আসানসোল, 26 ডিসেম্বর: কম্বল-কাণ্ডে পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় আবারও বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাঁর বাড়িতে এল পুলিশ (Police again interrogate Chaitali Tiwari )। সোমবার সকাল 11টা নাগাদ আসানসোলের ভাঙা প্রাচীর এলাকায় ঘনশ্যাম অ্যাপার্টমেন্টে চৈতালির বাড়িতে আসে পুলিশ । মোট 7 জনের প্রতিনিধি দল তাঁর বাড়িতে যায়। এর মধ্যে দু'জন এসিপি র্যাঙ্কের পুলিশ অফিসার রয়েছেন । প্রায় দু'ঘণ্টা চলে জিজ্ঞাসাবাদ । তবে এ সম্পর্কে পুলিশেপর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । প্রতিক্রিয়া দেননি চৈতালি বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য। অন্যদিকে সাংবাদিকরা যাতে সামনে যেতে না পারে তার জন্য অতি সক্রিয় পুলিশ ।
উল্লেখ্য, গত 14 ডিসেম্বর আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙালে শিবচর্চা ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ 27 নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । তিনি ছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । শিবচর্চাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কম্বল বিতরণেরও পরিকল্পনা ছিল সেদিন । শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) অনুষ্ঠান স্থল থেকে বেরিয়ে যেতেই কম্বল নিতে হুড়হুড়ি লাগে মানুষের । তাতেই পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনা ঘিরে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয় । ঘটনায় মৃতদের তালিকায় ছিলেন ঝালি বাউরি নামে একজন ৷ তাঁর ছেলে সুখেন বাউরি চৈতালি তিওয়ারি, জিতেন্দ্র তিওয়ারি-সহ বেশ কয়েকজনের নামে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । পুলিশ এই ঘটনায় এখনও অবধি 6 জনকে গ্রেফতার করেছে । ধৃতদের আটদিনের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে ।
অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ চৈতালি তিওয়ারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবার জন্য নোটিশ দিয়েছিল । মঙ্গলবার আসানসোলের ভাঙা প্রাচীর এলাকায় ঘনশ্যাম অ্যাপার্টমেন্টে চৈতালিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যায় পুলিশ ৷ কিন্তু তিনি বাড়িতে ছিলেন না । চৈতালি সেসময় কলকাতায় ছিলেন ৷ বাড়ি গিয়ে তাঁর ফ্ল্যাট বন্ধ, তালা ঝুলছে দেখে ফিরে আসে পুলিশ ।
এরপরই এফআইআর-এর উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে চৈতালি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । হাইকোর্ট তাঁকে 21 দিনের রক্ষাকবচ দেয় । আগামী তিন সপ্তাহ পর্যন্ত গ্রেফতার করা যাবে না আসানসোলের (Asansol) বিজেপি নেত্রী চৈতালি তিওয়ারিকে (Chaitali Tiwari)। বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) ।
কিন্তু পাশাপাশি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, পুলিশ তদন্তের প্রয়োজনে সোমবার ও শনিবার সকাল 10টা থেকে 12টা অবধি 2 ঘণ্টা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে তাঁকে । শুক্রবার রাতে চৈতালি তিওয়ারি নিজের বাড়িতে ফিরেছেন । নির্দেশ মতো শনিবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ জিতেন্দ্রর বাড়িতে পৌঁছন 7 জন পুলিশের প্রতিনিধি দল । এর মধ্যে দু'জন এসিপি র্যাংকের পুলিশ আধিকারিক এবং গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক ও মহিলা পুলিশ আধিকারিক ছিলেন । তাঁরা টানা দু'ঘণ্টা ধরে চৈতালিকে একা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়ে ছিলেন ।
আরও পড়ুন: চৈতালী তিওয়ারির বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের
জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ আধিকারিকরা চলে যাওয়ার পথে মুখ খুলতে চাননি । তবে সাংবাদিকরা যাতে পুলিশ প্রতিনিধি দলের কাছে না যেতে পারে তাই অতি সক্রিয় হয়ে ব্যারিকেড করে আটকে দেয় তাঁদের । পুলিশ চলে যাওয়ার পর নিজের আবাসন থেকে নেমে আসেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি (Jitendra Tiwari) । তিনি বলেন, "এই জিজ্ঞাসাবাদে চৈতালি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে । তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নামে কার্যত হেনস্তা করেছে পুলিশ ৷"
তিনি আরও বলেন "পুলিশের এই অতি সক্রিয়তাকে ধিক্কার জানাই । তৃণমূল নেতাদের খুশি করতে পুলিশ এমন কাজ করছে । আমার স্ত্রীকে হেনস্থা করা হয়েছে তাতে তৃণমূল নেতারা নিশ্চয়ই খুশি হবেন । তবে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে একজন তদন্তকারী অফিসার আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলে আমি জানতাম । কিন্তু সাত জন পুলিশ আধিকারিক গিয়ে টানা দু'ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আমার স্ত্রী । এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন তিনি । এই টানা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও সুস্থ হয়ে পড়েছেন ।"
এখন দেখার আজকে জিজ্ঞাসাবাদে নতুন কী উঠে আসে । অন্যদিকে শনিবারের মতো সোমবারেও সাংবাদিকদের রুখতে পুলিশের অতিসক্রিয়তা নজরে পড়ে । পুলিশ কার্যত ব্যারিকেড করেই সাংবাদিকদের আটকে দেয় । অ্যাপার্টমেন্টের সামনে যেতেও বাধা দেওয়া হয় সাংবাদিকদের ।