আসানসোল, 26 জুন: দীর্ঘদিন ধরে বনিবনা ছিল না । স্ত্রী বাপের বাড়িতে থাকছিলেন ৷ কিন্তু, হঠাৎ স্বামীর মত পরিবর্তন হয় ৷ স্ত্রী ও কন্যাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান ৷ আর তার জেরেই প্রাণ হারালেন গৃহবধূ ৷ রাস্তাতেই তাঁকে নৃশংসভাবে রড দিয়ে মেরে হত্যার অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে ৷ এমনকী বাবার নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি এক রত্তি মেয়েটিও ৷ যদিও সে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে ৷ শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের নিরসা বিধানসভার অন্তর্গত তিসরা থানার ওবি ড্যাম সংলগ্ন এলাকায় ৷ মৃত গৃহবধূর নাম সুনিতা শর্মা (36) ৷ তাঁর বাপের বাড়ি আসানসোলের বার্নপুরে ৷ অভিযুক্ত উমেশ শর্মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় 15 বছর আগে ধানবাদের উমেশ শর্মার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুনিতা শর্মার। তাদের এক মেয়েও আছে ৷ বর্তমানে উমেশ বিহারের বক্সারে থাকছিলেন ৷ দীর্ঘ কয়েকবছর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় সুনিতা আসানসোলের বার্নপুরের শান্তিনগর এলাকায় মেয়েকে নিয়ে থাকছিলেন ৷
সুনিতার দাদা লালবাবু শর্মা বলেন, "গত শনিবার উমেশ আমার বোনকে ফোন করেছিল ৷ পারিবারিক ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চায় বলে জানায় ৷ পুলিশ আমার বোনকে ডাকে থানায় বসে মিটমাট করে নেওয়ার জন্য ৷ এর আগেও দু-তিনবার ডাকা হয়েছিল, কিন্তু সুনিতা যায়নি ৷ কিন্তু, শনিবার বিকেলে সুনিতা মেয়েকে নিয়ে যায় ৷"
কিন্তু, সেটাই কাল হল সুনিতার জন্য ৷ লালবাবু শর্মা জানান, শনিবার বিকেলে, তাঁর বোন সুনিতা, মেয়ে সুনয়নাকে নিয়ে ধানবাদ পৌঁছন ৷ সেখানে উমেশ অপেক্ষা করছিলেন তাঁদের জন্য ৷ এরপর সুনিতা এবং তাঁর মেয়েকে একটি ভালো হোটেলে খাওয়ান উমেশ ৷ ভালো ব্যবহারও করেন ৷ এ সবই বোনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পেরেছিলেন লালবাবু ৷ বোনের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিন্ত ছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, এর কিছুক্ষণ পরেই সুনিতার ফোন বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান লালবাবু ৷
আরও পড়ুন: পথকুকুরদের খাবার দেওয়ায় রোষের মুখে তরুণী, ছুরি-ব্লেড নিয়ে হামলা দুষ্কৃতীদের
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এর পরেই ঘটে নৃশংস সেই ঘটনা ৷ উমেশ হোটেল থেকে গাড়ি ঘোরায় নিরসার দিকে ৷ পথে তিসরা থানা এলাকার ওবি ড্যাম সংলগ্ন একটি ফাঁকা জায়গায় সুনিতাকে রড দিয়ে পেটায় উমেশ ৷ সুনয়নাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে গলা টিপে মারার চেষ্টা করে অভিযুক্ত ৷ দু’জনেই জ্ঞান হারালে সেখান পালিয়ে যায় উমেশ শর্মা ৷ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সেখানেই মৃত্যু হয় সুনিতার ৷ যদিও, গভীর রাতে জ্ঞান ফিরে আসে সুনয়নার ৷ সে কোনও মতে লোকালয়ে পৌঁছায় ৷ সেখানে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা তাকে দেখে থানায় নিয়ে যায় ৷
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় বিয়েতে বাধা, দেরাদুনে 2 কন্যাসন্তানকে শ্বাসরোধ করে খুনে অভিযুক্ত বাবা !
পুলিশ ছোট্ট সুনয়নার কথা শুনে ওবি ড্যাম সংলগ্ন এলাকা থেকে সুনিতার দেহ উদ্ধার করে ৷ পাশাপাশি, সুনয়নাকে হাসপাতালে ভরতি করানো হয় ৷ রবিবার পুলিশের থেকে ঘটনার খবর পেয়ে তিসরা থানায় পৌঁছায় সুনিতার দাদা লালবাবু শর্মা ৷ তিনি বোনের দেহ শনাক্ত করেন ৷ সুনয়না এই মুহূর্তে তাঁর মামার কাছেই রয়েছেন ৷
লালবাবু শর্মা তিসরা থানায় বোনের খুনের অভিযোগে উমেশ শর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করিয়েছেন ৷ অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া যাওয়া পথে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে উমেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ জেরায় উমেশ তাঁর অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