মালদা, 19 জানুয়ারি: পঞ্চায়েতের খাতায় কলমে মনরেগা প্রকল্পের কাজ হয়ে গিয়েছে ৷ সেই কাজের বেশিরভাগ প্রকল্পের টাকাপয়সাও নাকি তুলে নেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু কাজটা কোথায় হয়েছে, সেটাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের অলিহণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীগঞ্জ গ্রামের মানুষ ৷ অনেক চেষ্টা করেও সেই কাজের অস্তিত্ব কেউ খুঁজে পাননি ৷
গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ: তবে বাঁশঝাড়, পরিত্যক্ত বাড়ি, এমনকী নদীতেও খুঁজে পেয়েছেন ওই সমস্ত কাজের বোর্ড ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে সেসব বোর্ড নিয়ে এসে গ্রামের মাঠে পুঁতেছেন এলাকার মানুষজন ৷ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সেখানেই (Villagers protest) ৷ তাঁদের বক্তব্য, এ নিয়ে পঞ্চায়েত প্রশাসনের সঙ্গে বিডিওকেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা ৷ কাজ হয়নি ৷ এই ঘটনা নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে অস্বস্তি ছড়িয়েছে ঘাসফুল শিবিরে ৷ অস্বস্তি এড়াতে বিরোধীদের দিকেই আঙুল তুলেছেন অভিযুক্ত সদস্য ৷ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে গত পাঁচ বছরের পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাব মেলাতে বসে পড়েছেন গ্রামের মানুষ ৷ দেবীগঞ্জে অবশ্য পাওয়ার থেকে না পাওয়ার পাল্লাটাই ভারী ৷ তেমনটাই অভিযোগ ওই গ্রামের বাসিন্দাদের ৷
গ্রামবাসীদের বক্তব্য: ওই গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, "গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মনরেগা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন ৷ যাঁরা এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, তাঁদের টাকা লুট করে পঞ্চায়েত সদস্য খেয়ে নিয়েছেন ৷ গ্রামের উন্নয়ন নয়, তিনি এই ক’বছরে শুধু নিজের উন্নয়ন করেছেন ৷ তাঁর বাড়ি, গাড়ি সবই হয়ে গিয়েছে ৷ মনরেগা প্রকল্পে একটি জায়গায় মাটি ভরাট করে পানীয় জলের ট্যাংক করার কথা ছিল ৷ এখন একটা ভরাট জায়গা দেখিয়ে তিনি ওই ট্যাংক তৈরির চেষ্টা করছেন ৷ এখানে ট্যাংক হলে এলাকার জলনিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে ৷ আমরা এখানে ট্যাংক করতে দেব না ৷ তার জন্য আজ বিক্ষোভ দেখিয়েছি ৷
রবিউল দাবি করেন, মনরেগার বিভিন্ন প্রকল্পের বোর্ড পঞ্চায়েত সদস্য নদীর ধারে একটি বাড়িতে ডাঁই করে রেখেছিলেন ৷ তা দেখতে পেয়ে তারা এই মাঠে ওই বোর্ডগুলি পুঁতে রেখেছেন ৷ এসব বোর্ডে লেখা কোনও প্রকল্পের কাজ হয়নি ৷ কলাবাগান, গোয়ালঘর গ্রামের মানুষ দেখতে পায়নি ৷ এসব প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা পঞ্চায়েত সদস্য আত্মসাৎ করে নিয়েছেন ৷ কিছু বলতে গেলেই বলছেন, তারা নাকি তাঁকে ভোট দেননি ৷ তাই কোনও কাজ হবে না ৷ রবিউলরা এসব কাজ নিয়ে তদন্ত দাবি করছেন ৷
পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ: আরেক গ্রামবাসী টিপু সুলতান বলেন, "2018 সালে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের পর থেকে এই এলাকায় যত কাজ হয়েছে, প্রতিটি কাজে দুর্নীতি হয়েছে ৷ মানুষ কোনও প্রকল্পের সম্পূর্ণ টাকা পায়নি ৷ যাঁর দু’হাজার টাকা পাওনা, তাঁকে এক হাজার দেওয়া হয়েছে ৷ যাঁদের সরকারি ঘরের জন্য এক লক্ষ 40 হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তাঁদের এক লক্ষ দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে ৷ গ্রামবাসীরা বাঁশঝাড়, পরিত্যক্ত বাড়ি, এমনকী নদী থেকে ওই বোর্ডগুলি খুঁজে এনে এই মাঠে পুঁতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ৷ এসব কোনও স্কিমের কাজ হয়নি ৷ আমরা বিষয়টি পঞ্চায়েত প্রশাসনের পাশাপাশি বিডিওকেও জানিয়েছি ৷ ফল মেলেনি ৷"
পঞ্চায়েতে সদস্যের দাবি: এ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত অলিহণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীগঞ্জ গ্রামের শাসকদলের সদস্য জাহাঙ্গির আলম বিরোধীদের দিকেই আঙুল তুলেছেন ৷ তাঁর সাফাই, "বিরোধীরা যেসব অভিযোগ করেছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ৷ আমি দেবীগঞ্জের যে উন্নয়ন করেছি, তা ওদের সহ্য হচ্ছে না ৷ তাই ওরা এই মিথ্যে অভিযোগ করেছে ৷ যেসব কাজ হয়ে গিয়েছে, সেই কাজগুলির পুরোনো বোর্ড নিয়ে এসে আমাকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে ৷
তিনি আরও বলেন, "অবশ্য কিছু বোর্ডের কাজ আমরা করতে পারিনি ৷ কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ৷ বোর্ডগুলি আমরা একটি জায়গায় রেখেছিলাম ৷ পুরোনো সব স্কিমের কাজ হয়েছে৷ শ্রমিকদের সবাইকে তাদের প্রাপ্যও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ আমার কাছে তার তথ্য প্রমাণ রয়েছে ৷ বিরোধীদের অভিযোগ করাই কাজ ৷"
আরও পড়ুন: বাংলা-বিহার দুই রাজ্যেরই আবাস তালিকায় নাম, হতবাক কেন্দ্রীয় দল