ETV Bharat / state

লকডাউন ও রেলের নয়া নীতির জাঁতাকলে বন্ধ স্কুল, নেশার অন্ধকারে শৈশব

রেল স্টেশনে থাকা শিশু ও কিশোরদের মূলস্রোতে ফেরাতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছিল বিশেষ স্কুল "মুক্তাঙ্গন"। বর্তমানে যা রেলের নীতি বদল ও লকডাউনে বন্ধ। ফলে, ফের নেশার অন্ধকারে ডুবেছে শৈশব। দায় এড়াচ্ছেন সকলেই।

author img

By

Published : May 21, 2020, 12:21 PM IST

special-school-closed-at-asansol-station
আসানসোল

আসানসোল, 20 মে: একদিকে রেলের নীতি বদল, অন্যদিকে লকডাউন। আর এই দুইয়ের জাঁতাকলে হারাচ্ছে শৈশব। রেল স্টেশনে থাকা কিশোররা নেশার অন্ধকারে ডুবছে। তাদেরকে মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য তৈরি হওয়া "মুক্তাঙ্গন" স্কুল বন্ধ। বর্তমানে সেই স্কুলের ভেতরেই নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকছে কিশোররা। এই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার উপায় কী, সমাজকর্মী থেকে রেল প্রশাসন সকলেই দায় এড়াচ্ছেন।

2004 সালে তৈরি হয়েছিল আসানসোল রেল স্টেশনে মুক্তাঙ্গন নামের একটি স্কুল। মূলত ঘর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশু-কিশোর, যারা স্টেশনেই আশ্রয় নিত, ভিক্ষে করত, তাদেরকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতেই মুক্তাঙ্গন স্কুলটি তৈরি করা হয়। রেলের তরফে স্কুল তৈরি করা হলেও এই স্কুলের মিড ডে মিল আসানসোল পৌরনিগমের পক্ষ থেকে দেওয়া হত। প্রকল্পটির দায়িত্বে ছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দীর্ঘদিন পরিবার থেকে বিচ্যুত কিংবা রেলস্টেশনের আশেপাশে থাকা দুস্থ পরিবারের শিশু ও কিশোররা অনেকেই এই স্কুলে পঠন-পাঠন করে নাচ গান ইত্যাদি শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। পরিবার বিচ্ছিন্নরা অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে। কেউ কেউ গিয়েছে সরকারি হোমে। এই শিশুদের মধ্যে অনেকেই পড়াশুনা বা অন্য শিক্ষা পেয়ে নজরকাড়া সাফল্যও এনেছে অতীতে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অক্লান্ত পরিশ্রমে শিশুদের মানসিকতার বদল ঘটেছিল। যে সমস্ত শিশুরা ড্রাগের নেশার অন্ধকারে তলিয়ে যেতে শুরু করেছিল, তাদের কাউন্সিলিং করে, মানসিকতায় বদল এনে ধীরে ধীরে মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কাজ চলছিল। কিন্তু, এরই মধ্যে বাধ সাধল রেলের নীতি। নীতিগত কারণে চাইল্ড লাইন তৈরি করা হল রেলের তরফে। সিদ্ধান্ত হল, স্টেশন চত্বরে থাকা সব শিশুদের হয় ফিরিয়ে দিতে হবে পরিবারে কিংবা তাদের হোমে পাঠানো হবে। ফলে স্টেশনে স্কুলের প্রয়োজনীয়তা আর রইল না। আসানসোল স্টেশনের মুক্তাঙ্গনও বন্ধ হয়ে গেল। শিশু-কিশোরদের যাদের পরিবারের হদিস পাওয়া যায়নি রেলে নয়া নীতি অনুযায়ী তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হল হোমে। কিন্তু, যে সমস্ত শিশু ও কিশোররা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা, যাদের পরিবার এবং ঘর রয়েছে তারা কিন্তু সেই স্টেশনেই থেকে গেল সারাদিন। স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে তারা ফের তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নেশার অন্ধকারে।

special-school-closed-at-asansol-station
"মুক্তাঙ্গন" বন্ধ হতেই অন্ধকারে শৈশব।

কিশোররা নিজেরাই জানাচ্ছে, স্কুল যখন চলত তখন তারা দিদিদের কাছে পড়াশুনো করত। তাদের রোজ স্নান করানো হত। খাবার দেওয়া হত। তখনই ভালো ছিল তারা। বর্তমানে স্কুল বন্ধ। এখন স্কুলের পাঁচিল ডিঙিয়ে ভিতরে ঢোকে তারা। সেখানেই নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে 15 থেকে 20 জন কিশোর। কোনও কোনও দিন RPF খেতে দিলে খাবার জোটে। এমনিতে লকডাউনের কারণে ট্রেন নেই, ভিক্ষেও মেলে না। তাই খাবারও নেই।

