বারাসত, 9 জানুয়ারি: পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে ফের বারাসত থেকে গ্রেফতার করা হল চক্রের দুই পাণ্ডাকে । ধৃতদের নাম কৌশিক মণ্ডল ও চন্দন চক্রবর্তী । এর মধ্যে কৌশিকের একটি সাইবার কাফে রয়েছে বারাসতে । সেখান থেকেই বুধবার রাতে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় । শুধু কৌশিক নয় ! ওই রাতেই বারাসত থেকে চন্দনকেও আটক করে পুলিশ ।
দু'জনকেই মুখোমুখি বসিয়ে রাতভর দফায় দফায় জেরা করা হয় । তাঁদের কথাতে বেশকিছু অসঙ্গতি মেলে বলে জানা যায় পুলিশ সূত্রে । এরপরই বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় কৌশিক এবং চন্দনকে । পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের মোবাইল থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে । যার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও রয়েছে । সেই চ্যাট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে কথোপকথন হত কৌশিক ও চন্দনের, যাঁরা এদেশের পাসপোর্ট বানাতে আগ্রহ দেখাতেন । আর তখনই বাংলাদেশিদের জন্য নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে দিতেন কৌশিক,চন্দন'রা । স্বভাবতই পুলিশ মনে করছে, ধৃত দু'জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাল পাসপোর্ট কাণ্ডে আরও বহু তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে ।
পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্তে বুধবারই সমীর দাস নামে বারাসত আদালতের এক প্রাক্তন ল 'ক্লার্ক'-কে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল । তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জেরা করতেই উঠে আসে কৌশিক ও চন্দনের নাম । তারপরই ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয় বারাসত থেকে । এর মধ্যে ধৃত কৌশকের বারাসতের খেঁজুরতলায় একটি সাইবার কাফে রয়েছে । সেখান থেকেই বাংলাদেশি নাগরিকদের হয়ে ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া হত । সূত্রের খবর, টাকার বিনিময়ে এদেশের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড-সহ যাবতীয় পরিচয়পত্র সহজেই চলে যেত বাংলাদেশিদের হাতে । ধৃত কৌশিকের সাইবার কাফে থেকে এরকমই কিছু ভোটার ও আধার কার্ড পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানা গিয়েছে ।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর মাসে জাল পাসপোর্ট চক্রের মাস্টারমাইন্ড সমরেশ বিশ্বাসকে পুলিশ বারাসত থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল লালবাজারে । তাঁকে জেরা করে পুলিশ পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে বামনগাছির বাসিন্দা মোক্তার আলমের হদিশ পায় । মোক্তার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশিদের জাল পাসপোর্ট তৈরি করে দিত । সমরেশ ও মোক্তার গ্রেফতার হতে না হতে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সাব ইন্সপেক্টর আবদুল হাই ধরা পড়ে পুলিশের অভিযানে । তাঁর বাড়ি উত্তর 24 পরগনা জেলাতে । অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত জাল পাসপোর্ট কাণ্ডে যতজন ধরা পড়েছে তার বেশিরভাগই এই জেলার বাসিন্দা । তাহলে ক্রমেই জাল পাসপোর্ট কাণ্ডের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠছে উত্তর 24 পরগনা জেলা ? উঠছে প্রশ্ন !
এই বিষয়ে বারাসাতের এসডিপিও বিদ্যাগর অজিঙ্কা অনন্ত বলেন, "পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে তদন্তের সূত্র ধরে কৌশিক মণ্ডল ও চন্দন চক্রবর্তী নামে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তদন্ত চলছে । তদন্ত শেষ হলে বিষয়টি আরও খোলসা হবে ।"
এদিকে, ধৃত কৌশিক ও চন্দনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বারাসত আদালতে পেশ করা হলে বিচারক দু'জনেই ছ'দিনের পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ।