মুম্বই, 26 ডিসেম্বর: সিনেপর্দায় 2024 সালটা রাজ করেছে মহিলা কেন্দ্রিক ছবি থেকে মহিলা পরিচালক ও অভিনেতা ৷ একাধিক সিনেমা আন্তর্জাতিক মঞ্চে পেয়েছে স্বীকৃতি ৷ নেপথ্যে সেই মহিলা ৷ পায়েল কাপাডিয়ার অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট থেকে কিরণ রাওয়ের লাপাতা লেডিজ, মহিলা পরিচালকদের এনেছে স্পটলাইটে ৷
কাপাডিয়া প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি গোল্ডেন গ্লোবস পুরস্কারের জন্য নমিনেশন পেয়েছিলেন ৷ আবার কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জিতেছেন গ্র্যান্ড প্রিক্স পুরস্কার ৷ তেমনি অনাসূয়া সেনগুপ্ত বাঙালি অভিনেত্রী যিনি কানের মঞ্চে জিতেছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার ৷ আবার কিরণ রাওয়ের ছবি অস্কার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল ৷ তবে শুধু, কাপাডিয়া, সেনগুপ্ত বা রাও নয়, বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে আরও অনেক মহিলা রয়েছেন, যাঁরা 2024 সালে কাঁপিয়ে দিয়েছেন ৷
রিমা দাসের 'ভিলেজ রকস্টার 2' বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্য়ালে কিম জিসোক পুরস্কারে সম্মানিত হয় ৷ 2017 সালে মুক্তি পাওয়া ছবির সিক্যুয়েল ছিল এটি ৷ অন্যদিকে শুচি তলাতির মা-মেয়ের গল্প 'গার্লস উইল বি গার্লস' সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ওয়ার্ল্ড সিনেমা ড্রামাটিক প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার জিতে নেয় ৷ অভিনয়ের জন্য 22 বছর বয়সী প্রীতি পানিগ্রাহী বিশেষ জুরি পুরস্কার জিতেছে ৷ ছবিটি প্রযোজা করেছেন রিচা চাড্ডা ও আলি ফজল ৷
পরিচালক তালাতি নিউইয়র্ক থেকে ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, স্বাধীন মহিল পরিচালকদের এই বছরটা দারুণ গিয়েছে ৷ তিনি বলেন, "এই বছরটা একটা ল্যান্ডমার্ক ৷ একই সময়ে মহিলা পরিচালিত এতদগুলি ছবি সামনে আনা সত্যিই কাকতলীয় ৷ মহিলা কেন্দ্রিক সিনেমা হোক বা পরিচালনা, আমিও এর অংশ হতে পেরে গর্বিত ৷"
চলতি বছর টক অফ দ্য টাউন ছিল কিরণ রাওয়ের 'লাপাতা লেডিজ' ৷ অস্কার নমিনেশনের প্রথম ধাপে এই ছবি মনোনেয়ন পেলেও পরবর্তী সময় তা প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যায় ৷ তবে তাঁর ছবি সমাজের এক কঠিন সত্যকে মজার আকারে যেভাবে তুলে ধরেছে, তার প্রশংসা ফিরেছে লোকের মুখে মুখে ৷ কিরণ বলেন, "মেয়েরা সিনেমা জগতে নিজেদের জন্য একটা জায়গা তৈরি করছে ৷ কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও অনেক বেশি নারীর প্রয়োজন রয়েছে। নারী গল্পকার, প্রযোজক এবং অভিনেতাদের জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ করা দরকার। আমি আকর্ষণীয় মহিলা চরিত্রগুলিকে ঘিরে এইভাবেই গল্প বলতে থাকব ৷"
পরিচালনায় প্রথমবার হাত দেন আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী তাহিরা কাশ্যপ খুরানা ৷ তাঁর ছবির নাম 'শর্মাজি কি বেটি' ৷ তিন নারীর নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ও নিজেকে ভালোবাসার গল্প বলে এই সিনেমা ৷ মুখ্যচরিত্রে দেখা গিয়েছে সাক্ষী তনওয়ার, দিব্যা দত্তা ও সাইয়ামি খেরকে ৷ তাহিরা বলেন, "মামি-সহ অন্যান্য পুরস্কারে নমিনেশন পাওয়া, দর্শকদের প্রশংসা পাওয়া ইত্যাদি দেখে আমি আপ্লুত ৷ আমার গল্প দর্শক মনে জায়গা করতে পেরেছে ৷ এটা দেখেই আমি আনন্দিত ৷ তবে এই সফর খুব একটা মসৃণ ছিল না ৷ আমি আশা রাখব, আগামিদিনেও এমন ছবি বানিয়ে যেতে পারব ৷"
তিনি আরও বলেন, "মহিলা পরিচালকদের জন্য 2024টা সাল ছিল দুর্দান্ত ৷ কিরণের সিনেমা অস্কার প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন পায় ৷ পায়েলের সিনেমা কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পায়, সব মিলিয়ে দারুণ বিষয় ৷ আরও মহিলা পরিচালক-প্রযোজক এইভাবে এগিয়ে আসুক এটাই চাই ৷"
কর্মাশিয়াল মেইনস্ট্রিম সিনেমার কথা বললে উল্লেখ করতেই হয়, শ্রদ্ধা কাপুরের 'স্ত্রী 2' ছবির কথা ৷ ভূত হিসাবে শ্রদ্ধা যেভাবে একটা ছবি টেনেছেন তা প্রশংসনীয় ৷ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ছবির ঝুলিতে আসে 875 কোটি টাকা ৷ অন্যদিকে বিদ্যা বালান অভিনীত দো অউর দো পাঁচ ছবির কথাও বলতে হয় ৷ রিহা কাপুরের 'ক্রিউ' তিন মহিলাকে কেন্দ্রে রেখে এগিয়েছে ৷ যা বক্সঅফিসে সফলতাও আনে ৷ টাবু, করিনা কাপুর খান ও কৃতি স্যানন অভিনীত এই ছবি দর্শক মনে জায়গা করে নেয় ৷ প্রশংসা করতে হয় একজন ছোট শহরের রিপোর্টারের ভূমিকায় ভূমি পেদনেকরের চরিত্রের ৷ ছবির নাম 'ভক্ষক' ৷
কণিকা ধীলন ও কৃতি স্যানন প্রযোজিত প্রথম ছবি 'দো পাত্তি'- ওটিটির পর্দায় জনপ্রিয়তা লাভ করে ৷ কৃতি স্যাননকে দ্বৈত চরিত্রে লেগেছে অনবদ্য ৷ সঙ্গে উপরি পাওনা অবশ্যই কাজল, যিনি প্রথমবার ওটিটি-র জন্য কাজ করেন ৷ কৃতি বলেন, "আমি কখনও সেটে প্রযোজক হিসাবে আসিনি ৷ অভিনেত্রী হিসাবে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি ৷ এই ছবি দর্শকদের মনে জায়গা করতে পেরেছে, তাতেই আমি খুশি ৷"
পাশাপাশি, 'আর্টিকেল 370' ছবির মধ্য দিয়ে নজর কাড়েন ইয়ামি গৌতম ৷ প্রশংসিত হয়েছে 'চমকিলা' ছবিতে পরিণীতি চোপড়ার অভিনয়ও ৷ অমরজিৎ কৌর হিসাবে ইমতিয়াজ আলির ছবিতে দর্শক দেখেছেন অন্য পরিণীতিকে ৷