ETV Bharat / state

Dundi Cakes in Asansol: বড়দিনে স্কটিশ রানি মেরির স্মৃতি বিজড়িত ডুন্ডি কেকের আকাশছোঁয়া বাজার আসানসোলে

বড়দিনে স্কটিশ রানি মেরির (Scottish queen Mary) স্মৃতি বিজড়িত ডুন্ডি কেকের (Dundi Cakes in Asansol) আকাশছোঁয়া বাজার আসানসোলে ৷ 1757 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই সাহেবদের হাত ধরে আসানসোলে (Asansol News) আসে ডুন্ডি কেক ৷

Dundi Cakes in Asansol ETV Bharat
ডুন্ডি কেকের বাজার আসানসোলে
author img

By

Published : Dec 23, 2022, 6:50 PM IST

ডুন্ডি কেকের আকাশছোঁয়া বাজার আসানসোলে

আসানসোল, 23 ডিসেম্বর: শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যায় । বদলে যায় সময়কাল, বেশভূষা । বদলায় আচার-ব্যবহার, খাবার, সংস্কৃতি । কিন্তু জানলে আশ্চর্য হবেন ৷ 1800 শতাব্দীর স্কটিশ কেক আজও আসানসোলের বাজার মাতিয়ে রেখেছে । ইতিহাস ও নস্টালজিয়াকে সঙ্গে রাখতে আধুনিক কেক যতই বাজারে আসুক, প্রাচীন ডুন্ডি কেকের (Dundi Cakes in Asansol) বিক্রি আজও আকাশছোঁয়া আসানসোলের বাজারে । হ্যাঁ, হয়তো স্বাদ বদলেছে, কেক তৈরির উপকরণ বদলেছে । কিন্তু ব্রিটিশ সময়কালের সেই কেক আজও আইকনিক আসানসোলে ।

স্কটল্যান্ডের ডুন্ডি নামে একটি জায়গা আছে । যেখানে এই কেকের প্রচলন । স্কটল্যান্ডের রানি মেরির (Scottish queen Mary) স্মৃতিরক্ষার্থে ও তাঁর সম্মানেই এই ডুন্ডি কেক তৈরি শুরু হয় । যা স্কটিশ সাহেবদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে ওঠে । এই কেকের মূল উপাদান হিসেবে মেশানো হত স্কটিশ মল্ট হুইস্কি । এছাড়াও আমন্ড বাদাম, কালো ও সবুজ কিশমিশ অন্যান্য ফ্রুটসও থাকত । মুখে লেগে থাকার মতো ছিল সেই ডুন্ডি কেকের স্বাদ ।

1700 দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই আসানসোলে (Asansol News) শিল্প বিপ্লব শুরু হয়ে যায় । 1757 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল শুরুর মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই আসানসোল-রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হয় । কয়লাক্ষেত্রের প্রসারের জন্যই রেল-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয় । 1855 সালের 3 ফেব্রুয়ারি হাওড়া স্টেশন থেকে রেলপথ রানিগঞ্জ অবধি সম্প্রসারিত হয় । 1863 সালে রেলপথ আসানসোল পর্যন্ত প্রসারিত হয় । ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের হাত ধরেই আসানসোলে শুরু হয় প্রথম আধুনিক জীবনযাত্রা ।

রেল এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় বহু ইউরোপীয় চাকরি সূত্রে বসবাস শুরু করেন আসানসোলে । ব্রিটিশ বা ইংরেজ এবং স্কটিশ সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে বহু আর্মেনিয়ান এবং মিশনারিদের আগমন ঘটতে থাকে আসানসোলে । সেই সময় থেকেই সেখানে বড়দিনের উৎসব পালন শুরু হয় । কিন্তু স্কটিশ সাহেবরা হাপিত্যেশ করতেন, তাদের প্রিয় ডুন্ডি কেক খেতে না পারার জন্য । আর সাহেবদের সেই স্বাদ-বঞ্চনার হাল ফেরাতে উদ্যোগী হন তাঁদের বাড়ির গিন্নিরাই ।

আরও পড়ুন: কলকাতায় ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল শুরু একুশে, উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী

