মালদা, 8 অগস্ট: রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কালিয়াচকে । রোগীর পরিবারের লোকজন নার্সিংহোম ভাঙচুরের পাশাপাশি 12 নম্বর জাতীয় সড়কে মৃতদেহ রেখে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আহত হন এক পুলিশ কর্মী। এরপর লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। এই ঘটনায় আপাতত 5 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে গত 2 অগস্ট সুজাপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন মোথাবাড়ি থানার ছোটো মহদিপুরের বাসিন্দা আরেফা বিবি । 3 তারিখে আরেফা বিবিকে নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় । গতকাল তাঁর কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় । সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ইংরেজবাজারের একটি নার্সিংহোমে ভরতি করা হয় । রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় আরেফা বিবির । এরপর আজ সকালে পরিবারের লোকজন আরেফা বিবির প্রথম নার্সিংহোমে ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করেন । অভিযোগ, এর পরেই পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা প্রথম নার্সিংহোমটির সামনে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে । পরে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে খানিক বচসা হতেই ক্ষিপ্ত জনতা সেখানে ভাঙচুর চালান । মৃতদেহটি 12 নম্বর জাতীয় সড়কে রেখে পথ অবরোধ শুরু হয় । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কালিয়াচক থানার পুলিশ । অনেক প্রচেষ্টার পরেও ক্ষিপ্ত জনতাকে শান্ত করতে পারেননি পুলিশ কর্মীরা । উলটে ক্ষিপ্ত জনতার হাতে এক পুলিশ কর্মী আহত হন । পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়।
আরেফা বিবির এক আত্মীয় সামিউল শেখ বলেন, “প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে আরেফাকে সুজাপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল । এখন আমরা বুঝতে পারছি সেখানে আরেফার ভুল চিকিৎসা করা হয়েছিল। এখন শুনতে পাচ্ছি অপারেশনের সময় আরেফার উচ্চ রক্তচাপ ছিল । যখন বিষয়টি ওদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায় তখন ওরা আরেফাকে অন্য একটি নার্সিংহোমে পাঠিয়ে দেয় । গতকাল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বাবদ 50 হাজার টাকা দাবি করে । গতকাল রাত দু‘টো নাগাদ আমরা জানতে পারি আরেফার মৃত্যু হয়েছে । আমরা প্রথম নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করি । কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনওভাবেই নিজেদের ভুল স্বীকার করেনি । উলটে ওরা নার্সিংহোমের বিল মেটালে কিছু টাকা দেবে বলে । আমরা তাতে রাজি হয়নি । এরপর দুপুরে আমরা রোগীকে দ্বিতীয় নার্সিংহোম থেকে ছাড়িয়ে প্রথম নার্সিংহোম চত্বরে নিয়ে আসি । আমরা রোগী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তায় অনেক লোকের জমায়েত হয় । এরপরেই ঘটনাস্থলে ব়্যাফ চলে আসে। ব়্যাফ বেপরোয়াভাবে লাঠিচার্জ করতে থাকে । আমাদেরও মারধর করা হয়েছে । কারা নার্সিংহোমে ভাঙচুর করেছে তা আমাদের জানা নেই ।”
অভিযুক্ত নার্সিংহোমের পক্ষে কেতাবুদ্দিন শেখ বলেন, “গত 2 অগস্ট আরেফা খাতুন নামে এক রোগী ভরতি হয় । ডাক্তার তাপসকুমার বণিক রোগীকে দেখে জানান, আরেফার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা ভাল নেই। পরিবারের লোকেদেরও জানান, সিজার করতে হবে। পরিবারের লোকজন তাতে অনুমতি দেন । সিজারের কয়েক মিনিট পরেই অপারেশন থিয়েটারে রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে থাকে । বাচ্চাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় । কিন্তু অনেক চিকিৎসার পরেও রোগীর শ্বাসকষ্ট ঠিক করা যাচ্ছিল না। এরপরেই রোগীকে মালদা মেডিকেলে রেফার করা হয়। কিন্তু রোগীর পরিবারের লোকজন মালদা মেডিকেলের বদলে একটি নার্সিংহোমে রোগীকে ভর্তি করেন । সেখানে কী চিকিৎসা হয়েছে সেটা ওই নার্সিংহোমের বিষয় । আজ সকালে নার্সিংহোমে এসে দেখি ওই পরিবারের লোকজন নার্সিংহোমের সামনে জমায়েত করছেন । দুপুরে দেখি পরিবারের লোকজন আরেফার মৃতদেহ নার্সিংহোমের সামনে রেখে পথ অবরোধ করছেন । হইচই করে নার্সিংহোমের কর্মীদের মারধর করে, হুমকি দেয় । পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয় । পুলিশের সামনেও গালিগালাজ করা হয় । পরে আরও পুলিশ কর্মী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন । যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা এই নার্সিংহোমের নাম বদনাম করতেই তোলা হয়েছে ।”
আরও পড়ুন: মৃত রোগীর চিকিৎসা করে লক্ষাধিক টাকার বিল, কাঠগড়ায় মেদিনীপুরের এক নার্সিংহোম
কালিয়াচক থানার আইসি মদনমোহন রায় জানান, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়েই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি । মৃতদেহ জাতীয় সড়কের ওপরে রেখেই বিক্ষোভ চালিয়ে যান রোগীর পরিবার ও স্থানীয় লোকজন । এরপরেই ঘটনাস্থলে আরও পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয় । অবরোধ তুলতে গিয়ে এক পুলিশ কর্মী আহত হন । বর্তমানে তিনি সুজাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন । এরপরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয় । এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।