মালদা, 11 নভেম্বর: মালদা (Malda) জেলার অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি আম এবং রেশম চাষ (Silk Cultivation) ৷ জেলার অন্তত 5 লক্ষ মানুষ রেশম চাষের উপর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের (WB Panchayat Election 2023) আগে সেই মানুষগুলোর মনে নতুন আশা জাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ জেলার রেশম শিল্পের উন্নয়নে 7 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার (West Bengal Government) ৷ স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এই পদক্ষেপ খুশি রেশমচাষি থেকে শুরু করে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই ৷
এই জেলার 15টি ব্লকের মধ্যে 11টিতেই রেশম চাষ হয় ৷ প্রায় 21 হাজার হেক্টর জমিতে রেশমের গুটিপোকা চাষ করা হয় ৷ অন্তত 70 হাজার পরিবার রেশম চাষ এবং সুতো উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ৷ বছরে চারবার এই চাষ হয় ৷ মরশুম অনুযায়ী, এই চাষগুলির স্থানীয় নাম বৈশাখী, ভাদরী, অঘ্রাণী আর ফাল্গুনী ৷ এর মধ্যে বৈশাখী আর ফাল্গুনী মরশুমেই সবচেয়ে ভালো রেশম চাষ হয় ৷ কারণ, এই দুই চাষের মরশুমে আবহাওয়া শুকনো থাকে ৷ প্রতি বছর গড়ে 600 মেট্রিক টন রেশম সুতো এই জেলায় তৈরি করা হয় ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে লড়তে হবে নিজেদের বিরুদ্ধেই; মন্ত্রীর কথায় এ কীসের ইঙ্গিত ?
গত কয়েক বছর ধরে রেশমচাষিরা অভিযোগ তুলছিলেন, কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারই এই শিল্পের উন্নতি নিয়ে কিছু ভাবছে না ৷ রেশমচাষিদের সহায়তা করার তো দূরের কথা, আগের সমস্ত সুবিধাও কেড়ে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ! বিশেষ করে রেশম কীট পালনের ঘর ও ওষুধপত্র বিতরণ সরকারের তরফে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ এ নিয়ে কয়েক মাস আগেই সরব হয়েছিলেন চাষির ৷ শেষ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের (Sabina Yeasmin) উদ্যোগে ঘুম ভাঙে সরকারের ৷ ফের রেশমচাষিদের প্রশাসনের তরফে সহায়তা করা শুরু হয় ৷ আর এবার এই শিল্প নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী ৷
সাবিনা বলেন, "মালদা জেলাকে বাঁচিয়ে রেখেছে আম আর রেশম ৷ এই শিল্পকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না ৷ যাঁরা রেশম শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের যাতে লাভ হয়, সেটাই আমি চাই ৷ আজ বলে নয়, যখন আমি মন্ত্রী ছিলাম না, তখনও বিধায়ক হিসাবে জেলার রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য এই দফতরে অসংখ্য চিঠি দিয়েছি ৷ রেশম শিল্পের উন্নয়নে নিজের দাবি জানিয়েছি ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রেশম শিল্পকে ভীষণ গুরুত্ব দেন ৷ তিনি এই শিল্পের উন্নয়নে 7 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন ৷ আরও কিছু প্রস্তাব আমি পাঠিয়েছি ৷ আশা করছি, আগামী দিনে সেই প্রস্তাবগুলিও অনুমোদন পাবে ৷"
দীর্ঘদিন ধরে রেশম কীট প্রতিপালন করেন জামাল হোসেন ৷ তিনি বলেন, "এবার 300 ডিম চাষ করছি৷ সরকারের তরফে খুব ভালো জাতের ডিম দেওয়া হয়েছে ৷ শুধু ডিম দেওয়াই নয়, সেরিকালচার দফতর থেকে মাঝেমধ্যে আমাদের চাষও দেখতে আসেন কর্মীরা ৷ ওষুধপত্রও দেন ৷ সরকারের তরফে আমাদের ভালোই সহযোগিতা করা হয় ৷"
একই বক্তব্য ইরা বিবিরও ৷ তিনি জানান, "পলু চাষ করেই আমার সংসার চলে ৷ দফতর থেকে আমাদের সবরকম সাহায্যও করা হয় ৷ তবে সরকারের তরফে পলু প্রতিপালনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হলে আরও ভালো হত ৷"