আসানসোলের বিশিষ্ট চিকিৎসক, লেখক এবং গবেষক তিলক পুরকায়স্থ জানান, স্কটিশ সাহেবদের গিন্নিরাই বাড়ির রাঁধুনিকে রেসিপি বলে দিয়ে বাড়িতেই তৈরি করান ডুন্ডি কেক । স্কটিশ মল্ট হুইস্কির ফ্লেভারে ডুন্ডি কেকের একই স্বাদ পেয়ে সাহেবরাও খুশি হলেন গিন্নিদের উপর । কিন্তু কোনও ভাবে এই রেসিপি বাইরে চলে আসে । মনে করা হয়, এদেশীয় পাচকদের দ্বারাই সেই কেকের রেসিপি বাইরে আসে । আর সাহেবদের কাছে এই কেকের বিরাট চাহিদা জেনে আসানসোলে পরপর বেশ কয়েকটি বেকারি তৈরি হয় । মেহের আলি বক্সের দোকান শুরু হয় 1880 সালে । 1888 সালে চালু হয় আবদুল ওয়াহিদের দোকান, যা আজকের দিনে শরিকি ভাগে হয়ে দাঁড়িয়েছে "ওয়াহিদ অ্যান্ড সনস"। কিছু পরে তৈরি হয় 'মিনার কনফেকশনারি"।

তিলক পুরকায়স্থ জানান, "একদা খোদ স্কটিশ সাহেবেদের বাড়িতে তৈরি ডুন্ডি কেক আসানসোলের বেকারিতে সেভাবেই খেজুর, কিসমিস, অরেঞ্জ জেস্ট, আখরোট, মোরব্বা আর আমন্ড ডেকরেশন দিয়ে তৈরি হত ৷ সঙ্গে মেশানো হত বিলেত থেকে ইম্পোর্টেড স্কটিশ মল্ট হুইস্কি । কালের নিয়মে সাহেবরা চলে গেলে, দাম অনেক বেশি হওয়ায় ইম্পোর্টেড স্কটিশ হুইস্কির জায়গায় ব্যবহার করা শুরু হয় ব্র্যান্ডি, কখনও শেরি । ব্র্যান্ডি ব্যবহারের একটি সুবিধা ছিল ৷ এ দেশের লোকেদের মনে 'ডক্টরস ব্র্যান্ডি' নামক একটি ব্র্যান্ডের ওষধি হিসাবে প্রচলন থাকায়, ব্র্যান্ডি নিয়ে ছুৎমার্গ কিছু কম ছিল । কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর সময়ে অবশ্য দাম এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে সবের ব্যবহারও বাদ হয়ে গেল । তাই মদিরা বিনা ডুন্ডি কেক এখন তৈরি হলেও ফ্রুট বা রিচ প্ল্যাম কেকই বর্তমান বড়দিন ও নতুন বছরের বাজার ধরে রেখেছে ।"

আর সেই স্বাদ নেই । নেই সঠিক তৈরির পদ্ধতিও । কিন্তু ইতিহাস আঁকড়ে ও নস্টালজিয়ায় ভাসতে আজও বড়দিনে ফ্রুট কেকের বিরাট বিক্রি হয় আসানসোলে । স্কটিশ ডুন্ডি কেকের সেই টানে আজও ভাসে আসানসোল।

ডুন্ডি কেকের আকাশছোঁয়া বাজার আসানসোলে

আসানসোল, 23 ডিসেম্বর: শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যায় । বদলে যায় সময়কাল, বেশভূষা । বদলায় আচার-ব্যবহার, খাবার, সংস্কৃতি । কিন্তু জানলে আশ্চর্য হবেন ৷ 1800 শতাব্দীর স্কটিশ কেক আজও আসানসোলের বাজার মাতিয়ে রেখেছে । ইতিহাস ও নস্টালজিয়াকে সঙ্গে রাখতে আধুনিক কেক যতই বাজারে আসুক, প্রাচীন ডুন্ডি কেকের (Dundi Cakes in Asansol) বিক্রি আজও আকাশছোঁয়া আসানসোলের বাজারে । হ্যাঁ, হয়তো স্বাদ বদলেছে, কেক তৈরির উপকরণ বদলেছে । কিন্তু ব্রিটিশ সময়কালের সেই কেক আজও আইকনিক আসানসোলে ।

স্কটল্যান্ডের ডুন্ডি নামে একটি জায়গা আছে । যেখানে এই কেকের প্রচলন । স্কটল্যান্ডের রানি মেরির (Scottish queen Mary) স্মৃতিরক্ষার্থে ও তাঁর সম্মানেই এই ডুন্ডি কেক তৈরি শুরু হয় । যা স্কটিশ সাহেবদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে ওঠে । এই কেকের মূল উপাদান হিসেবে মেশানো হত স্কটিশ মল্ট হুইস্কি । এছাড়াও আমন্ড বাদাম, কালো ও সবুজ কিশমিশ অন্যান্য ফ্রুটসও থাকত । মুখে লেগে থাকার মতো ছিল সেই ডুন্ডি কেকের স্বাদ ।

