আসানসোল, 29 অগাস্ট : আর মাত্র দুই মাস । তারপরই দুর্গাপুজো । অথচ এই কোরোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে সুরক্ষার সঙ্গে দুর্গাপুজো পালন করা যায়, সেই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়নি । যার কারণে দিশেহারা পুজো কমিটিগুলি । তারা কী করবেন কীভাবে মণ্ডপ বানাবেন বা প্রতিমা করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না । আর বেশি দেরি হলে কোনও কিছুর বায়না করা যাবে না । ফলে কার্যত বাধ্য হয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা উৎসব সমন্বয় কমিটি প্রশাসনের কাছে নিজেরাই প্রস্তাব পাঠালেন। যদিও সেই প্রস্তাব পাঠানোর পরেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই ।
অন্যান্যবার যেখানে অগাস্ট মাসের শেষ থেকেই মণ্ডপসজ্জার কাজ শুরু হয়ে যায় সেখানে এ বছর প্রতিটি পূজা মণ্ডপের স্থানেই ফাঁকা মাঠ । কোনও জায়গাতেই কোনও প্রস্তুতি চোখে পড়ছে না । আসানসোলের অন্যতম বৃহত্তম পুজো রাধানগর রোড অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজো । মণ্ডপের জায়গায় আগাছা জঙ্গল হয়েছে । সেই জঙ্গল কেটে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই ৷ কিন্তু মণ্ডপসজ্জায় এখনও পর্যন্ত হাত দিতে পারেনি রাধানগর রোড অ্যাথলেটিক ক্লাবের সদস্যরা । ক্লাবের সদস্য অসীম সরকার জানান, "খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে আমাদের দিন কাটছে । সরকার কোনও নির্দেশিকা এখনও পর্যন্ত জারি করেনি । তাই আমরাও মণ্ডপসজ্জা কিংবা প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি । আমরা একটা অদ্ভুত প্যানডেমিক অবস্থার মধ্যে যাচ্ছি, এটা যেমন সত্যি । তেমনি বাঙালির আবেগের মধ্যে মিশে আছে দুর্গাপুজো । যা বন্ধ করে দেওয়া যায় না । কিন্তু সুরক্ষার সঙ্গে কীভাবেই বা দুর্গাপুজো করা যায় সেটা যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে নির্দেশিকা জারি করে দিত, তাহলে আমরা কাজে হাত দিতে পারতাম । এরপর অনেক দেরি হয়ে যাবে । কী করে পুজো করব সেটাই ভেবে উঠতে পারছি না ।"
একই অবস্থা রবীন্দ্রনগর পুজো কমিটি বা কোর্ট রোড কমিটির । মণ্ডপ তো দূরের কথা কোনও প্রস্তুতিই এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি আসানসোলের বৃহত্তম এই দুটি পুজোয় । বলাই বাহুল্য পূজামণ্ডপের মাঠে গবাদি পশু ঘুরছে । আসানসোলের আরও অন্য দুটি বড় পুজো হল কল্যাণপুরকে সেক্টরের পুজো এবং কল্যাণপুর আদি দুর্গাপুজো । সেখানেও ধু ধু ফাঁকা মাঠ । থিমের পুজো করতে অন্যান্য বছর যেখানে প্রতিযোগিতা লড়াই লাগে, কোন পুজো ছিনিয়ে নেবে সেরার শিরোপা, এ বছর সে সবের বালাই নেই । কী করে পুজো হবে সেই চিন্তায় পুজো কমিটির সদস্যরা । প্রশাসনের তরফে নির্দেশিকা নেই, বাধ্য হয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা উৎসব সমন্বয় কমিটি নিজেরাই একটি প্রস্তাব বানিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে দিয়েছেন । ওই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক উৎপল রায়চৌধুরি জানান, " আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি মূর্তি ছোটো করতে হবে, যাতে বেশি মানুষের প্রয়োজন না হয় মূর্তি তোলা নামানোর ক্ষেত্রে । প্যান্ডেল খোলা করতে হবে যাতে ঠাকুর দেখতে প্যান্ডেলের ভিতরে না যেতে হয় । স্যানিটাইজ়ার ট্যানেল গেট ও মাস্ক কিয়স্ক করতে হবে । ভোগ বিতরণ বন্ধ করতে হবে । বিসর্জনে কোনও শোভাযাত্রা করা যাবে না । এরকম আরও বেশকিছু সুরক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের প্রস্তাব পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে দুর্গাপুর, আসানসোলের মেয়র ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে রেখেছি । আমরা অনুরোধ করেছি এই পরিস্থিতিতে অনুমতির বিষয়টিকে সরলীকরণ করা হোক । শিবির করার প্রয়োজন নেই । "
যদিও এই প্রস্তাব পাঠানোর পরে এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের জেলা শাসকের কাছে জানতে চাইলে তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ হয়নি। আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক কথা পৌর কমিশনার খুরশিদ আলি কাদরি টেলিফোনে জানিয়েছেন "এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশিকা জারি করবে এবং পুজো কমিটিগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হবে।"