কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ! আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় প্রতিবছর ভিড়ে জমজমাট হয়ে থাকে এই প্যাভিলিয়ন। বহু মানুষ আসেন বাংলাদেশের লেখকদের বই সংগ্রহ করতে । পাশাপাশি লেখককেও সামনে থেকে দেখার লোভও ছাড়তে পারেন না বইপ্রেমীরা । তবে এ বছর সেই দৃশ্য উধাও । রাজনৈতিক কাঁটাতারে আটকে গিয়েছে 48তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ।
কলকাতা বইমেলায় অংশ না-নিলেও বাংলাদেশের বহু লেখক ও বহু প্রকাশনা সংস্থা’র বই এবছর প্রকাশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় । তারমধ্যে অন্যতম হল অভিযান পাবলিশার্স । বাংলাদেশের প্রায় 10টা বই এ’বছর প্রকাশ পেয়েছে । অভিযান পাবলিশার্সের মারুফ হোসেন বলেন, ‘‘আমি নিজে একটা ভয়ের মধ্যে ছিলাম । ভেবেছিলাম অনেকেই কিনবেন না । কিন্তু দেখলাম বহু মানুষ আসছেন, বই কিনছেন । ভালোই সাড়া পড়েছে ।’’ শুধু অভিযান নয়, প্রতিভাসেও ভিড় জমাচ্ছেন বহু বইপ্রেমীরা। প্রতিভাসের চিত্রার্পিতা সাহা বলেন, ‘‘মানুষ বাংলাদেশের বই নয়, মূলত দেখছেন সূচিপত্র । তারপরেই বহু মানুষ কিনছেন। মোট 5টা বই এবছর প্রকাশিত হয়েছে। সব বইয়ের চাহিদা রয়েছে । ’’
![Book Lovers Eager to Buy Bangladeshi Writers Books](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/06-02-2025/wb-kol-bangladeshbookfair-7211146_06022025180434_0602f_1738845274_811.jpg)
কোটা আন্দোলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে দেখা গিয়েছে অশান্তির ছবি। অন্তর্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও শান্তি ফেরেনি। দেশ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভাষণকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে । বুধবার ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। এই আবহে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে পত্রভারতীর প্রকাশনী থেকে হুমায়ুন আহমেদের ‘71 এর মুক্তিযুদ্ধ’ । প্রকাশনীর সদস্য রাহুল রায় বলেন, ‘‘এ বছর আমাদের হুমায়ুন আহমেদের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে, যেটা মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা। এর পাশাপাশি সাদাত হোসাইনের বই-ও আমাদের কাছে রয়েছে । পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বই রয়েছে । যেগুলো বাংলাদেশের লেখক লিখেছেন, কিন্তু প্রকাশিত হয়েছে আমাদের প্রকাশনী থেকে ।’’
এবছর বইমেলায় প্রথম অংশগ্রহণ করেছে শান্তিনিকেতনে প্রকাশক সংস্থা ডুংরি । তারাও বাংলাদেশ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছে । যা পূর্ব বাংলার ইতিহাসের গল্প বলে । প্রকাশনী সংস্থার সদস্য শুভ নাথ বলেন, ‘‘এই বইটা 50 বছর আগে একবার প্রকাশিত হয়েছিল । তারপরে আবার ভারত থেকে আমরা প্রকাশ করলাম । ইতিমধ্যেই বইটার সাডা পড়েছে । ওপার বাংলা থেকেও প্রায় 50টির বেশি অর্ডার আমাদের কাছে এসেছে ।’’
প্রকাশক সংস্থা চাইলেও বইপ্রেমীরা কতটা চাইছেন বাংলাদেশকে ? নাগেরবাজার থেকে আসা সুপ্রতিম সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ভারত এবং বাংলাদেশের একটা সর্ম্পক ছিল । কিন্তু এখন কিছু সমস্যা চলছে । তবে আমার মনে হয় রাজনীতিকে সরিয়ে শিল্প এবং সাহিত্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ।’’
বই প্রকাশ করা হলেও বইপ্রেমীদের কাছে কতটা আবেগ রয়েছে বাংলাদেশের প্রতি ? সেই খোঁজ করতে গিয়েই আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় দেখা মিলল বাংলাদেশি এক চলচ্চিত্রকারের । এফএম শামিমের কথায়, ‘‘ভাষার কোনও বর্ডার থাকে না। এটা হতে পারে না, যে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশে পাঠক, প্রকাশনী, লেখকরা আসতে পারবেন না । একটা মৌলবাদী শক্তি রাষ্ট্রকে ঘিরে রেখেছে। তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশি মানুষেরা এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন । যেভাবে তাঁরা বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছেন, সেভাবেই এগিয়ে আসবেন ৷’’