দুর্গাপুর, 25 অগস্ট: ভিন রাজ্যের লটারির টিকিট নিয়ে এই রাজ্যে জুয়াখেলার আসর ৷ উত্তর-পূর্বের নাগাল্যান্ড এবং মণিপুরের লটারি টিকিটের প্রথম পুরস্কারের শেষ অঙ্কটি সামনে রেখে রমরমা জুয়া খেলা চলছিল পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে ৷ বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে এই খেলা চালাচ্ছিল স্থানীয় কিছু জুয়াড়ি ৷
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করে ৷ ধৃতরা বিশ্বজিৎ ভাণ্ডারী, বাপি বিশ্বাস, রাজাগোপাল অধিকারী এবং বিক্রম ঘোষ ৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে 420 ও 34 নম্বর ধারায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে ৷ শুক্রবার তাদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে ৷ তারা এই 'ঘুঁটি খেলা' চালাচ্ছিল ৷
আরও পড়ুন: জাল লটারির টিকিট বিক্রির অভিযোগে ধৃত 2, পেশ করা হয়েছে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে
বিগত বেশ কয়েক বছরে এই রাজ্যে ভিন রাজ্যের লটারির টিকিট ঢুকে পড়েছে ৷ নাগাল্যান্ড সরকারের ডিয়ার লটারির রমরমা রাজ্যজুড়ে ৷ প্রথম পুরস্কার এক কোটি টাকা ৷ এর সঙ্গে আরও বহু পুরস্কার থাকায় এই লটারি টিকিটের প্রতি আকৃষ্ট হন গ্রাহকরা ৷ তবে এই লটারির সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি খেলাও শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুরে ৷ আর কোটি কোটি টাকার এই খেলাকে সামনে রেখেই বহু লটারি বিক্রেতা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যান ৷ অন্যদিকে বহু মানুষ নিজের সব কিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত ৷
দুর্গাপুরে কীভাবে লটারির আড়ালে এই জুয়া খেলা ? ভিন রাজ্যে লটারি খেলা সাধারণত দিনে তিনবার হয় ৷ আর এই তিনবার খেলার প্রথম পুরস্কারের জন্য যে পাঁচটি ডিজিটের নম্বর থাকে, তার শেষ অঙ্ক বা ডিজিটটি ধরে স্থানীয় স্তরে এই জুয়া খেলা হয় ৷ কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা হয় এই জুয়া খেলায় ৷ 1টি শেষ ডিজিটের জন্য একজনকে 12 টাকা দিতে হবে ৷ যদি সেই ব্যাক্তির ডিজিট মিলে যায়, তাহলে তিনি ওই 1 টি 12 টাকায় লাগানো নম্বরের বিনিময়ে পাবেন 100 টাকা ৷ তবে লটারি খেলা শুরু হওয়ার 10 মিনিটের মধ্যে ওই নম্বরটি বুক করে ফেলতে হবে জুয়াড়িকে ৷
উদাহরণস্বরূপ, প্রথম পুরস্কারের টিকিট নম্বর -33456 ৷ অর্থাৎ শেষ ডিজিট 6-এর জন্য একজনকে 12 টাকা দিতে হবে ৷ আর তা মিলে গেলে তিনি পাবেন 100 টাকা ৷ এই খেলাকে স্থানীয় ভাবে 'ঘুঁটিখেলা' বলা হয় ৷ আর লটারির টিকিট বিক্রির আড়ালে বহু যুবক বেশ কয়েক বছর ধরে এই খেলা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ এর ফলে সরকারকে কর দেওয়া বৈধ লটারির টিকিট বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে অভিযোগ ৷
সঞ্জীব মেহেরা সাইকেলে ঘুরে লটারি বিক্রি করেন ৷ তিনি বলেন, "এইভাবে প্রথম পুরস্কারের শেষ নম্বরটি ধরে অনেকদিন ধরেই জুয়া খেলা চলছিল ৷ সেইজন্য আমাদের টিকিট বিক্রি কমে গিয়েছিল ৷ এর বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে, এটা ভালো ৷ আমরা এই লটারির টিকিট বিক্রি করেই সংসার চালাই ৷"
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (দুর্গাপুর) তথাগত পাণ্ডে বলেন, "বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের কাছে এরকম অভিযোগ আসছিল ৷ আপাতত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তবে আরও অনেকেই এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ তাদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে ৷"
আরও পড়ুন: লটারি জিতে রাতারাতি কোটিপতি শীতলকুচির মাংস বিক্রেতা
উল্লেখ্য দুর্গাপুরের বেনাচিতি জলখাবার গলি, ট্রাঙ্ক রোড, 54 ফুট রোড, ভিরিঙ্গি মোড়, কুড়ুরিয়া ডাঙ্গা, আশিস মার্কেট, বি-জোন চন্ডীদাস বাজার, অণ্ডাল, উখড়া, গোপালমাঠ, দুর্গাপুর স্টেশন বাজার-সহ দুর্গাপুরের প্রায় সব এলাকাতে এই অবৈধ জুয়া খেলার রমরমা কারবার চলছিল ৷