মালদা, 16 ফেব্রুয়ারি: মালদার মাটিতে ছায়া পড়ছে সূর্যোদয়ের দেশের ৷ এবার জাপানের বহুমূল্য মিয়াজাকি আমের চাষ হবে এই জেলাতেও ৷ 'আতমা' প্রকল্পে জাপানি এই আমের চাষ মালদায় করার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি দফতর ৷ দু'একদিনের মধ্যেই প্রথম পর্যায়ে এসে পৌঁছচ্ছে 50টি মিয়াজাকি আমের চারা (World Most Expensive Mango Miyazaki) ৷ পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে শুধু ইংরেজবাজার ব্লকেই এই আমের চাষ হবে ৷ পরবর্তীতে জেলার প্রতিটি ব্লকেই এই আমের চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি দফতর ৷ এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরও ৷
ইংরেজবাজার ব্লক কৃষি দফতরের অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর ড: সেফাউর রহমান ইটিভি ভারতকে বলেন, "মালদায় মিয়াজাকি আমের চাষ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চিন্তাভাবনা চলছিল ৷ এর মূল উদ্যোক্তা হলেন আতমা প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর অমলকুমার সাহা ৷ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের সঞ্জয় ঘোষ ৷ এনিয়ে আমরা উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গেও কথা বলেছি ৷ মালদা আমের জেলা ৷ এখানে বর্তমানে যেসব প্রজাতির আম চাষ হচ্ছে, তার গুণগত মান সেভাবে ধরে রাখা যাচ্ছে না ৷"
তিনি আরও বলেন, "রফতানিতেও তার প্রভাব পড়েছে ৷ দেশ বা বিদেশের বাজারে আমরা সেভাবে দাম পাচ্ছি না ৷ সেখান থেকেই আমরা নতুন প্রজাতির আমচাষ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করি ৷ আমাদের লক্ষ্য, চাষিদের লাভের অংক বাড়ানো ৷ এবছর কিছু কৃষক উৎপাদন গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে ৷ এমনই একটি গোষ্ঠীর মাধ্যমে আমরা মিয়াজাকির চাষ শুরু করতে যাচ্ছি ৷ প্রথমে ইংরেজবাজারের একটি গোষ্ঠীর হাতে 50টি চারা দেওয়া হবে ৷ পরবর্তীতে পুরাতন মালদা ও গাজোল ব্লকেও এই চাষ শুরু হবে ৷ চারাগুলি স্থানীয় সরকারি মান্যতাপ্রাপ্ত নার্সারি থেকে কেনা হয়েছে ৷ প্রতিটি চারার দাম পড়েছে 950 টাকা ৷ পরবর্তীতে এই গাছ থেকে আমরাই কলম তৈরি করতে পারব ৷"
আরও পড়ুন: লেবু-মুসাম্বির বিকল্প, মুর্শিদাবাদে ফলছে বাংলাদেশের মাল্টা ফল
মিয়াজাকির বাজার ভালো হলেও মালদার হিমসাগর কিংবা ল্যাংড়ার স্বাদ বেশি ভালো ৷ সেকথা জানাচ্ছেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক ৷ তিনি বলেন, "মিয়াজাকি জাপানি আম বলে এর উদ্ভাবন হয়েছিল আমেরিকার ফ্লোরিডায় ৷ এই রাজ্যে মিয়াজাকি যে নেই সেটা নয়, অনেক জায়গাতেই এই আমের গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ জাপানে একবার এই আমের নিলাম হয় ৷ সেখানে একটি মিয়াজাকির দাম ওঠে দু'লক্ষ টাকারও বেশি ৷ তখন থেকেই এই আম বিশ্বের সবচেয়ে দামি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৷ এই আমের রং খুব ভালো ৷"
তিনি আরও বলেন, "কিন্তু এর মিষ্টতা মালদার হিমসাগর কিংবা ল্যাংড়ার মতো নয় ৷ তবে মিয়াজাকি আমের আঁশ কম ৷ ফলে আকর্ষণীয় রংয়ের জন্য এই আম উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ৷ মিয়াজাকির পরীক্ষামূলক চাষের জন্য আতমা প্রকল্পে কৃষি দফতর কয়েকটি উৎপাদন ক্ষেত্র বেছে নিয়েছে ৷ উদ্যানপালন দফতর টেকনিক্যালি সাহায্য করছে ৷ দু'টি ব্লকের জন্য 50টি করে 100টি চারা আসছে ৷ যেহেতু মালদায় বেশ গরম পড়ে, তাই এই আবহাওয়া এবং মাটি মিয়াজাকির জন্য উপযুক্ত ৷ তবে মিয়াজাকির চারা চেনাটা বড় বিষয় ৷"
মিয়াজাকি আমের রং বেগুনি কিংবা গাঢ় লাল ৷ জাপানের মিয়াজাকি শহরের বাজারেই মূলত এই আমের দেখা মেলে ৷ সেখান থেকেই এই প্রজাতির আমের নামকরণ ৷ এই আমকে জাপানি ভাষায় 'তাইয়ো-নো-তামাগো' নামেও ডাকা হয় ৷ সেখান থেকেই বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে এই আমের নাম হয়েছে 'সূর্য ডিম' ৷ মালদার কয়েকটি নার্সারিতে বছর দু'য়েক আগে থেকেই এই প্রজাতির আমের চারা পাওয়া যাচ্ছে বলে খবর ৷ জানা যাচ্ছে, এই আম উৎপাদনে খানিকটা বেশি সময় লাগে ৷ তার সঙ্গে প্রয়োজন উষ্ণ আবহাওয়া এবং যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টি ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগেই মালদার রেশম চাষে বরাদ্দ 7 কোটি
আরও জানা গিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপন্ন হওয়া হলুদ রং ও আঁশের আম হল পেলিক্যান প্রজাতির ৷ কিন্তু মিয়াজাকি আম আরউইন প্রজাতির ৷ মিয়াজাকি আমের প্রতিটির ওজন 350 গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে ৷ আন্তর্জাতিক বাজারে এই আম সবচেয়ে দামি বলে বিবেচিত ৷ এক কেজি আমের দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দু'লাখ 70 হাজার টাকা ৷ জেলা কৃষি দফতর মনে করছে, যদি মালদায় সফলভাবে এই প্রজাতির আমের উৎপাদন হয়, তবে তার কিলো প্রতি দাম অতটা না-হলেও বেশ কয়েক হাজার টাকা হতে পারে ৷
একই ধারণা মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহার ৷ এই মুহূর্তে তিনি জেলার বাইরে ৷ ফোনে তিনি জানান, মালদা জেলায় মিয়াজাকি আমের চাষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজ্য সরকার এবং কৃষি দফতরকে ধন্যবাদ জানিয়েছন তিনি ৷ এই আম বাজারে 300 থেকে 1 হাজার টাকা কিলো দরে বিক্রি হতে পারে ৷ অন্যদিকে, বিদেশের বাজারে এই আম বহুমূল্য ৷ প্রতি কিলোর দাম 1 লাখ টাকা কিংবা তারও বেশি হতে পারে ৷ এসব শুনে মালদায় মিয়াজাকি চাষ নিয়ে উৎফুল্ল তিনি ৷
আরও পড়ুন: দামোদরের চরে পোস্ত চাষের রমরমা, কড়া পদক্ষেপ আবগারি দফতরের