মুর্শিদাবাদ , 14 অক্টোবর : জিয়াগঞ্জে শিক্ষক খুনের ঘটনার পর সাত দিন পেরিয়ে গেছে ৷ খুনের তদন্তে এগোলেও সমাধানসূত্র এখনও মেলেনি ৷ পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় সমালোচনার ঝড় বিশিষ্ট মহলে ৷ খুনের রহস্যের জট কাটাতে নিয়োগ করা হয়েছিল রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ দলকেও ৷ কিন্তু রাজনৈতিক খুন? না কি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য? তার কিনারা হয়নি এখনও ৷ জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ তদন্তেও রহস্যের কোনও সমাধান মেলেনি ৷ এই নিয়ে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে প্রশাসন ৷
দশমীর দিন সকাল প্রায় এগারোটা নাগাদ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল (30) ও পুত্র অঙ্গন (5) -সহ নিজের বাড়িতেই খুন হন বন্ধুপ্রকাশ পাল ৷ নৃশংসভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁদের ৷ ঘটনার নৃশংসতা নিয়ে নিন্দায় সরব হন সবাই ৷ তদন্তকারী দল বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে জিয়াগঞ্জ, সাগরদিঘি, রামপুরহাট সহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালায় ৷ এমনকি ঝাড়খন্ড পর্যন্তও পাড়ি দেওয়া হয় তদন্তের জন্য ৷ কিন্তু এত কিছুর পরেও রহস্যের কোনও কিনারা করতে পারেনি প্রশাসন ।
ঘটনার পর সাতদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় পুলিশি গাফিলতি নিয়ে সরব হয়েছেন মৃতের পরিবারবর্গ সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট মহল ৷ পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "তদন্তের জাল গুটিয়ে আনা হয়েছে । অপরাধীও নাগালের মধ্যে । পুলিশ নিশ্চিত হতে চাইছে সুপারি কিলার দিয়েই খুন করা হয়েছে কিনা ।"
দু'দিন আগে তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিল রাজ্য গোয়েন্দা শাখা । CID ও জেলা পুলিশ, সন্দেহভাজন একাধিকজনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেও খুনের মোটিভ বার করতে পারেনি । পাল পরিবারের বন্ধু তথা ব্যবসায়িক সহকর্মী শৌভিক বণিককে তিনদিন আগে সিউড়ির এক হোটেল থেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ । সেদিন থেকেই তাকে আলাদাভাবে এবং পাল পরিবারের অন্যদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয় ৷ তাও পুলিশ কোনও কিনারা করতে পারেনি । তদন্তের কাজে CID-র একটি দল পাড়ি দিয়েছে ঝাড়খণ্ডে । কিন্তু সেখানেও কোন যোগসূত্র মেলেনি বলেই জানা গিয়েছে । পুলিশের দাবি খুন সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে । তদন্তের স্বার্থেই সেগুলি প্রকাশ করা হচ্ছে না । বেশ কিছু রহস্যের জট এখনও খুলতে পারেনি তদন্তকারী দল ৷
তারমধ্যে, পাল পরিবারের পরিচারিকা সুনীতা দাসকে ঘটনার দিন বিউটি পাল কেন আগেই বাড়ি যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেছিলেন? নবমীর রাতে স্বামী ও ছেলের সঙ্গে প্রতিমা দেখতে বেড়িয়ে বিউটি পাল কেন একলা বাড়ি ফিরলেন? সাগরদিঘি থেকে কেন বন্ধুপ্রকাশ পাল জিয়াগঞ্জে উঠে এলেন? এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে ৷
শৌভিক বণিকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ ইতিমধ্যে পেয়েছে পুলিশ । কিন্তু সেটাই খুনের কারণ বলে মনে করছে না পুলিশ । 7 দিন পরেও খুনের রহস্যের জট না কাটায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠছে । DIB-র এক শীর্ষকর্তা বলেন, ''ধানতলা কাণ্ডে নিরপরাধীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ বিপাকে পড়েছিল । মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের লক্ষ্য সঠিক ব্যক্তিকে প্রমাণ সহ গ্রেপ্তার করা । দেরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিচারের সময় সুবিধা হবে।''