দাসপুর (পশ্চিম মেদিনীপুর), 6 সেপ্টেম্বর: নারী শক্তির আরাধনায় নারীরাই ব্রাত্য ! প্রায় 600 বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই চলে আসছে দাসপুরে নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (610 Years Durga Puja of NaraJole Rajbari) ৷ গত 2 বছর করোনার জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ ছিল ৷ তবে, এ বার দর্শনার্থীরাও এই পুজোয় অংশ নিতে পারবেন ৷ রাজবাড়ির তরফে সাধারণ মানুষের জন্যও মণ্ডপের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে ৷
820 বঙ্গাব্দে শুরু হয়েছিল দাসপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) ৷ তবে, মাতৃ আরাধনায় স্থান পান না রাজবাড়ির মহিলারাই ৷ সেই প্রথা এখনও মেনে চলছেন রাজবাড়ির সদস্যরা ৷ তাই মহিলারাও পুজোয় অংশ নেন না ৷
রাজ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, কথিত আছে, বর্ধমান রাজার নায়েব উদয়নারায়ণ ঘোষ, মেদিনীপুর জেলায় শিকার করতে এসেছিলেন ৷ দাসপুরের নাড়াজোল জঙ্গলে শিকার করে ফেরার পথে হঠাৎই দেখেন একটি বক তাড়া করছে বাজপাখিকে ৷ এই দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন উদয়নারায়ণ ঘোষ ৷ বাড়ি ফিরে সেই রাতেই তিনি স্বপ্ন দেখেন ওই জঙ্গলেই রয়েছেন মা দুর্গার অষ্টধাতুর মূর্তি ৷ মায়ের নির্দেশে সেই মূর্তি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তিনি ৷ এর পর নাড়াজোল এলাকার জঙ্গল পরিষ্কার করে বাড়ি তৈরি করেন ৷ সেই বাড়িতেই অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি দিয়ে পুজো শুরু হয় 820 বঙ্গাব্দে ৷
আরও পড়ুন: হুগলি জেলায় হেরিটেজ শোভাযাত্রায় জ্যান্ত দুর্গা
পরবর্তীকালে উদয়নারায়ণ ঘোষ নাড়াজোল রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন ৷ দুর্গাপুজোর যাবতীয় বিধিনিষেধ তিনিই চালু করেন ৷ আজ নাড়াজোল রাজবাড়ি প্রায় শুনসান ৷ কিন্তু, প্রথা মেনে আজও রাজবাড়িতে অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পূজিত হয় ৷ নাড়াজোল রাজবাড়িতে বৈষ্ণব মতে পূজিত হন মা দুর্গা ৷ কিন্তু, আদিম যুগের সেই প্রথা মেনে আজও রাজবাড়ির মহিলারা পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারেন না ৷ গ্রহণ করেন না পুজোর প্রসাদও ৷
আরও পড়ুন: নালিকুলের সিংহবাড়িতে পুজোর জোগাড় করেন ছেলেরা, মেয়েরা থাকেন 'ছুটিতে'
রাজবাড়ির অষ্টধাতুর মূর্তিতে দেবী দুর্গা একাই পূজিত হন ৷ এখানে দুর্গার সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী থাকেন না ৷ নাড়াজোল রাজবাড়িতে ঘট বিসর্জন করা হয় ৷ দু’বছর করোনার জেরে বড় করে পুজোর আয়োজন হয়নি ৷ তবে, এ বছর সাড়ম্বরে পালিত হবে দুর্গাপুজো ৷ তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ির সদস্যরা ৷ এ বছর দুর্গা পুজোয় পর্যটকরা রাজবাড়িতে থেকে পুজো দেখার সুযোগ পাবেন ৷ তার জন্য রাজবাড়িতে 5টি ঘরে হোম-স্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ পর্যটকদের জন্য পুজোর ক’দিন রাজবাড়িতেই খাবার ব্যবস্থা করা হয় ৷ রাজবাড়ির ইতিহাস ঘুরেও দেখতে পারবেন পর্যটকরা ৷
মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে নাড়াজোল রাজবাড়ির সঙ্গে ৷ তবে, সেই ইতিহাস আজ ধ্বংসের পথে ৷ বর্তমানে হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার পর সংস্কারের কাজ শুরু হয় ৷ তবে, মাঝপথেই সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