আসানসোল, 1 জুন: কতজন তো কতকিছু মানেন, মনস্কামনা করেন ঈশ্বরের কাছে। কিন্তু দেশের তেরঙা পতাকা কাঁধে নিয়ে প্রায় 1 হাজার 300 কিলোমিটার রাস্তা কেউ হাঁটছেন, এমনটা বোধহয় আগে হয়নি ৷ তাঁর মনস্কামনা দেশ থেকে বেকারত্ব দূর হোক, ভ্রষ্টাচার বন্ধ হোক। উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়া জেলা থেকে দক্ষিণেশ্বরে হেঁটে এসে পুজো দেবেন, এমন সংকল্প নিয়ে হাঁটছেন উত্তরপ্রদেশের সুদেশ কুমার। বৃহস্পতিবার বাংলায় এসে পৌঁছলেন উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়া জেলার কারি গ্রামের এই বাসিন্দা। পেশায় দিনমজুর সুদেশ। তাঁর স্বপ্ন দেশ থেকে বেকারত্ব দূর হোক। দেশ ভ্রষ্টাচার মুক্ত হোক। দক্ষিণেশ্বরের কালী মায়ের কাছে গিয়ে এমনই সংকল্প করবেন বলে পথ হাঁটছেন তিনি।
মাথায় পাগড়ি, কাঁধে ছোট্ট একটা ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর কাঁধে বিরাট এক জাতীয় পতাকা। প্রায় দু'মাস ধরে হেঁটে চলেছেন সুদেশ কুমার।
সুদেশ জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে তাঁর বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবন ছুঁয়ে তিনি জাতীয় সড়ক ধরে হাঁটছেন। প্রায় 1 হাজার 300 কিলোমিটার পথ হাঁটার সংকল্প নিয়েছেন তিনি। কিন্তু শুধুই কি দক্ষিণেশ্বরের কালী মায়ের কাছে মানত? উত্তরে সুদেশ বলেন, "জাতীয় সড়ক ধরে এই তেরঙা পতাকা নিয়ে এত প্রদেশের উপর দিয়ে হাঁটছি। দেশের মাটিকে চিনছি, দেশের মানুষকে চিনছি। মানুষের কত দেশপ্রেম তা উপলব্ধি করছি।"
আরও পড়ুন: সংসারের বেড়া জালে আটকে শিল্পী সত্ত্বা, টোটো চালিয়ে দিনগুজরান গানওয়ালা অরূপের
সুদেশকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর উত্তর, "রাস্তায় অনেক জায়গায় সমস্যা হয়। বিশেষ করে রাত্রে অচেনা কাউকে দেখে দাঁড়াতে দেন না অনেকেই। বিশ্রাম নিতে পারি না। রাত্রে জাতীয় পতাকা খুলে রাখি। যাতে রাষ্ট্রীয় পতাকার অসম্মান না-হয়। আর তাই মানুষও প্রথমে অবিশ্বাস করেন, আমি কে, কী আমার উদ্দেশ্য তা নিয়ে।" পরিবেশ নিয়েও সচেতন সুদেশ কুমার। তাঁর কথায়, "বিহারের পর থেকে এই রাজ্যে কত গরম, চারিদিকে শুষ্ক। গাছ নেই। এখানকার গৃহপালিত পশুগুলিও উচ্চতায় ছোট। জলবায়ুর বিরাট পরিবর্তন চোখে পড়ছে। পরিবেশ বাঁচাতে এখনই সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।" সুদেশের মনস্কামনা কোনওদিনও পূর্ণ হবে কি না, তা জানা নেই, তবু সরল বিশ্বাসে উত্তরপ্রদেশ থেকে কলকাতা হাঁটছেন এই দিনমজুর। তাঁর বিশ্বাস দক্ষিণেশ্বরের কালীমাতা একদিন নিশ্চয় ভ্রষ্টাচার ও বেকারত্বকে দূর করবেন।