মালদা, 8 জুলাই : পুলিশ বলছে দুর্ঘটনা, পরিবারের দাবি খুন । দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শুরু বিতর্ক । মৃতের নাম মজিবুর রহমান (61) । বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে । রবিবার পুরোনো মালদার নারায়ণপুর এলাকায় 34 নম্বর জাতীয় সড়কের ধার থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে মালদা থানার পুলিশ ।
মজিবুর দীর্ঘদিন ধরে মুরগি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । ব্যবসার জন্য প্রতিদিন সকালে মালদা আসতেন । রাতে বাড়ি ফিরে যেতেন । রবিবার ভোর সাড়ে 3টে নাগাদ উদ্ধার হয় তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ । পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে মালদা থানায় নিয়ে যায় । মৃতদেহের পাশ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের উপর ভিত্তি করে খবর দেওয়া হয় পরিবারের লোকজনকে । থানায় এসে মৃতদেহ শনাক্ত করেন তাঁরা । প্রাথমিক তদন্তে মালদা থানার পুলিশের বক্তব্য, জাতীয় সড়কে কোনও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন মজিবুর । যদিও পুলিশের এই তত্ত্ব মানতে রাজি নন মৃতের পরিবারের সদস্যরা ।
মজিবুরের ছেলে আমিরুল ইসলাম বলেন, "40 বছর ধরে আব্বা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । ব্যবসার কেন্দ্রই ছিল মালদা । প্রতিদিন সকালে মালদায় আসতেন, রাত সাড়ে 10টা থেকে 11 টার মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতেন । শনিবার সকালে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কিন্তু রাতে আর ফেরেননি । অনেকবার ফোন করি । কিন্তু পায়নি । আজ সকালে মালদা থানার পুলিশ আব্বার মোবাইল ফোন থেকেই আমাদের ফোন করে । পুলিশ জানায়, গতকাল রাতে জাতীয় সড়কে আব্বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন । তাঁর মৃতদেহ থানায় রাখা আছে । সেই খবর পেয়েই আমরা থানায় যাই । আব্বার দেহ শনাক্ত করি । সকালেই পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠিয়ে দেয় মালদা মেডিকেলে । আমরা আব্বার সারা শরীর দেখে নিশ্চিত হই, কোনও দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়নি । নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে । শরীরের একাধিক জায়গায় কুড়ুল ও ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে । আঘাতের চিহ্ন রয়েছে মাথাতেও । দুর্ঘটনায় এরকম ক্ষতচিহ্ন হয় না । তাছাড়া যে জায়গা থেকে আব্বার দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে তাঁর যাওয়ার কথা নয় । সেখানে কোনও স্ট্যান্ডও নেই । তাহলে অত রাতে তিনি কেন সেখানে যাবেন ? আমরা পুলিশের কাছে যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছি । যদিও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে কারোর সঙ্গে আব্বার শত্রুতা ছিল কি না, তা আমাদের জানা নেই ।" মজিবুরের ভাই মতিউর রহমান বলেন, " দাদা বলেছিল, ব্যবসা সূত্রে একজনের কাছ থেকে প্রায় 50 হাজার টাকা পাবে । কিন্তু সেই ব্যক্তি টাকা দিচ্ছে না । একাধিকবার ওই ব্যক্তির কাছে বকেয়া চাওয়া হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে পাওনাদার ব্যক্তির দাদার সঙ্গে নাকি ঝামেলাও হয়েছে । কিন্তু সেই ব্যক্তি কে, তা জানি না । আজ সকালে পুলিশ আমাদের জানায়, দুর্ঘটনায় দাদা মারা গেছে । কিন্তু মৃতদেহ দেখে আমরা পরিষ্কার বুঝে গেছি এটা কোনও দুর্ঘটনা নয় । খুন করা হয়েছে । পুলিশ কেন এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে প্রমাণ করতে চাইছে জানি না । আমরা এই ঘটনায় যথাযথ তদন্তের সাপেক্ষে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি ।"