চন্দ্রকোনা, 18 সেপ্টেম্বর: এবার 223 বছরে পদার্পণ করছে রায় জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো(Durga Puja of jara Zamindars of Chandrakona Steps into 223 Years)৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা 1 ব্লকের জাড়া গ্রামে অবস্থিত এই জমিদারবাড়ি ৷ একসময় এই পুজোয় আসতেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৷ মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনীত অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ছবির একটি গানেও এই জমিদারবাড়ির কথা উল্লেখ আছে ৷
জাড়া গ্রামের এই জমিদার রায় রা বর্ধিষ্ণু পরিবার হিসাবে আজও পরিচিত । কথিত আছে, রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু ছিলেন জমিদার রাজীবলোচন রায় । সেই সূত্রেই জাড়া গ্রামে যাতায়াত ছিল রামমোহন রায়ের । তেমনই জাড়া জমিদার বাড়ির সঙ্গে সখ্যতা ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরও । জমিদার পরিবারের আমন্ত্রণে জাড়া স্কুলের স্থাপনা করেছিলেন তিনি ৷ তৎকালীন সময়ে জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোয় বেশ কয়েকবার আসেন বিদ্যাসাগর ৷
আরও পড়ুন : 'মিস ইউ', বাগুইআটি উদয়ন সংঘ এবার স্মরণ করবে সাধারণ ও গুণীজনদের
এমনকি এই জমিদার বাড়িতে মহানায়ক উত্তমকুমার তাঁর 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছবির শুটিং করেছিলেন ৷ যেখানে 'কি করে বললি জগা জাড়ার গোলক বৃন্দাবন, যেখানে বামুন-রাজা-চাষী-প্রজা, চারিদিকে তার বাঁশের বন' এই গানের মাধ্যমে জমিদারবাড়ির বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল ৷
সেকালে জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো উপলক্ষে কবিগানের আসর বসত । বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রা নাকি 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছবির এই গানখানি লিখেছিলেন ৷ এখানে দুর্গাপুজোর পাশাপাশি কালী, বিষ্ণু ও শিব-সহ একাধিক দেবদেবীর মূর্তি ও মন্দির রয়েছে । এখানে কুলদেবতা গোপালও রয়েছেন ৷
1155 বঙ্গাব্দে (1748 খ্রীস্টাব্দ) জাড়া জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাম গোপাল রায় । পরবর্তীতে তাঁর ছেলে রাজীবলোচন রায় বর্ধমান রাজার থেকে 'রাজা' উপাধি পাওয়ার পর থেকে তাঁর জমিদারি আরও বিস্তার লাভ করে এবং তিনিই জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন । রূপোর পালকিতে গ্রামের একটি পুকুরে শোভাযাত্রা করে নবপত্রিকা স্নান হত । কিন্তু কালের গর্ভে সবই বিলীন হয়েছে ৷ বর্তমানে জমিদারিত্ব না থাকলেও রয়ে গিয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাসাদ ৷ যা এখন ভগ্নপ্রায় ও আগাছায় ঢাকা । জমিদার বাড়ির 21টি পরিবার এখনও বসবাস করলেও তাঁদের অধিকাংশই এখন কর্মসূত্রে ভিন রাজ্য বা ভিন দেশে ।
আরও পড়ুন : প্রতিমা হস্তে সুসজ্জিত অস্ত্র তৈরির কারখানায় কেমন ব্যস্ততা, খোঁজ নিল ইটিভি ভারত
তবে পুজোর সময় রায় বাড়ির সদস্যরা অনেকেই হাজির হন গ্রামের বাড়িতে ৷ বৈষ্ণব মতে জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোয় বলি প্রথা নেই ৷ তবে শোভাযাত্রা করে নবপত্রিকা স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এখানে অষ্টমীর দিন সিঁদুর খেলার নিয়ম ৷ এরপর দশমীতে মাকে বিসর্জন দিয়ে ভারাক্রান্ত মনে গান গেয়ে পুনরায় মন্দিরে প্রবেশ করেন সকলে ৷ দূর-দূরান্তের গ্রামের বহু মানুষ ভিড় জমান এই পুজো দেখতে ৷
পুজোর ক'দিন নরনারায়ণ সেবার ব্যবস্থা থাকে ৷ তবে পুজোর ভোগ বাড়ির দীক্ষিত মেয়েরাই রান্না করে থাকেন ৷ যে কাজে সাহায্য করেন বাড়ির পুরুষরা ৷ পুজোর সময় কুলদেবতাকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় ৷ দেবীর ভোগ নিবেদনের সাক্ষী থাকেন কুলদেবতা গোপাল ৷ এভাবেই চিরাচরিত প্রথা চলে আসছে 223 বছর ধরে ৷ যা আজও অটুট ৷
আরও পড়ুন : মাথায় প্রকৃতি সংরক্ষণের ভাবনা, তাই মাটি ছাড়াই মাতৃমূর্তি নির্মাণ হোমগার্ড শিল্পীর