আসানসোল রেল ডিভিশনের RPF কমান্ড্যান্ট চন্দ্রমোহন মিশ্র জানান, বর্তমানে লকডাউনের কারণে প্যাসেঞ্জার ট্রেন আসছে না। ফলে বাচ্চাদের রেসকিউ করার কাজ বন্ধ আছে। তাছাড়া রেলের চাইল্ডলাইন হয়েছে। তারাই বাচ্চাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করবে। তবে, স্কুলটির সংস্কার করে আগামী দিনে আবার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো করানো যায় কি না সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।

আসানসোল, 20 মে: একদিকে রেলের নীতি বদল, অন্যদিকে লকডাউন। আর এই দুইয়ের জাঁতাকলে হারাচ্ছে শৈশব। রেল স্টেশনে থাকা কিশোররা নেশার অন্ধকারে ডুবছে। তাদেরকে মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য তৈরি হওয়া "মুক্তাঙ্গন" স্কুল বন্ধ। বর্তমানে সেই স্কুলের ভেতরেই নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকছে কিশোররা। এই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার উপায় কী, সমাজকর্মী থেকে রেল প্রশাসন সকলেই দায় এড়াচ্ছেন।

2004 সালে তৈরি হয়েছিল আসানসোল রেল স্টেশনে মুক্তাঙ্গন নামের একটি স্কুল। মূলত ঘর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশু-কিশোর, যারা স্টেশনেই আশ্রয় নিত, ভিক্ষে করত, তাদেরকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতেই মুক্তাঙ্গন স্কুলটি তৈরি করা হয়। রেলের তরফে স্কুল তৈরি করা হলেও এই স্কুলের মিড ডে মিল আসানসোল পৌরনিগমের পক্ষ থেকে দেওয়া হত। প্রকল্পটির দায়িত্বে ছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দীর্ঘদিন পরিবার থেকে বিচ্যুত কিংবা রেলস্টেশনের আশেপাশে থাকা দুস্থ পরিবারের শিশু ও কিশোররা অনেকেই এই স্কুলে পঠন-পাঠন করে নাচ গান ইত্যাদি শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। পরিবার বিচ্ছিন্নরা অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে। কেউ কেউ গিয়েছে সরকারি হোমে। এই শিশুদের মধ্যে অনেকেই পড়াশুনা বা অন্য শিক্ষা পেয়ে নজরকাড়া সাফল্যও এনেছে অতীতে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অক্লান্ত পরিশ্রমে শিশুদের মানসিকতার বদল ঘটেছিল। যে সমস্ত শিশুরা ড্রাগের নেশার অন্ধকারে তলিয়ে যেতে শুরু করেছিল, তাদের কাউন্সিলিং করে, মানসিকতায় বদল এনে ধীরে ধীরে মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কাজ চলছিল। কিন্তু, এরই মধ্যে বাধ সাধল রেলের নীতি। নীতিগত কারণে চাইল্ড লাইন তৈরি করা হল রেলের তরফে। সিদ্ধান্ত হল, স্টেশন চত্বরে থাকা সব শিশুদের হয় ফিরিয়ে দিতে হবে পরিবারে কিংবা তাদের হোমে পাঠানো হবে। ফলে স্টেশনে স্কুলের প্রয়োজনীয়তা আর রইল না। আসানসোল স্টেশনের মুক্তাঙ্গনও বন্ধ হয়ে গেল। শিশু-কিশোরদের যাদের পরিবারের হদিস পাওয়া যায়নি রেলে নয়া নীতি অনুযায়ী তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হল হোমে। কিন্তু, যে সমস্ত শিশু ও কিশোররা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা, যাদের পরিবার এবং ঘর রয়েছে তারা কিন্তু সেই স্টেশনেই থেকে গেল সারাদিন। স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে তারা ফের তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নেশার অন্ধকারে।

special-school-closed-at-asansol-station
"মুক্তাঙ্গন" বন্ধ হতেই অন্ধকারে শৈশব।

কিশোররা নিজেরাই জানাচ্ছে, স্কুল যখন চলত তখন তারা দিদিদের কাছে পড়াশুনো করত। তাদের রোজ স্নান করানো হত। খাবার দেওয়া হত। তখনই ভালো ছিল তারা। বর্তমানে স্কুল বন্ধ। এখন স্কুলের পাঁচিল ডিঙিয়ে ভিতরে ঢোকে তারা। সেখানেই নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে 15 থেকে 20 জন কিশোর। কোনও কোনও দিন RPF খেতে দিলে খাবার জোটে। এমনিতে লকডাউনের কারণে ট্রেন নেই, ভিক্ষেও মেলে না। তাই খাবারও নেই।

আসানসোল রেল ডিভিশনের RPF কমান্ড্যান্ট চন্দ্রমোহন মিশ্র জানান, বর্তমানে লকডাউনের কারণে প্যাসেঞ্জার ট্রেন আসছে না। ফলে বাচ্চাদের রেসকিউ করার কাজ বন্ধ আছে। তাছাড়া রেলের চাইল্ডলাইন হয়েছে। তারাই বাচ্চাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করবে। তবে, স্কুলটির সংস্কার করে আগামী দিনে আবার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো করানো যায় কি না সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.