দুর্গাপুর, 26 ডিসেম্বর: কোভিড প্যানডেমিকের (Covid Pandemic) সময় অক্সিজেনের (Oxygen) অভাব সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল ৷ অক্সিজেনের অভাবে অনেকের মৃত্যুও হয় বলে অভিযোগ ওঠে সেই সময় ৷ এছাড়া অক্সিজেনের সিলিন্ডারের (Oxygen Cylinder) কালোবাজারির অভিযোগ তো ছিলই ৷ পরিস্থিতি সামলাতে দেশের বিভিন্ন অংশে কেন্দ্র ও রাজ্য অক্সিজেন প্ল্যান্ট (Oxygen Plant) তৈরি করেছিল ৷
নতুন করে করোনা সংক্রমণ (Covid Infection) বাড়তে থাকায়, সেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র ও রাজ্য ৷ প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্ল্যান্টগুলিকে ৷ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে অক্সিজেনের ঘাটতি যাতে কোনভাবেই না হয়, তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা আবার জারি করা হয়েছে । বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কেন্দ্রের তরফে এই নিয়ে মকড্রিলের পরিকল্পনা করা হয়েছে ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা (DSP) নিজস্ব একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ইস্পাত কারখানা লাগোয়া একটি আলাদা অক্সিজেন উৎপাদন কারখানা রয়েছে দীর্ঘকাল । সেই সময় যখন অক্সিজেনের চূড়ান্ত ঘাটতি দেখা দিয়েছিল গোটা দেশে, তখন দুর্গাপুর থেকে রেলপথে রেকে করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানো হয়েছিল । তারপরে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে (Durgapur Hospital) অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করা হয় । প্রতি ঘণ্টায় 500টি সিলিন্ডার অক্সিজেন ভর্তি করা যাবে, এমন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্ট তৈরি হয় সেখানে ।
নয়া নির্দেশিকার পর ইটিভি ভারতের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ৷ সেখানে অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলি কতটা তৈরি, তার খোঁজ নেওয়া হয় ৷ সোমবার এই নিয়ে কথা বলা হয় দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সহকারি সুপার শ্রীরূপা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ।
ডিএসপির পিআরও বেদবন্ধু রায় বলেন, "কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমরা নির্দেশিকা পেয়েছি । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নিজস্ব যে অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে, তাতে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে । এর আগেও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কোভিডের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পক্ষ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানো হয়েছিল । নতুন নির্দেশিকার পরে অক্সিজেন প্ল্যান্ট সম্পূর্ণরূপে তৈরি । পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি আমরা সবাই ।"
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সহকারি সুপার ড. শ্রীরূপা চট্টোপাধ্যায় বলেন, "অক্সিজেনের ঘাটতি হাসপাতালগুলিতে সত্যি দেখা দিয়েছিল সেই সময় । যদিও তখন বেসরকারি একটি হাসপাতালে সরকারিভাবে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা করার সুযোগ করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার । পরবর্তীতে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছিল আলাদা করে । সেই সময় গড়ে প্রতিদিন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালেই শুধুমাত্র 80 থেকে 100টা পর্যন্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগছিল । আমাদের হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর পরে এখানে প্রতি ঘণ্টায় 500টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ভর্তি করা যাবে । সুতরাং আর অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না ।"
কোভিডের নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট (Covid New Variant) তাতে কিন্তু শ্বাসকষ্ট হওয়ার কথা জানাচ্ছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা । আর সেক্ষেত্রে অক্সিজেন যে অত্যন্ত জরুরি, তাও বলছেন চিকিৎসকরা । স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর তাই অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলিকে সচল রাখার এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রাখার নির্দেশিকা জারি করেছে । তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে যেভাবে দ্রুত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি জেলায় জেলায় যেভাবে অক্সিজেন প্লান্ট বসিয়েছে, তাতে একটা কথা স্পষ্ট অক্সিজেনের অভাবে আর কোভিড রোগীদের মৃত্যু এমন সম্ভাবনা হয়তো আর দেখা দেবে না ।
আরও পড়ুন: গয়ায় করোনা আক্রান্ত 4 বিদেশি, দলাই লামার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন তাঁরা