দুর্গাপুর, 28 জুন: স্কুল পালিয়ে দুর্গাপুরের দামোদর নদের স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়া তিন ছাত্রের দেহ উদ্ধার হল বুধবার ৷ প্রায় 20 ঘণ্টা পর উদ্ধার হয় দশম শ্রেণির এই তিন পড়ুয়ার নিথর দেহ । মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বড়জোড়া সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । মৃত তিন পড়ুয়ার নাম শুভদীপ নস্কর, সৌম্যদীপ সাহা এবং ভিকে শীল । প্রত্যেকের গড় বয়স 16 বছর । এই ঘটনাকে ঘিরে একদিকে যেমন শোকের ছায়া নেমে এসেছে অপরদিকে তেমনই ঘটনার পরে প্রায় 20 ঘণ্টা পরে দেহ উদ্ধার এবং বারবার নজরদারির অভাবে দামোদরের স্নান করতে নেমে এইভাবে বহু ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ জন্মেছে সাধারণ মানুষের মনে । বারবার একই ঘটনা ঘটার পরেও ছাত্রদের মধ্যেও সচেতনতার অভাবের অভিযোগের কথাও উঠে এল এই ঘটনার পর ।
স্কুল পালিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে দামোদরে স্নান করতে নেমেছিল 8 জন ছাত্র ৷ তার মধ্যে জলে তলিয়ে যায় তিনজন । তাঁরা দুর্গাপুরের এমএএমসি টাউনশিপে বাসিন্দা । খবর পেয়ে বিকেলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানার পুলিশ ও বিশেষ উদ্ধারকারী দল ৷ জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ দুর্গাপুরের একটি স্কুল থেকে আট জন বাঁকুড়ার দিকে থাকা একটি হোটেলের সামনে দিয়ে দামোদর নদে আসে ৷ এর মধ্যে জলে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায় প্রথম একজন ৷ চিৎকার শুনে বাকি দু'জন ডুবে যাওয়া বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে জলে তলিয়ে যায় ।
গত দু'দিন ধরে নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি হচ্ছে । সেই সময় লোকজনের ভিড় খুব একটা ছিল না দামোদর নদের বাঁকুড়ার দিকে । এরা প্রত্যেকেই দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার এভিবি হাই স্কুলের ছাত্র । ঘটনার পরে বুধবার সকালে প্রথমে সৌম্যজিত পরে শুভজিত ও শেষে ভিকে শীলের নিথর দেহ উদ্ধার করে বিশেষ উদ্ধারকারী দল । শুভজিত নস্করের বাবা কার্তিক নস্কর বলেন, "আমরা এখানে থাকি না । শুভ পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছিল । গতকাল বড়জোড়া থানার পুলিশ ফোনে আমাকে এই ঘটনার কথা জানায় । দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে শুভজিৎ আমার একমাত্র ছেলে । আমার সব চলে গেল দামোদরের জলে ।"
মৃত ছাত্রদের প্রতিবেশী মনোতোষ শিকদার ঘটনার পর এত দেরিতে উদ্ধারকার্য শেষ হওয়ার কারণে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন । তবে বারবার দুর্গাপুর ব্যারেজে দামোদরের জলে স্নান করতে নেমে এই ধরনের বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সচেতনতার অভাব দেখা দিচ্ছে ছাত্র সমাজে । এক সময় বড়জোড়া থানার পক্ষ থেকে দামোদরের বিপদজনক ঘাটগুলিতে নজরদারি চালানো শুরু হয়েছিল । কিন্তু আজ আর সেই নজরদারি নেই বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের ।