দুর্গাপুর, 29 জানুয়ারি: জোশীমঠের ঘটনার পর সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানিগঞ্জে ধস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দুশ্চিন্তা যে অমূলক নয় তারা হাতে-নাতে প্রমাণ মিলল। রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের (Eastern Coalfields Limited) গাফিলতির জেরে বারে বারে ধসের ঘটনা এমনও অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রীদেরও। শনিবার ভোরে অণ্ডালের ধাণ্ডাডিহি এলাকায় ধসের কারণে তলিয়ে গেল আংশিক পুকুর। ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ কাজোড়া এরিয়ার খোলামুখ খনি রয়েছে ধাণ্ডাডিহি এলাকায়। সেখান থেকে অবৈধভাবে কয়লা উত্তোলন চলছে আর তারই জেরে এই ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ উঠছে। একাধিকবার খনি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোনও সুরাহা মিলছে না বলে অভিযোগ। 2020 সালে হরিশপুরে ধসের ঘটনা ঘটে। তলিয়ে যায় গ্রামের একাংশ। চূড়ান্ত সমস্যার মুখে সেখানকার এলাকাবাসীরা। কিছুদিন আগে রানিগঞ্জ এবং আসানসোলের একাধিক প্রান্তে ধোঁয়া বের হতেও দেখা যায়। এবার অণ্ডালের ধাণ্ডাডিহি এলাকার পুকুর আংশিক তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আতঙ্কে এলাকাবাসীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান ও দিব্যেন্দু লায়েকের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, "বেআইনি কয়লা খননের জেরেই এই ধস। আর এই বেআইনি কয়লা খননের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শাসক দলের একাংশ এবং প্রশাসনের একাংশ। এর আগে আমাদের পার্শ্ববর্তী হরিশপুরের ধসের ভয়াবহ ছবি আমরা দেখেছি ৷ ঘরবাড়ি মাটির অতলে তলিয়ে গিয়েছে ৷ আজ পর্যন্ত হরিশপুরের বাসিন্দারা পুনর্বাসন পাইনি। এবার ধাণ্ডাডিহি গ্রামের পালা। ইসিএল কয়লা খনি করছে পাশাপাশি বেআইনিভাবে কয়লা খনন চলছে তৃণমূল-কংগ্রেসের স্থানীয় কয়েকজনের প্রত্যক্ষ মদতে। সব মিলিয়ে তাই এই অঞ্চলের মানুষ এখন বিপন্ন। আমাদের অবস্থা হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মতো হতে চলেছে।"
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানিগঞ্জ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই এলাকা রানিগঞ্জ বিধানসভা অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। তবে শুধু রানিগঞ্জ নয় ইসিএল যে সমস্ত এলাকায় কয়লা খনন করছে সেই সমস্ত এলাকাগুলিতে মাঝেমধ্যেই ধসের ঘটনা ঘটছে। দিব্যেন্দু লায়েক অভিযোগ তুলে বলেন, "গত আট-দশ বছর ধরে ধসের ঘটনা লাগাতার ঘটছে। সবার যোগসাজশে এই ধসের ঘটনা ঘটছে। এই এলাকার সমস্ত জমির মালিক এখন ইসিএল।সবাই যদি নিজের নিজের দায় বদ্ধতা পালন করে তাহলে এই ঘটনা ঘটে না। কিন্তু শাসকদল থেকে প্রশাসন সভায় উদাসীন। সাধারণমানুষ-এর ধসের ঘটনায় আতঙ্কিত।"
আরও পড়ুন: জোশীমঠ এলাকার ধস, উদ্ধার শতাধিক পরিবার, এলাকা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য কাজোড়া গ্রামের হরিশপুর এলাকায় ধস বিরাট আকার ধারণ করে। বহু ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। অনেক বাড়ি মাটির নীচে চাপা পড়ে। এখনও সেই এলাকার বাসিন্দারা পুনর্বাসন পাননি। ইসিএলের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে যে ঘর দেওয়া হচ্ছে সেই স্বল্প আয়তনের ঘর পছন্দ হয়নি হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। ধীরে ধীরে ইসিএল এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়ছে। অন্যদিকে, ইসিএল এলাকায় ধসের ঘটনা আকছার ঘটার কারণে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা কার্যত অসহায়ভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অবিলম্বে কেন্দ্র এবং রাজ্য এই দুই সরকারকে ইসিএল অঞ্চলের ধস নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে দাবি এলাকাবাসীর ৷