ব্যারাকপুর, 4 নভেম্বর: নির্বিঘ্নেই শেষ হল নৈহাটির জাগ্রত বড়মার নিরঞ্জন। নিরঞ্জন পর্ব ঘিরে সোমবার সকাল থেকেই সাজো সাজো রব ছিল বড়মার মন্দির চত্বর। সজাগ ছিল পুলিশ প্রশাসনও। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এদিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আটোসাঁটো করা হয়েছিল নৈহাটির অরবিন্দ রোড সংলগ্ন রাস্তাতে। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তার দু'ধার বরাবর ঘিরে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে।
ব্যারিকেডের বাইরে দাঁড়িয়েই এদিন মা'কে দর্শন করতে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়েছিল রাস্তার দু'ধারে। বলা ভালো, ভক্ত সমাগমে কার্যত মুখর হয়ে উঠেছিল নৈহাটির অরবিন্দ রোড চত্বর। কোথাও তিলধারণের জায়গা ছিল না । নিরাপত্তার কারণে এদিন বড়মার নিরঞ্জনের সময় গঙ্গার ঘাটে ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে। সূত্রের খবর, এদিন সকালে দধিকর্মা বিলি করার পর মায়ের শরীরের যাবতীয় সোনা-রুপোর গয়না খুলে ফেলেন মন্দির কমিটির লোকজন।
এরপর ফুল দিয়ে বড়মাকে নবরূপে সাজানো হয়। মায়ের সেই সাজ দেখতেও এদিন অগণিত মানুষ ভিড় করেছিলেন মন্দির চত্বরে। বরণ শেষে এদিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নিরঞ্জনের জন্য গঙ্গার দিকে যাত্রা শুরু করে নৈহাটির বড়মা। প্রথা অনুযায়ী এবারও বড়মাকে টলিতে চাপিয়ে দড়ি ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গাবক্ষে। সেসময় চারপাশ লোকে লোকারণ্য। রাস্তার দু'ধার তো বটেই। আশপাশের বাড়ির ছাদেও ভিড় জমিয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষ।
ফুল ঢাকা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে একুশ হাতের দীর্ঘ দেহি আজানুলম্বা এলোকেশ, ঘোর কৃষ্ণবর্ণের বড়মার গঙ্গায় নিরঞ্জন হল আনুমানিক বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। এদিকে, নৈহাটির বড়মার নিরঞ্জন নির্বিঘ্নে শেষ করতে এদিন সকাল থেকেই তৎপর ছিলেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের শীর্ষকর্তারা। বাদ ছিল না নৈহাটি বড়কালী প্রসার সমিতি এবং স্থানীয় পুরসভাও। সুষ্ঠুভাবে নিরঞ্জন প্রক্রিয়া শেষ করতে এদিন 1100 পুলিশ, 500-র বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছিল অরবিন্দ রোড থেকে নৈহাটি স্টেশন চত্বর পর্যন্ত। সক্রিয় ছিলেন বম্ব স্কোয়াডের লোকজনও। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নজরদারি ছিল গঙ্গাবক্ষেও।
অন্যদিকে, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার আলোক রাজোরিয়া, সাংসদ পার্থ ভৌমিক, বড়কালী প্রসার সমিতির সভাপতি তথা ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায়-সহ সমাজের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ হাজির ছিলেন বড়মার নিরঞ্জনের সময়। বিদায় বেলায় মায়ের উদ্দেশ্যে ভক্তরা পুষ্পবৃষ্টি শুরু করেন। সঙ্গে শুরু হয় বাতাসা নিবেদনও। সেই ফুলে ঢাকা রাস্তা দিয়ে নিয়ে গিয়েই গঙ্গায় বড়মার নিরঞ্জন সম্পন্ন হয়।
এবিষয়ে নৈহাটি বড়কালী প্রসার সমিতির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্যের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "পুজোর ক'দিন এবং নিরঞ্জনের সময় সবমিলিয়ে প্রায় 35 লক্ষ দর্শনার্থী এসেছেন বলেই আমাদের অনুমান। নিরঞ্জন হলেও মঙ্গলবার থেকে বড়মার মন্দিরে স্বাভাবিক নিয়মেই পুজো চলবে।"