দুর্গাপুর, 13 জুলাই : ঘটা করে ঢাকঢোল বাজিয়ে নির্মল বাংলা মিশনের প্রচার হলেও কাঁকসার জঙ্গলমহলের অধিকাংশ পরিবারে এখনও মেলেনি প্রকল্পের আওতায় শৌচালয় ৷ তাই এখনও স্থানীয়দের একমাত্র ভরসা জঙ্গল ।
2013-র 19 নভেম্বর "বিশ্ব শৌচাগার দিবসে" রাজ্যজুড়ে "নির্মল বাংলা মিশন" শুরু হয় ৷ আর তার পরের বছর অর্থাৎ 2014-র 2 অক্টোবর "স্বচ্ছ ভারত অভিযান" চালু করে কেন্দ্রের মোদি সরকার ৷ এবার শৌচাগার তৈরির প্রকল্পে রাজ্য ও কেন্দ্রের সংঘাত তুঙ্গে । "নির্মল বাংলা মিশন"-এর প্রচার নিয়ে পঞ্চায়েত বা পুরসভা ঢাকঢোল বাজায় মাঝে মধ্যে। কিন্তু কাঁকসার জঙ্গলমহলের অধিকাংশ পরিবারের ছবিটা অন্যরকম ।
কাঁকসার মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে ঘটকডাঙা আদিবাসী পাড়ায় প্রায় 45 টি পরিবারের বসবাস । কিছু মানুষ নির্মল বাংলা মিশন প্রকল্পে শৌচালয় পেলেও অধিকাংশ মানুষের বাড়িতে শৌচালয় তৈরি হয়নি এখনও ।
স্থানীয় শিবানি মুর্মু বলেন, "বাথরুমের জন্য টাকা জমা করলাম, তাও দিল না ৷ মিটিংয়ে ফিটিংয়ে ডাকে পাবার জন্য ৷ আমরা যাই ৷ কিন্তু কোনও ইলাজই করছে না ৷" তাঁরা দিনমজুরি করে খেটে খান, সুবিধেগুলো না পেলে কী করে মিটিংয়ে যাব বলে অভিযোগ করেন প্রবীণ শিবানি ৷ শুধু শৌচালয় নয়, "ঘর দেয়নি, কাজকর্ম কিছুই দেয়নি" বললেন তিনি ৷ টাকা জমা করলেও শৌচালয় হয়নি, তাই প্রাতঃকৃত্য সারতে জঙ্গলে যেতে হচ্ছে, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন শিবানী মুর্মু ৷
আরও পড়ুন : বাড়ছে গঙ্গার জলস্তর, ভাঙছে পাড়; সরকারি পুনর্বাসনের দাবি
আরেক বাসিন্দা তাপস হেমব্রম জানালেন তাঁর বাড়িতে শৌচালয় তৈরি হয়েছিল, নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি করায় তা ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে ৷ তিনি বললেন, "এত ছোট শৌচালয় যে মোটা লোক হলে ঢুকতে পারে না ৷ ঘুরতে ফিরতেও অসুবিধে হয় ৷" তাঁরা 900 টাকা করে দিয়েছিলেন শৌচালয় বানাবার জন্য, মানে মিস্ত্রি নিয়ে মোট খরচ 1300 থেকে 1400 টাকা হলে তার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি টাকা তিনি দিয়েছিলেন পঞ্চায়েতকে ৷ এত ছোট নিম্নমানের শৌচালয়ের থেকে নিজে বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে মজবুত শৌচালয় বানিয়ে নিতে চেয়েছিলেন তাপস, কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে শৌচালয় নির্মাণের টাকা দেওয়া হয়নি তাঁকে, জানানো হয়েছে নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে ৷
স্থানীয়দের অনেকের এক অভিযোগ, জব কার্ড দিলেও পঞ্চায়েত থেকে সরকারের প্রচারিত ঘর বানানো হয়নি ৷ আগে টাকা জমা করলে তবে দেবে, না হলে দেবে না ৷ এমনকি টাকা দিলেও অনেকে পাননি ৷ যদিও ভোটের আগে যথারীতি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল জিতলে ঘর পাবেন সবাই ৷ আর অঞ্চলবাসীর প্রত্যেকের ভরসা জঙ্গল ৷ তবে কি ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারই সার ? শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হোক বা পঞ্চায়েতে, "নির্মল বাংলা মিশন"-এর পোস্টারে জ্বলজ্বল করছে, "শৌচালয় ব্যবহার করুন, সমাজকে রোগমুক্ত রাখুন" । কিন্তু শৌচালয় না থাকলে কী করবে আদিবাসী পরিবারগুলি ?
অবশ্য পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন অধিকাংশ মানুষই নির্মল বাংলা মিশনের আওতায় শৌচালয় পেয়েছেন । বরং তিনি দায় চাপিয়েছেন আদিবাসীদের অভ্যাসের উপর ৷ তাঁদের সচেতনতার অভাবে তাঁরা নাকি জঙ্গলে যাচ্ছেন ৷ তাঁর দাবি প্রথম প্রথম এই শৌচালয় ব্যবহারের জন্য পাহারাদার রাখা হয়েছিল এলাকায় এলাকায়। মানুষ নিজেই সচেতন নয় বলে এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন তিনি ।