মেদিনীপুর, 19 জুন: রাত পোহালেই রথ ৷ জগন্নাথদেব বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে যাবেন মাসির বাড়ি ৷ সবদিকে তোড়জোড়, সাজো সাজো রব ৷ শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা রথের দোকানগুলিতে ৷ বাড়ির ছোটদের আবদার মেটাতে রথ কিনতে হাজির হয়েছেন বড়রাও ৷ তবে এখনকার তুলনায় আগে বড় থেকে ছোটদের মধ্যে রথ নিয়ে উন্মাদনা থাকত চরমে ৷ সপ্তাহখানেক আগে থেকে সকলে রথ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত ৷ এখন আর বাড়িতে রথ তৈরির চল সেরকম নেই ৷ আগে পাড়ায় পাড়ায় টানা হত রথ ৷ এখন ডিজিটাল যুগ ৷ সবাই অনেক বেশি মোবাইল ও কম্পিউটারমুখী ৷ তার জেরে পুরনো দিনের ছবিতে কিছুটা বদল ঘটেছে ৷ কাঠের তৈরি রথ বিক্রি করেন মেদিনীপুরের শিল্পীরা ৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, আগের মতো বিক্রিবাট্টা না-হলেও চাহিদা রয়েছে ছোট রথের ৷
মেদিনীপুরের শিল্পী রিন্টু সিংহ প্রায় বছর দশেক ধরে রথ তৈরি করেছেন । কাঠের কাজের সময় ফেলে দেওয়া অংশ দিয়ে তিনি এই রথ তৈরি করেন । এক তলা, দোতালা, তিনতলা-সহ বিভিন্ন রথ তিনি প্রস্তুত করেছেন এ বছর । রং করে ঘোড়া ও পতাকা লাগিয়ে সেগুলি তিনি বিক্রি করেছেন তাঁর দোকানে । এই রথ কিনতে ভিড় জমিয়েছে আশোপাশের মানুষেরা । সেই কাঠের রথ বিক্রি হচ্ছে 100, 200, 500 টাকা থেকে এক ও দু'হাজার টাকা পর্যন্ত ।
আরও পড়ুন: প্রথা মেনে রথের আগে মাহেশে অনুষ্ঠিত হল জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা
রিন্টু সিংহ বলেন, "কাকুর হাত থেকে পাওয়া এই শিল্প । দশ বছর ধরে এই শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছি । আগে কাঠের তৈরি রথ বিক্রি হত প্রচুর পরিমাণে । এখন অনেক কমেছে । তবে এখনও মানুষ কিছু কেনে নস্টালজিয়ার কারণে ।" শিল্পীর আক্ষেপ, হারিয়েছে শৈশব ৷ শিশুরা এখন ব্যস্ত হয়েছে মোবাইলের গেমে ৷ যার জন্য এখন আর জঙ্গলমহলের সেই নস্টালজিয়ার রথ কিনতে ভিড় জমান না আগোর মত ক্রেতারা ।
নমিতা দুবে ও চন্দন সাউ বলেন, "আমাদের সময়কারের মত রথ আর আজ নেই । কিন্তু এখনো কচিকাঁচাদের আবদারের করে কাঠের রথের । সেই আবদার মেটানোর জন্যই রথ কিনতে আসা ৷ তবে তুলনামূলক কম প্রয়োজনের জন্যই দাম বেড়েছে এই কাঠের তৈরি রথের । কিন্তু একদিনের অনুষ্ঠানের জন্য তা কিনতে হচ্ছে আমাদের ।"
আরও পড়ুন: সুভদ্রার রথের চাকায় ফাটল, অশুভ সংকেতের আশঙ্কা জগন্নাথধামে
প্রসঙ্গত, মোবাইল এবং ডিজিটাল যুগ হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে তৈরি রথের চাহিদা । তবে এখনও কাঠের রথ তৈরি করেন মেদিনীপুরের কাঠমিস্ত্রিরা ৷ রথ এবং রথযাত্রার বাঙালি আর বাংলার এক অন্যতম উৎসব । ওড়িশার প্রধান উৎসব রথ ৷ তবে গোটা রাজ্যের সঙ্গে জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের আনাচে-কানাচে পালিত হয় রথ উৎসব । শহরের জগন্নাথ মন্দির থেকেই সেই রথযাত্রার উৎসব হয় এবং এরপর সাতদিনব্যাপী নতুন বাজারে মাসির বাড়িতে চলে তার অনুষ্ঠান পর্ব । এই কদিন ভিন্ন ভিন্ন বেশে আবির্ভূত হন প্রভু জগন্নাথদেব বলরাম ও সুভদ্রা ।