বার্নপুর, 20 অক্টোবর : এবার পুজো অন্যরকম । COVID পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন মহামারির আতঙ্ক, তেমনি এই কোরোনাকালে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে । গ্রামে গ্রামে দিনমজুররা হাহাকার করছে । আর সেখান থেকেই একদম অন্য ভাবনা বার্নপুরের অন্যতম সেরা পুজো কমিটি নববিকাশের । প্রতিবছরই সেরার সেরা পুজো করে যারা চমকে দেয়, এ বছর তাদের পুজো একেবারেই অন্যরকম । পুজোর 80 শতাংশ বাজেটই মানবসেবায় নিয়োজিত করেছেন ক্লাবকর্তারা । এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পাওয়া অনুদান সমাজসেবামূলক কাজেই খরচ করছেন তাঁরা ।
গত বেশ কয়েকবছর ধরে রুচিশীল ও থিমের পুজো করে বার্নপুর শহরবাসীকে চমকে দিয়েছে নববিকাশ ক্লাব । কোথাও চাঁদার জুলুম না করে, ক্লাব সদস্যদের নিজেদের টাকাতেই হয় নববিকাশ ক্লাবের পূজো । কিন্তু এবছর কোরোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন শুরু হতেই ক্লাব কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন পুজো এবার অন্যরকম হবে । আর তাই পুজোর ফান্ডের 80 শতাংশ টাকাই তাঁরা মানব সেবার জন্য নিয়োজিত করেছেন ।
মার্চ মাসের 24 তারিখ থেকে শুরু হয়ে যায় মানুষের সেবা । আসানসোলের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার তুলে দেন নববিকাশের সদস্যরা । তাঁরা এই প্রকল্পের নাম দিয়েছিলেন "অন্নপাত্র" । লকডাউনে প্রতিদিন, আনলক হতে প্রতি শনি এবং রবিবার আসানসোলের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁরা যান । তবে শুধু অন্নপাত্র নয়, প্রায় পাঁচ হাজার মানুষকে তাঁরা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন লকডাউনে । এরই মাঝে চলে আসে আমফান । ত্রাণ নিয়ে বেশ কয়েকবার সুন্দরবনে গিয়ে তাঁরা সুন্দরবনের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন । সেখানে কমিউনিটি কিচেন চালিয়েছেন । পুজোর মুখে বিভিন্ন এলাকায় এখন ছোটো ছোটো শিশুদের, মহিলাদের পোশাক বিতরণ করছে নববিকাশ ।
সারাদিন ধরে পোশাক, স্কুলের ব্যাগ, বই খাতা খুদে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে তারপরে ফিরে আসা । সপ্তাহান্তে দুটি দিনে এমনিভাবেই নিজেদের পরিবারদের নিয়ে গিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে কাটাচ্ছেন নববিকাশের সদস্যরা । ক্লাবের সম্পাদক বাপ্পা তালুকদার জানিয়েছেন, "আমাদের পুজোর এবার থিমই হল "মানবপুজো" । পুজোর চার দিন মণ্ডপে প্রচুর শিশু-কিশোরদের নিয়ে এসে তাদের আনন্দ দান করা হবে, তাদের ভালো খাবার খাওয়ানো হবে । এছাড়াও কোরোনাকালে আমাদের আশপাশের দুস্থ মানুষজন যাতে ভালো থাকে তার ব্যবস্থা করব । এই কারণে পুজো একেবারেই ছোটো করে করা হচ্ছে । সামান্য ছোটো মণ্ডপ এবং ছোটো প্রতিমা নিয়েই এবারের পুজো ।"
তবে আশ্চর্যের বিষয় প্রতিমা ছোটো হলেও, মণ্ডপ অনাড়ম্বর হলেও প্রতিমা শিল্পী, মণ্ডপ শিল্পী, ঢাকিদের বঞ্চিত করেনি নববিকাশ । তাঁদের প্রাপ্য ইতিমধ্যেই তুলে দেওয়া হয়েছে । মানবসেবায় ব্রতী নববিকাশ পাশে পেয়েছেন নানা শুভানুধ্যায়ী । শিল্পাঞ্চলের বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ কমলেন্দু মিশ্র জানালেন, "এমনই তো হওয়া উচিত । আজকের এই সময়ে পুজোর আড়ম্বর নয়, মানবসেবা সত্যিকারের প্রয়োজন । যেটা নববিকাশ করে দেখাচ্ছে । আমরা নববিকাশের সঙ্গে জুড়ে আছি বলে আমাদের গর্ব হয় ।"
আসানসোলের প্রাক্তন কাউন্সিলর ববিতা দাস নববিকাশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । তিনি জানান, "শুধু পুজোর সময় নয় । লকডাউনের সময়কাল থেকেই আসানসোলের 106টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে নববিকাশ । ক্লাবের সদস্যদের রোজগারের বেশিরভাগ অর্থই তাঁরা তুলে দিয়েছেন মানুষের সেবার জন্য ।"
তাই নববিকাশের পুজো এবার অন্যরকম । মানুষের আনন্দদানের মাঝেই নিজেরা আনন্দ পেতে চাইছেন । আড়ম্বর নয়, মানবপ্রেমই হোক এবারের পুজোর আসল রূপ ।