কেশপুর, 26 সেপ্টেম্বর: বাঙালির পুজো মানেই ঢাক ৷ শ্রেষ্ঠ উৎসব যদি দুর্গাপুজো হয়, তাহলে ঢাক তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ৷ ঢাকের আওয়াজেই নেচে ওঠে মন ৷ কিন্তু বদলেছে যুগ ৷ এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং মিউজিক সিস্টেমের রমরমা ৷ তাতেই বেজে চলে ঢাক ৷ ফলে দিনে দিনে বায়না পেতে সমস্যায় পড়ছেন ঢাকিরা ৷
পূর্বপুরুষ ধরে ঢাক বাজিয়ে আসছেন তাঁরা ৷ ঢাকিপাড়া হিসাবেই খ্যাত পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের খেতুয়া গ্রাম ৷ এই গ্রামের ঢাকিরা শুধু জেলা নয়, কলকাতা-সহ জেলার বাইরে এবং ভিন্ন রাজ্যেও ঢাক বাজাতে বায়না ধরেন । পুজোর কটা দিনে যখন সবাই উৎসবে মেতে উঠে তখন পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঢাক বাজাতে দূরদূরান্তে পাড়ি দেন তাঁরা । কিন্তু বায়না পেলেও মিলছে না ভালো টাকা ৷ আবার অনেকের ঢাক প্রস্তুত কিন্তু নেই বায়না ৷ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলেও আর্থিক সহযোগিতা জোটেনি ভাগ্যে, আক্ষেপ ঢাকিদের ৷ ফলে চরম সংকটে রয়েছেন তাঁরা ৷
ঢাকি শুভাশিস রুইদাস বলেন, "প্রতিদিন যেভাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং মিউজিক সিস্টেম বেরোচ্ছে তাতে ঢাকিদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে অনেক দিন আগেই । যতটুকু প্রয়োজন রয়েছে তার জন্য মানুষ ঢাকিদের অতি অল্প টাকায় বায়না করছে । আর তাতেই আমাদের জীবন জীবিকা নির্ধারণে সমস্যা বাড়ছে । আমরা না পেয়েছি কোন সরকারি সাহায্য ও সুবিধা । না পেয়েছি আর্থিক সাহায্য ৷ তবুও পূর্বপুরুষ ধরে চলে আসা ঢাক এখনও বাজিয়ে চলছি আমরা ।"
অন্যদিকে সুদর্শন ও জয়দেব রুইদাসদের কথায়, " বাবা কাকা জ্যাঠাদের হাত ধরে এই ঢাক বাজানোর তালিম নেওয়া । আমাদের গ্রাম ঢাকিগ্রাম নামে পরিচিত । আমরা অবসর সময়ে চাষবাস করে থাকি । কারণ আগের মতো দিন আর নেই ৷ বর্তমানে ঢাক বাজানোর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে । যতটুকু প্রয়োজন রয়েছে মানুষের তাতে অল্প টাকায় বায়না করা হচ্ছে ঢাকিদের । তাই আমরা এক প্রান্তেই রয়ে গিয়েছি । যেহেতু অন্য কাজ আমরা শিখিনি তাই এই পেশা আমরা পরিবর্তন করতে পারিনি । আমাদের আশা হয়তো একদিন আবার মিউজিক প্লেয়ার ছেড়ে পুরনো সেই নস্টালজিয়ার ঢাক বাজানো ফিরে আসবে ।"
খেতুয়া গ্রামের প্রায় 27টি পরিবার থাকে ৷ যারা বাবা কাকা, জ্যাঠা -সহ পূর্বপুরুষের আমল ধরে ঢাক বাজিয়ে আসছে । এক সময় ঢাকই ছিল প্রধান বাদ্যযন্ত্র । সেই সময় ঢাক বাজিয়ে টাকা রোজগার করে সংসার চালত পরিবারগুলির । মূলত সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়া এই পরিবারের মূল আয়ের উৎসই ঢাক বাজানো । সেই সময় ঢাকের চাহিদাও ছিল সর্ব ত্র। পুজো পার্বণ-সহ বিভিন্নরকম অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম প্রয়োজনীয়তা ছিল ঢাক । কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢাকের জায়গায় দখল নিয়েছে বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র-সহ বাদ্যযন্ত্র । এর ফলে ধিরে ধিরে চাহিদা কমেছে ঢাকিদের ৷
আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতে ভুট্টার বিভিন্ন অংশ দিয়ে মাতৃমূর্তি তৈরি করছেন অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড
ইন্সট্রুমেন্ট মিউজিক প্লেয়ার ছেড়ে আবারও মানুষজন ঢাকিদের শুনবে ৷ সেই নস্টালজিয়ার ঢাক বাজানোর দিন ফিরে আসবে । ফের রমরমা বাজার হবে ঢাকিদের, মিলবে বেশি টাকার বায়না ৷ দিন বদলের আশায় দিন গুনছে ঢাকিগ্রাম ৷