওতাল 15.58শতাংশ ,বাগদী 09.37 শতাংশ ও সদগোপ ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.