রানিগঞ্জ, 18 জানুয়ারি: জোশীমঠের ঘটনার (Joshimath Crisis) পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের অন্তর্গত রানিগঞ্জ কয়লা খনি এলাকাতেও ঘটে যেতে পারে একই ধরনের বিপর্যয় (Mamata Banerjee concern over Raniganj Coal Field) ৷ তথ্য বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর এই আশঙ্কা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয় ৷ কারণ, ইতিমধ্যেই এমন বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন এলাকার বাসিন্দারা ৷ বহু বাড়ি ধসে গিয়েছে ৷ ঘটেছে মৃত্যুর ঘটনাও ৷ অথচ, তারপরও মেলেনি ন্যায্য পুনর্বাসন ৷ তাই, এখনও আসানসোল ও রানিগঞ্জ কয়লা খনি এলাকার প্রায় 50 হাজার মানুষের দিন কাটে শঙ্কায় ৷ বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ নিয়ে রাজনীতি হয় বিস্তর ৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না ৷
দিনটা ছিল 1997 সালের 13 জুন ৷ ডেপুটি জেনারেল অফ মাইনস সেফটির পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ৷ তাতে জানানো হয়, ব্যাপক কয়লা খননের কারণে রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলের অন্তর্গত 146টি মৌজা ধস কবলিত ও বিপজ্জনক ৷ এর মধ্যে সাতটি মৌজায় রয়েছে রেলপথ, রাস্তা ও তেলের পাইপলাইন ৷ তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলির দিক পরিবর্তন করতে হবে ৷ বাকি 139টি মৌজার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিতে হবে ৷
আরও পড়ুন: 'ওঁকে আগে কয়লাচুরি বন্ধ করাতে বলুন !' রানিগঞ্জ নিয়ে মমতাকে জবাব দিলীপের
এই বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে আসানসোলের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায় দাবি করেন, পুনর্বাসনের যাবতীয় খরচ বহন করতে হবে ইসিএলকে ৷ সে বছরই তিনি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে 1999 সালে ইসিএল পুনর্বাসনের একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে ৷ মোট 2 হাজার 610 কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয় ধস কবলিতদের পুনর্বাসনের জন্য ৷ নির্দিষ্টভাবে জানানো হয়, রানিগঞ্জের নিমচা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা, জামুড়িয়ার কেন্দা, ধসল, বেলবাঁধ, ছাতিমডাঙা এবং সালানপুরের সংগ্রামগড়-সহ বহু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ধস কবলিত অঞ্চলের মধ্যে পড়ছে ৷
মাস্টার প্ল্য়ান অনুসারে ঠিক করা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেবে ইসিএল ৷ পুনর্বাসন প্রকল্পপের নোডাল এজেন্ট হয়ে কাজ করবে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (Asansol Durgapur Development Authority) বা আড্ডা (ADDA) ৷ বাম আমলে তৎকালীন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী এডিডিএ-র চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু ধস কবলিতদের চিহ্নিত করতে এবং তাঁদের পরিচয়পত্র প্রদান করতেই বহু সময় কেটে যায় ৷ এরই মাঝে রাজ্যে পালাবদল হয় ৷ আড্ডার চেয়ারম্যান হন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা ছিল, তেমনটা হয়নি ৷
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তাপস জানান, "জামুড়িয়া ও সালানপুরের ধস কবলিতদের পুনর্বাসনের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছে ৷ কিন্তু টাকা না আসায় কাজের গতি বাড়ছে না ৷" অন্যদিকে, প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, "এই বিষয়ে কেন্দ্র যেমন উদাসীন, তেমনই রাজ্য সরকারও পূনর্বাসন দিতে ব্যর্থ ৷" আর বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির বক্তব্য হল, "মুখ্যমন্ত্রী একদম ঠিক বলেছেন ৷ জোশীমঠের মত ঘটনা ঘটতে পারে রানিগঞ্জেও ৷ কিন্তু, কেন্দ্র টাকা দেওয়া সত্ত্বেও কেন এখানে পুনর্বাসনের কাজ এগোয়নি, তার জবাব তো রাজ্যকেই দিতে হবে ৷"
এই পরিস্থিতি নিয়ে 'ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স'-এর সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ খৈতানের সঙ্গেও কথা বলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ তিনি বলেন, "আমরা রানিগঞ্জ ছেড়ে কোথাও যাব না ৷ এটি একটি প্রাচীন শহর ৷ সরকারকেই ঠিক করতে হবে আমাদের কীভাবে নিরাপদে রাখবে ৷ বিদেশে এই ধরনের খননের পর মাটির নীচে ফাঁকা অংশ বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভর্তি করে দেওয়া হয় ৷ যাতে সেখানে ধস না নামে ৷ সেভাবেই রানিগঞ্জকেও রক্ষা করুক সরকার ৷"
কিন্তু, সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছিল বহু বছর আগে ৷ সেই বরাদ্দ টাকায় এখনকার দিনে আবাসন নির্মাণ করা সম্ভব নয় ৷ বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে ৷ এ নিয়ে কয়লা মন্ত্রকও নতুন করে ভাবনা, চিন্তা শুরু করেছে ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রানিগঞ্জ, আসানসোল কয়লা খনি এলাকার মানুষকে পুনর্বাসন দিতে হলে রাজ্য ও কেন্দ্রকে মিলিতভাবেই কাজ করতে হবে ৷