1700 দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই আসানসোলে (Asansol News) শিল্প বিপ্লব শুরু হয়ে যায় । 1757 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল শুরুর মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই আসানসোল-রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হয় । কয়লাক্ষেত্রের প্রসারের জন্যই রেল-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয় । 1855 সালের 3 ফেব্রুয়ারি হাওড়া স্টেশন থেকে রেলপথ রানিগঞ্জ অবধি সম্প্রসারিত হয় । 1863 সালে রেলপথ আসানসোল পর্যন্ত প্রসারিত হয় । ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের হাত ধরেই আসানসোলে শুরু হয় প্রথম আধুনিক জীবনযাত্রা ।

রেল এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় বহু ইউরোপীয় চাকরি সূত্রে বসবাস শুরু করেন আসানসোলে । ব্রিটিশ বা ইংরেজ এবং স্কটিশ সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে বহু আর্মেনিয়ান এবং মিশনারিদের আগমন ঘটতে থাকে আসানসোলে । সেই সময় থেকেই সেখানে বড়দিনের উৎসব পালন শুরু হয় । কিন্তু স্কটিশ সাহেবরা হাপিত্যেশ করতেন, তাদের প্রিয় ডুন্ডি কেক খেতে না পারার জন্য । আর সাহেবদের সেই স্বাদ-বঞ্চনার হাল ফেরাতে উদ্যোগী হন তাঁদের বাড়ির গিন্নিরাই ।

আরও পড়ুন: কলকাতায় ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল শুরু একুশে, উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী

আসানসোলের বিশিষ্ট চিকিৎসক, লেখক এবং গবেষক তিলক পুরকায়স্থ জানান, স্কটিশ সাহেবদের গিন্নিরাই বাড়ির রাঁধুনিকে রেসিপি বলে দিয়ে বাড়িতেই তৈরি করান ডুন্ডি কেক । স্কটিশ মল্ট হুইস্কির ফ্লেভারে ডুন্ডি কেকের একই স্বাদ পেয়ে সাহেবরাও খুশি হলেন গিন্নিদের উপর । কিন্তু কোনও ভাবে এই রেসিপি বাইরে চলে আসে । মনে করা হয়, এদেশীয় পাচকদের দ্বারাই সেই কেকের রেসিপি বাইরে আসে । আর সাহেবদের কাছে এই কেকের বিরাট চাহিদা জেনে আসানসোলে পরপর বেশ কয়েকটি বেকারি তৈরি হয় । মেহের আলি বক্সের দোকান শুরু হয় 1880 সালে । 1888 সালে চালু হয় আবদুল ওয়াহিদের দোকান, যা আজকের দিনে শরিকি ভাগে হয়ে দাঁড়িয়েছে "ওয়াহিদ অ্যান্ড সনস"। কিছু পরে তৈরি হয় 'মিনার কনফেকশনারি"।

তিলক পুরকায়স্থ জানান, "একদা খোদ স্কটিশ সাহেবেদের বাড়িতে তৈরি ডুন্ডি কেক আসানসোলের বেকারিতে সেভাবেই খেজুর, কিসমিস, অরেঞ্জ জেস্ট, আখরোট, মোরব্বা আর আমন্ড ডেকরেশন দিয়ে তৈরি হত ৷ সঙ্গে মেশানো হত বিলেত থেকে ইম্পোর্টেড স্কটিশ মল্ট হুইস্কি । কালের নিয়মে সাহেবরা চলে গেলে, দাম অনেক বেশি হওয়ায় ইম্পোর্টেড স্কটিশ হুইস্কির জায়গায় ব্যবহার করা শুরু হয় ব্র্যান্ডি, কখনও শেরি । ব্র্যান্ডি ব্যবহারের একটি সুবিধা ছিল ৷ এ দেশের লোকেদের মনে 'ডক্টরস ব্র্যান্ডি' নামক একটি ব্র্যান্ডের ওষধি হিসাবে প্রচলন থাকায়, ব্র্যান্ডি নিয়ে ছুৎমার্গ কিছু কম ছিল । কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর সময়ে অবশ্য দাম এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে সবের ব্যবহারও বাদ হয়ে গেল । তাই মদিরা বিনা ডুন্ডি কেক এখন তৈরি হলেও ফ্রুট বা রিচ প্ল্যাম কেকই বর্তমান বড়দিন ও নতুন বছরের বাজার ধরে রেখেছে ।"

আর সেই স্বাদ নেই । নেই সঠিক তৈরির পদ্ধতিও । কিন্তু ইতিহাস আঁকড়ে ও নস্টালজিয়ায় ভাসতে আজও বড়দিনে ফ্রুট কেকের বিরাট বিক্রি হয় আসানসোলে । স্কটিশ ডুন্ডি কেকের সেই টানে আজও ভাসে আসানসোল।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.