মালদা, 22 মে : লকডাউনে বন্ধ উপার্জন ৷ এদিকে আর ক’দিন পরেই ইদ ৷ উৎসবে শওহরের কাছে ছেলেমেয়েসহ নিজের জন্য নতুন জামাকাপড়ের আবদার করেছিলেন বিবি ৷ কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় বিবির শখ পূরণ করার ক্ষমতা ছিল না যুবকের ৷ এনিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয় ৷ রাগ করে ছেলেমেয়ে নিয়ে আব্বার বাড়িতে চলে যান বিবি ৷ এই পরিস্থিতিতে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন শওহর ৷ আজ সকালে নিজের ঘর থেকে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে ৷ রতুয়া এক নম্বর ব্লকের পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালদাপট্টি গ্রামের ঘটনা ৷
মৃত যুবকের নাম সাদ্দাম মিঞা ৷ বয়স 27 বছর ৷ সাদ্দামের আব্বার দু'টি ছোটো লরি রয়েছে ৷ সেই লরিই চালাতেন তিনি ৷ তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড় ছিলেন ৷ বছর আটেক আগে তাঁর নিকাহ্ হয় এলাকারই যুবতি মোস্তারি খাতুনের সঙ্গে ৷ তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে ৷ মেয়ে সুহানির বয়স সাত বছর ৷ ছেলে সুলতান পাঁচ বছরের ৷ স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সাদ্দামের ৷ হাতে টাকাপয়সা কিছুই ছিল না ৷ এনিয়ে বিবির সঙ্গে কিছুদিন ধরেই তাঁর ঝামেলা হচ্ছিল ৷ বিবি তাঁকে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে মুদির দোকান শুরু করার কথা বলেছিলেন ৷ কিন্তু দোকান করতে গেলে পুঁজির প্রয়োজন ৷ সেটাও সাদ্দামের কাছে ছিল না ৷ এদিকে এগিয়ে আসছে ইদ ৷ উৎসবে নিজের নতুন শাড়ি এবং ছেলেমেয়েকে জামাকাপড় কিনে দেওয়ার জন্য কয়েকদিন ধরেই তাঁর কাছে বায়না শুরু করেছিলেন বিবি ৷ সব মিলিয়ে প্রবল মানসিক চাপে ভুগছিলেন সাদ্দাম ৷ আজ ভোরে ফজরের নমাজের সময় সাদ্দামের আম্মি দেখতে পান ঘরের ভিতর ঝুলছে যুবকের দেহ ৷ তাঁর চিৎকারে জেগে ওঠে পরিবারের লোকজন ৷ খবর যায় রতুয়া থানায় ৷ পুলিশ ঘটনাস্থানে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠায় ৷
সাদ্দামের আব্বা আজুল মিঞা বলেন, "বাড়িতে ছোটো একটা মুদিখানার দোকানও আছে ৷ আমি ওকে সেই দোকানটা দিতে চেয়েছিলাম ৷ বলেছিলাম, ও বড় ছেলে, ও ভালো থাকলে পরিবারও ভালো থাকবে ৷ ওকে বলেছিলাম, ওর ইচ্ছা হলে গাড়ি চালাতে পারে, ইচ্ছা হলে দোকানও করতে পারে ৷ শেষ পর্যন্ত ও নিজেই আমাকে বলে, ও গাড়ি চালাবে ৷ আমাকে দোকানে বসতে বলে ৷ ছেলে পরিবার থেকে আলাদা হতে চায়নি ৷ বউমা চেয়েছিল ৷ এনিয়ে বউমা অবশ্য কোনওদিন বাড়িতে গন্ডগোল করেনি ৷ তবে লকডাউনের মধ্যে ছেলে আর বউমার মধ্যে টাকাপয়সা নিয়ে একটু গোলমাল হয়েছিল ৷ আমাদের কারোর হাতেই টাকাপয়সা নেই ৷ দু'টো গাড়ি বসা ৷ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনা হয়েছিল ৷ ওর ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওকে চিন্তা করতেও বারণ করেছিলাম ৷ কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না ৷ আমার মনে হয়, লকডাউনে বিবির সঙ্গে টাকাপয়সার গোলমালের জেরেই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ছেলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে ৷"
সাদ্দামের কাকা লালু মিঞা বলেন, "লকডাউনের মধ্যে এখন ছেলে রোজগার করতে পারছিল না ৷ ইদের আগে বিবি ওর কাছে টাকাপয়সা কিংবা নতুন জামাকাপড় চেয়েছিল ৷ এনিয়ে হয়তো ওদের মধ্যে ঝামেলা বাধে ৷ বিবি ছেলেমেয়ে নিয়ে গত পরশুদিন আব্বার বাড়িতেও চলে যায় ৷ এসব নিয়েই ছেলেটা টেনশনে ছিল ৷ লকডাউনে গাড়ি চালাতে পারছিল না ৷ বাড়িতেই বসে ছিল ৷ লকডাউনের জন্যই ছেলেটাকে এভাবে চলে যেতে হল ৷ মানসিক চাপ আর সহ্য করতে পারেনি ।" রতুয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৷ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি ৷ অভিযোগ জমা পড়লে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ বর্তমানে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