বারাবনি, 22 অগস্ট: কখনও গান শেখেনি, অথচ এই কিশোর বয়সেই যেন দেবী সরস্বতী তার কণ্ঠে বিরাজ করছেন। স্বাধীনতা দিবসের দিন স্কুলে জনপ্রিয় হিন্দি ছবি 'বর্ডার'-এর দেশাত্মবোধক গান গেয়েছিল বারাবনির আদিবাসী কিশোর শুভঙ্কর কিস্কু। খুব সাধারণ মাইকে গাওয়া সেই গান এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। শুভঙ্কর এখন রাতারাতি সেলিব্রিটি। কিন্তু এরপর কী... জনপ্রিয়তার সস্তার প্রচারে হারিয়ে যাবে না তো কিশোর প্রতিভা? এমন প্রশ্নেই আকুল শুভঙ্করের স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা।
বারাবনির কেলেজোড়া এলালায় সিধাবাড়ি গ্রামে বাড়ি শুভঙ্কর কিস্কুর। বাবা দিনমজুর। মা পরিচারিকা। দাদা এবং এক বোন রয়েছে শুভঙ্করের। শুভঙ্কর বারাবনির পুঁচড়া ভগবান মহাবীর দিহম্বর জৈন সরাক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এমনিতে পড়াশোনায় মেধাবী শুভঙ্কর। তবে শুভঙ্করের বেশি পরিচিতি গানে। স্কুলের যে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার ডাক পড়ে। প্রথম প্রথম স্কুলের ক্লাস টিচার বা অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষিকারা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে গান কিংবা কবিতা শুনতে চান। সেই সময়ই নজর কাড়ে শুভঙ্কর।
আর তারপর থেকে স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠানে শুভঙ্করের গান ছাড়া অসম্পূর্ণ। সেভাবেই 15 অগস্টে শুভঙ্করের ডাক পড়েছিল মঞ্চে। শুভঙ্কর দু'টি গান গেয়েছিল। আর সেই গানই মোবাইল বন্দি করে সোশাল মিডিয়ায় ছেড়েছিলেন স্কুলেরই পরিচালন কমিটির সভাপতি। ধীরে ধীরে তা ভাইরাল হতে শুরু করে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই কয়েক লক্ষ ভিউ হয়েছে শুভঙ্করের ওই গান। এখন বহু মানুষ ওই ভিডিয়ো ডাউনলোড করে পুনরায় আপলোড করেছে ফেসবুকে এবং এক একটিতে ভিউ দেখাচ্ছে প্রায় এক কোটি তেরো লক্ষ। শুভঙ্কর রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন, বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষ স্কুলে এসে শুভঙ্করকে সংবর্ধনা জানাচ্ছে।
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ আনন্দ পেলেও তাদের মনে অন্য ভয়ও কাজ করছে। শুভঙ্কর, ভুবন বাদ্যকর কিংবা রানু মণ্ডল হয়ে উঠুক এমনটা চাইছেন না স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ উপাধ্যায়। অভিজিৎবাবু জানান, শুভঙ্কর যেন সস্তা জনপ্রিয়তায় দিকভ্রষ্ট না-হয়ে যায়। ও যদি সঠিক অর্থে গান শিখতে চায়, তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্কুলের সবাই ওর সঙ্গে আছে। যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি কিংবা সংগঠন শুভঙ্করকে কোনও মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট, হারমোনিয়াম জাতীয় কিছু দিয়ে সহায়তা করে, তাহলে হয়তো শুভঙ্কর আরও ভালোভাবে গানের চর্চা করতে পারবে এবং আগামিদিনের গান নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।
শুভঙ্কর নিজে জানিয়েছে, সে আগামিদিনে বড় শিল্পী হতে চায় এবং তার জন্য সে গান শিখতে এবং অধ্যাবসায় করতে প্রস্তুত। এখন দেখার শুভঙ্করের এই গান তাকে কোন দিকে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের আবহে হাজির দেশাত্মবোধক গান 'ইয়ে দেশ'