লালবাগ, 9 ফেব্রুয়ারি : চিকিৎসার গাফিলতিতে কেউ মারা গেলে হাসপাতালগুলিতে ভাঙচুর চালায় মৃতের আত্মীয়রা ৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডাক্তারকে মারধরও করা হয় ৷ এতদিন এই দৃশ্যই দেখে এসেছে রাজ্যবাসী ৷ এবারও প্রতিবাদ হল ৷ তবে অন্যভাবে ৷ বলা ভালো চেনা ছক থেকে বেরিয়ে নতুন পন্থায় প্রতিবাদ দেখালেন রোগীর আত্মীয়রা ৷ তাঁরা ডাক্তারবাবুকে মারধর করার বদলে গলায় পরিয়ে দিলেন মালা, হাতে তুলে দিলেন নগদ টাকা ৷ ঘটনাস্থান মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল ৷
শুক্রবার রাত তিনটে 45 নাগাদ লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভরতি হন জিয়াগঞ্জের শতাব্দী দত্ত ৷ তাঁর অবস্থা দেখে তখনই কল দেওয়া হয় ডাক্তার বাসব সাহাকে ৷ হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেই সময় বাসববাবুর ডিউটি ছিল৷ অভিযোগ, তাঁকে কল দেওয়া হলেও তিনি আসেননি ৷ ফলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন শতাব্দী ৷ সকাল নয়টা নাগাদ হাসপাতালে আসেন বাসব সাহা ৷ শতাব্দীকে দেখে তিনি মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷
এরপরই হাসপাতাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ তবে সেখানে ভাঙচুর বা ডাক্তারকে মারধরের মতো ঘটনা ঘটেনি ৷ বরং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন মৃতার পরিবারের সদস্যরা ৷ তাঁরা সেখানে চাঁদা তোলেন ৷ সেই টাকা দিয়ে কেনেন মালা ৷ এরই মধ্যে দু'একজন বাসব সাহাকে হাসপাতাল থেকে বাইরে এনে মৃতদেহের সামনে দাঁড় করিয়ে দেন ৷ ততক্ষণে তাঁকে গোল করে ঘিরে ফেলেছেন আরও কয়েকজন ৷ এবার শুরু হয় ডাক্তারবাবুকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের পালা ৷ প্রথমে তাঁর গলায় পরানো হয় মালা ৷ এরপর এক এক করে সেখানে উপস্থিত লোকজন চাঁদা থেকে সংগৃহীত অর্থ ডাক্তারের হাতে তুলে দেন ৷
এরপর হাসপাতাল সুপার অভিজিৎ দেওঘরিয়াকেও ঘেরাও করেন মৃতার আত্মীয়রা ৷ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয় ৷ এদিকে খবর পেয়ে হাসপাতালে আসে মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশ ৷ তারা সেখান থেকে মৃতদেহ পাঠিয়ে দেয় মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ পুলিশের তরফে জানা গেছে, ঘটনায় মৃতার পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ৷
মৃতার এক আত্মীয় বলেন, "ডাক্তারদের মারধর করা বা হাসপাতালে তাণ্ডব চালানোর ঘটনা আমাদের রাজ্যে নিয়মিত হয়ে থাকে ৷ তাতেও ডাক্তারদের শিক্ষা হয় না ৷ তাই আমরা অভিনব প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিই ৷ ডাক্তারবাবুদের লজ্জা থাকলে এরপর থেকে আর কর্তব্যে গাফিলতি করবেন না ৷"