আসানসোল, 13মে : কাশ্মীর থেকে শাল সোয়েটার কম্বল বিক্রি করতে এসেছিলেন ওঁরা । কিন্তু লকডাউনের কারণে আর কেউ ফিরে যেতে পারেনি । প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন । লাভ হয়নি । এবার তাই হুঁশিয়ারির পথেই হাঁটল । আগামী 3-4 দিনের মধ্যে কোনও ব্যবস্থা না হলে তাঁরা লকডাউন ভেঙে রাস্তায় বেরিয়ে পড়বেন । যদি কেউ বাধা দিতে আসেন, তাহলে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করবেন তাঁরা ।
প্রতি বছর শীতের আগে বাংলায় আসেন কাশ্মীরের ফেরিওয়ালারা । তাঁরা মূলত শাল, সোয়েটার, ব্ল্যাঙ্কেট ইত্যাদি বিক্রি করতে আসেন । বছরের পর বছর একই রুটিন । পুজোর পরেই সবাই চলে আসে। মার্চ মাস নাগাদ ফিরে যায় । এবার আর ফিরতে পারেননি । লকডাউনের কারণে মার্চ মাস থেকে আটকে পড়ে আছে 50 জন কাশ্মীরি । আসানসোলের চেলিডাঙা এলাকায় ঘর ভাড়া করে আছেন ৷ গ্রীষ্মকালে ব্যবসা হয়না । হাতের টাকা শেষ । এমত অবস্থায় তাঁরা কী করবেন ? প্রশাসনিক সব মহলে জানানো হয়েছে । কিন্তু কোনও জায়গা থেকে কিছুই সাড়া মেলেনি । আর তাই কার্যত অসহায় ভাবেই দিন কাটছে ওই 50 জন কাশ্মীরের বাসিন্দার । কিন্তু কতদিন? আর তাই ধৈর্য ভেঙে ক্ষোভ বেরিয়ে আসছে ভেতর থেকে ।
কাশ্মীরের প্রবীণ বাসিন্দা মহম্মদ সিফি আহমেদ ভাট বলেন, ‘‘50 বছরের বেশি সময় ধরে আসানসোলে আসছি ব্যবসা করতে । কখনও এরকম হয়নি । এ বছর আটকে পড়েছি । জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, সবার কাছে আবেদন জানিয়েছি । কোনও জায়গা থেকে কোনও সাড়া মিলছে না ৷ বাড়ি ফিরতে চাই । জেলা প্রশাসন আমাদের বলছে বাস দিয়ে দেব । বাসে এতদূর রাস্তা ভ্রমণ করা সম্ভব নয় । কিন্তু সবই কথার কথা । ব্যবস্থা হচ্ছে না কিছুই । আমাদের হাতে টাকা পয়সা শেষ । আমরা কি করব, খুঁজে পাচ্ছি না ।’’
অন্য আরেক বাসিন্দা আজাদ আহমেদ শাহ ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, ‘‘কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি । আমরা মরেছি না বেঁচে আছি কেউ জানতে চাইছে না । কাশ্মীর রাজ্যের সরকারের কাছেও আমরা জানিয়েছি । সেখান থেকেও সাড়া মেলেনি । এখানকার জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না । আর তিন-চার দিন দেখব । তার মধ্যে যদি আমাদের কোনও ব্যবস্থা না হয়, তাহলে আমরা লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নেমে পড়ব এবং কেউ বাধা দিতে এলে আমরা সেখানে পেট্রল দিয়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করব ।’’