দাঁতন,19 মে : 1999 সালে প্রথমবার ভয়ঙ্কর সাইক্লোনের মুখোমুখি হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর ৷ সেই স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি দাঁতন, সোনাকোনিয়া সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বর্ডার এলাকা । তারই মধ্যে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোনের মুখোমুখি হতে চলেছে তারা । কেমন ছিল সেই ভয়ঙ্কর সাইক্লোন, পুরোনো স্মৃতি ফের উসকে দাঁতনবাসী ভাগ করে নিলেন নিজেদের অভিজ্ঞতা ৷
সালটা ছিল 1999 ৷ সুপার সাইক্লোনের মুখোমুখি হয় অবিভক্ত মেদিনীপুর । সুপার সাইক্লোনটি মূলত ওড়িশার ওপর দিয়ে গেলেও বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুরে তীব্র সাইক্লোনের প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় । পশ্চিম মেদিনীপুরের পূর্বপাড় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পশ্চিমের বর্ডার এলাকাতেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল যথেষ্ট ৷ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেই লড়াই করে বেঁচে ছিল তৎকালীন অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষজন । বিশেষ করে পশ্চিম অংশের সোনাকোনিয়া বর্ডারে এই সুপার সাইক্লোনের ধাক্কায় পুকুরের জ্যান্ত মাছও গাছে উঠে যাওয়ার মতো দৃশ্য উঠে এসেছিল । ছোটো-বড় কাঁচা ও পাকা বাড়ি ভেঙে পড়েছিল । ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু ঘটেছিল 250 জনের । দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগেছিল পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বর্ডার এলাকাগুলির ।
সেই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিতে গিয়ে এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ‘‘ সেই সময়ে এমন বেশকিছু দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, যা কল্পনাতীত ।’’ সেই স্মৃতিকেই উসকে দিয়ে আবার আসতে চলেছে সুপার সাইক্লোন । প্রায় 150 থেকে 200 কিলোমিটার বেগে এই সুপার সাইক্লোনের প্রভাব পড়তে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পশ্চিম অংশের দাঁতন, মোহনপুর, সোনাকোনিয়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ।
প্রণব দাস মহাপাত্র নামে এক গ্রামবাসী 99-এর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার বিবরণ দিতে গিয়ে বলে, ‘‘সেই সময়কার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে গা শিউরে উঠে । সেই সময় ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছিল বহু কাঁচা-পাকা বাড়ি ৷ এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষ ও পশু পাখির । এমনকী, পুকুরের মাছ গাছের ডালে ঝুলে আটকেছিল । তাছাড়া সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কাটিয়ে বেরোতে অনেক সময় লেগেছিল মানুষের ৷’’
আবারও সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছে দাঁতন, সোনাকোনিয়া এলাকার মানুষজন । অনির্বাণ মহাপাত্র নামে আরেক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘এই ঝড়ের দাপটে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম । পরিবার-পরিজন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে কোনওমতে বেঁচে ফিরেছিলাম । আবার সেই সুপার সাইক্লোনের মুখোমুখি হতে চলেছি আমরা ৷ কী হবে জানিনা ৷’’
‘‘ ঝড়ের ভয়ঙ্কর স্মৃতি যাই থাকুক না কেন, আমফান মোকাবিলায় এবার প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে যথেষ্ট ব্যবস্থা’’ এমনই আশার বাণী শোনালেন জেলাশাসক ডঃ রেশমি কোমল । তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি । 10 হাজার মানুষকে সরানোর মতো জায়গা করা হয়েছে এবং 40000 মাস্ক, স্যানিটাইজার স্টক করে রেখেছি আমরা ৷ আমাদের বর্ডার এলাকাগুলোতে মাইকিং করে প্রচার করেছি । মানুষজনকে উপকূল অঞ্চল থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে এবং ঝড়ের সময় বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করা হয়েছে । এছাড়া টোল ফ্রি নাম্বার চালু করা হয়েছে, যার দ্বারা যে কোনও বিপদে পড়লে মানুষ সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন । ঝড়ের মোকাবিলা এবং দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য NDRF টিম ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে এলাকায় । আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ।’’