আসানসোল, 29 জুলাই: বাড়িতে একা থাকার সুযোগ নিয়ে এক বৃদ্ধার ঘরে চুরি করতে ঢুকেছিল তিন দুষ্কৃতী । কিন্তু চোখে পড়ে যাওয়ায় লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল বৃদ্ধাকে । সেই ঘটনায় 2 মাস পর খুনের কিনারা করল আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল দক্ষিণ থানার সাউথ পুলিশ পোষ্ট । একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইতিমধ্যেই । তাঁর নাম বিশাল বাউড়ি । সুরজ হাজরা ও জগ্গু নামে আরও দুই দুষ্কৃতীর সন্ধান করছে পুলিশ ।
ঠিক কী ঘটেছিল? আসানসোল দক্ষিণ থানার অন্তর্গত জিটি রোডের পাশে সূর্যসেন পার্ক এলাকায় একটি বাড়িতে একাই থাকতেন আলপনা রায় (65) নামে জনৈক বৃদ্ধা । গত 23 মে সকালে বাড়িতেই তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় । পুলিশ প্রাথমিকভাবে তদন্তে নেমে এটিকে খুনের ঘটনা বলে অনুমান করে । এরপর দিল্লি থেকে আলপনার ছেলে সনৎ রায় এসে আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করেন । পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে । কিন্তু প্রথম প্রথম কোনও সূত্র হাতে পায়নি পুলিশ । এরপর এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ দেখতে পায়, ঘটনার দিন রাতে তিন যুবক আলপনা রায়ের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছে । তার মধ্যে এক যুবক ছিল সুরজ হাজরা । প্রসঙ্গত, এই সুরজ ছিল একজন প্লাম্বার । যিনি ঘটনার কয়েকদিন আগেই আলপনা রায়ের বাড়িতে পাইপের কাজ করেছিল ।
প্লাম্বার সুরজ চিনিয়ে দিয়েছিল সব: যেহেতু সুরজ আলপনার বাড়িতে কাজ করেছিল তাই বৃদ্ধার বাড়িতে ঢোকার রাস্তা এবং অন্যান্য সবকিছুই নখদর্পণে ছিল তাঁর । সেইমতো আলপনা রায়ের বাড়িতে চুরি করার উদ্দেশ্যে 22 মে রাতে সুরজ ও তার দুই বন্ধু হানা দেয় । দরজা খোলা পেয়ে তারা ঢুকে পড়ে আলপনা রায়ের বাড়িতে । আলপনা তখন ওপর তলায় ছিলেন । নীচের তলায় আলপনা রায়ের বাড়ি আলমারি খুলে নগদ 40 হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় সুরজ, বিশাল বাউড়ি এবং জগ্গু । কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার আগেই আলপনা রায় তাদের দেখে ফেলেন ।
সুরজকে চিনে ফেলেছিলেন আলপনা: সুরজকে দেখে চিনতে পেরেছিলেন আলপনা । তখন তারা ভয় পেয়ে যায় এবং ভাবে আলপনা বেঁচে থাকলে তাদের কথা পুলিশকে জানিয়ে দেবে । আর তাই লোহার রড দিয়ে আলপনা রায়ের মাথার পিছনে আঘাত মেরে তাঁকে খুন করে ওই তিন দুষ্কৃতী । পুলিশ সুরুজের অবস্থান এবং এই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহ স্পষ্ট হওয়ায় সিসিটিভি দেখিয়ে আরও বাকি দু'জনকে চিহ্নিত করে । এরপরেই বিশাল বাউড়িকে আসানসোল দক্ষিণ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ৷ তবে সুরজ হাজরা এবং জগ্গু পলাতক ৷ তাদের সন্ধানে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: ছয় বছর পর মামলার কিনারা ! বৃদ্ধা খুনে গ্রেফতার নাতি ও মেয়ে
বিশালের 14 দিনের পুলিশ হেফাজত: আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) এসএস কুলদীপ বলেন, "বিশাল বাউড়িকে আসানসোল কোর্টে তোলা হলে তাকে 14 দিনের জন্য পুলিশে হেফাজতে পাওয়া গিয়েছে । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দু'জনের সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে । পাশাপাশি ধৃত স্বীকার করেছে খুন হওয়ার পর আলপনা রায়ের গলা এবং কান থেকে সোনার গয়নাও তারা চুরি করেছিল । সেগুলি পরে তারা বিক্রি করে দেয় । সেগুলিও ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ ।"