মালদা, 3 জুলাই: একসময় তাঁরা একে অন্যের উদ্দেশ্যে তোপ দেগেছেন, মামলাও হয়েছে ৷ স্বয়ং মন্ত্রী জনসভায় বলেছেন, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের ৷ কিন্তু এখন উপরতলার সিদ্ধান্তে তাঁরাই গলা জড়িয়ে ঘুরছেন ৷ শাসকদলের এই ছবি ধরা পড়েছে রতুয়া 2 নম্বর ব্লকে ৷ এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা ৷
রতুয়ার রাজনীতিতে স্থানীয় বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ফজলুল হকের বিরোধ সর্বজনবিদিত ৷ মাস কয়েক আগে ফজলুল সাহেবকে দল থেকেও বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন সমর মুখোপাধ্যায় ৷ রতুয়ায় সভা করতে এসে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের লড়াই হবে তৃণমূলেরই সঙ্গে ৷ পরোক্ষে ফজলুল সাহেবকে ‘ছাঁট মাল’ বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি ৷ এমনকী ফজলুল সাহেবও সংবাদমাধ্যমে সমর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জমি মাফিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ তুলতেন ৷
একদিন কিংবা দু’দিন নয়, বছরের পর বছর এই দুই নেতার প্রকাশ্য ঝামেলা দেখে এসেছে এলাকার মানুষজন ৷ কিছুদিন আগে মাদ্রাসা নির্বাচনে দুই গোষ্ঠী একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল ৷ কিন্তু এ বারের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই ফজলুল হককেই রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের 26 নম্বর জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী করেছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব ৷ তাই এখন ঢোঁক গিলে গলা জড়িয়ে এলাকায় ঘুরছেন যুযুধান দু’জন ৷ এমনকী দলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসিরও সুর নরম ৷ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে অস্বস্তিতে পড়েন তিনি ৷
কিন্তু এমনটা হল কীভাবে ! উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ফজলুল সাহেবের সঙ্গেই সাসপেন্ড হয়ে থাকা রতুয়ার তৃণমূল নেতা সিদ্ধার্থ সাহা ৷ তিনি বলছেন, সমর মুখোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক আর কাজ করে না ৷ কখন কী বলেন, নিজেই জানেন না ৷ তিনি আদি তৃণমূলিদের কারওকে গুন্ডা, কারওকে বিজেপির এজেন্ট বলেন ৷ গোটা রাজ্যেই পুরনো তৃণমূল কর্মীদের অবহেলা করা হচ্ছে ৷ লাখ লাখ টাকায় প্রার্থীপদ বিলি করা হচ্ছে ৷ কিন্তু এখানে তৃণমূলের পাশে মানুষ নেই ৷ সমর এখানে মানি মার্কেট চালাচ্ছেন ৷ ফজলুল সাহেবের সঙ্গে তাঁর কীভাবে গোপন বোঝাপড়া হল জানা নেই ৷ তবে এই দলে টাকার বিনিময়ে সব কিছুই করা সম্ভব ৷ এখন ফজলুল সাহেবের হয়ে সমরবাবু প্রচার করছেন ৷ দলীয় সভায় তাঁকে এ নিয়ে কথাও শুনতে হয়েছে ৷ এরা রাজনীতির জন্য যে কোনও সময় মানুষকে বলি দিতে পারে ৷ সিদ্ধার্থ সাহার অভিযোগ, "শুনছি, এ বার প্রশাসন নাকি এখানে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ের শংসাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ মানুষের রায় যাই হোক না কেন, আমরা সজাগ আছি ৷ তেমন হলে প্রশাসনিক কর্তাদের বিরুদ্ধে আমরা কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে রেখেছি ৷”
আরও পড়ুন: ছেলের বিয়ে, ভোটের ডিউটি এড়াতে একই আসনে নির্দল প্রার্থী পরিবারের 7
এ নিয়ে প্রশ্ন করলে সমর মুখোপাধ্যায় স্পিকটি নট ৷ তাঁকে পাশে রেখে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলেন, “রাজনীতিতে অনেক কথা চালাচালি হয় ৷ সেটা ঘরের বিষয় ৷ 26 নম্বর জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থীকে কখনও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি ৷ তাঁকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়েছিল ৷ সাসপেন্ড আর বহিষ্কার এক নয় ৷ দলের জেলা কমিটির আলোচনা সাপেক্ষে এবং ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের নির্দেশে তাঁকে দলে ফেরানোর সঙ্গে প্রার্থীও করা হয়েছে ৷ তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন, এখনও আছেন ৷ আমরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছি ৷”
কী বলছেন ফজলুল সাহেব ! তাঁর বক্তব্য, “আমাকে তৃণমূল বহিষ্কার করেনি, সমর মুখোপাধ্যায় ব্যক্তিগতভাবে করেছিলেন ৷ আমি এ নিয়ে আর কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করব না ৷ তবে বহিষ্কার করা হলে তৃণমূল আমাকে প্রার্থী করত না ৷ মন্ত্রী এসে ছাঁট তৃণমূলের কথা বললেও আমাদের উল্লেখ করে বলেননি ৷ যাঁরা দল থেকে বেরিয়ে অন্য দলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছে, তাঁদের বলেছিলেন ৷ এই এলাকা আমার হাতের তালুর মতো চেনা ৷ তাই এখনও জেলা সভাপতিকে প্রচারে ডাকিনি ৷ গোটা জেলার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে ৷ বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে ছুটতে হচ্ছে ৷ আমি তাঁকে এর মধ্যে বিরক্ত করতে চাইনি ৷ হয়তো শেষের দিকে আমার প্রচারে তিনি সময় দেবেন ৷”
গোটা ঘটনা নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা ৷ সিপিএমের রতুয়া 1 নম্বর ব্লক কমিটির সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলছেন, “তৃণমূল নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো ৷ এটা লুটেরাদের দল ৷ করে খাওয়ার পার্টি ৷ এখানে যে বহিষ্কৃত হয়েছে সেও করে খাওয়া, যে বহিষ্কার করেছে সেও করে খাওয়া ৷ এদের কে কখন বিজেপির গোডাউনে, কখন তৃণমূলের গোডাউনে থাকে জানা নেই ৷ দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে সমর মুখার্জি, ফজলুল হককে বাপবাপান্ত করল, ছাঁট মাল বলল ৷ সমর মুখার্জি, রহিম বকসিরাও অবশ্য ছাঁট মাল ৷ এখন ভোটের সময় দুই লুটেরা এক হয়েছে ৷ পাঁচ বছর করে খেতে হবে তো ৷ মানুষই এদের রুখবে ৷ মানুষই সুষ্ঠু গণনার ব্যবস্থা করে নেবে ৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর আমাদের ভরসা নেই ৷ মানুষই আমাদের বিশ্বাস ৷”