বেলডাঙা, (মুর্শিদাবাদ), 13 অগস্ট : লড়ঝড়ে সাইকেলে বড় মাপের ব্যাগ । সেই ব্যাগে থরে থরে অমর্ত্য সেন , কার্ল মার্কস , জন রিড - কে নেই ! যাঁকে চাইবেন, চঞ্চল ঘোষ ব্যাগ থেকে বের করে আপনাকে দিয়ে দেবেন । সশরীরে নয়, নিজেদের লেখা বইয়ের মাধ্যমেই ওই সব মনীষী থাকেন চঞ্চলের ব্যাগে । অর্ডার দিলেও বই এনে দেন চঞ্চল । এমনকী , দোকানের মতো মাসকাবারি হিসেবে ধারবাকিতেও বই বিক্রি করেন ।
দোকানের মতো নয়, আসলে চঞ্চল ঘোষ নিজেই হলেন একটি আস্ত চলমান বইয়ের দোকান । হ্যাঁ, বহরমপুরের চলমান বুকস্টোর (Baharmpur Mobile Book Store) । এভাবেই টানা 30 বছরেরও বেশি বই বিক্রি করে চলেছেন । শুধু নিজের জেলা মুর্শিদাবাদেই নয়, বাংলার বিভিন্ন জেলায় চঞ্চল বইভর্তি ব্যাগ নিয়ে হাজির হন । অনলাইনের যুগেও চঞ্চলের বই বিক্রি বেড়েছে বই কমেনি । প্রবীণরা তো কেনেনই, নবীন প্রজন্ম, বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়িয়ারাও বই কিনছেন চঞ্চলের কাছ থেকে ।
চঞ্চলের বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় । বরাবরই বাম মনোভাবাপন্ন মানুষ । কাছ থেকে দেখেছেন বেলডাঙার আরএসপি (RSP) নেতা তিমির ভাদুড়ী থেকে বহরমপুরের দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের । 26 বছর বয়স থেকে বই বিক্রি শুরু করেন । সাইকেলে বইভর্তি ব্যাগ নিয়ে চক্কর দিতেন বেলডাঙা, বহরমপুর, লালবাগ সর্বত্র । সেদিনের সেই যুবক এখন ষাটোর্ধ । এখন আর বেলডাঙা থেকে সরাসরি সাইকেলে বহরমপুর আসতে পারেন না । সকাল সাড়ে 10 টার মধ্যে ট্রেনে করে বহরমপুর স্টেশনে নেমে ভাড়ার সাইকেলে চেপে শুরু হয় তাঁর বহরমপুরের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া । পরিচিত মানুষেরা ফোন করে বইয়ের কথা বলে দিলে বাড়িতেই পৌঁছে দিয়ে আসেন ।
এছাড়া বহরমপুর রবীন্দ্রসদন, শহরের বিভিন্ন কলেজের সামনে গিয়েও বই নিয়ে দাঁড়ালে বিক্রি হয় । চঞ্চলের কোন বইয়ের চাহিদা বেশি ? উত্তর, ‘‘বিজেপি (BJP) , আরএসএস (RSS) বিরোধী বইয়ের চাহিদা রয়েছে । আর বামপন্থী বই তো বিক্রি হয়ই । নাটকের বইয়ের অর্ডার দেন অনেকেই । নানা বিষয়ের প্রবন্ধের বইয়ের চাহিদাও বাড়ছে ।’’ চঞ্চল জানালেন, বইয়ের দামও বেড়েছে । ফলে অনেকের ইচ্ছে থাকলেও বই কিনতে পারেন না । সেজন্য ধারবাকিতেও বই বিক্রি করেন । মাসকাবারে টাকা নেন । অনেকেই এভাবে নিচ্ছেন । এতে বই বিক্রিও হচ্ছে ।
অকৃতদার চঞ্চল বেলডাঙায় থাকেন তাঁর দুই দিদির কাছে । বই বিক্রি তাঁর নেশা । পেশাও । বহরমপুরের সবাই একডাকে চেনেন চলমান বুকস্টোর চঞ্চলকে । চঞ্চল বলেন , ‘‘সবাই ভালবাসেন । আমিও যেন আজীবন বই বিক্রি করে যেতে পারি , মানুষের কাছে জীবনের শেষ দিনেও বই পৌঁছে দিতে পারি ।’’
চঞ্চল ঘোষ শুধু চলমান বুকস্টোর নন, চাহিদা আর পছন্দমতো বই মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে কৃতজ্ঞতা পাশে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখছেন তাঁর ‘পাঠকদের’ ।
আরও পড়ুন : জিয়াগঞ্জে ফ্রি-কোচিং সেন্টার খুলছেন অরিজিৎ