ETV Bharat / state

কোরোনা পরিস্থিতি : দুর্গাপুজোয় ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পায়ে বেড়ি! - মালদা

আর মাত্র 29 দিন। তারপরেই বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসবে মেতে ওঠার কথা বাঙালির। শুরু হবে দুর্গাপুজো । প্রতি বছর এই সময় সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া অধিকাংশ বাঙালির দীর্ঘদিনের অভ্যেস। কিন্তু বাধ সেধেছে কোরোনা ভাইরাস ৷

Covid 19 pandemics
Covid 19 pandemics
author img

By

Published : Sep 22, 2020, 10:01 PM IST

মালদা, 22 সেপ্টেম্বর : বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। গোটা দেশ, এমনকি বিশ্বেও বাঙালির গায়ে সেঁটে গিয়েছে এই তকমা । হবে নাই বা কেন! হাতে কয়েকদিন ছুটি, আর পকেটে খানিকটা রেস্ত থাকলেই "তুলল ঝোলা, চলল ভোলা ।" সেটা দুরদেশই হোক অথবা দিপুদা (দিঘা, পুরী, দার্জিলিং) । ঘর থেকে বের হতে পারলেই হল। কিন্তু 'আপদ' কোরোনা এবার বাঙালির সেই তকমা যেন ছিনিয়ে নিতে বসেছে। বাঙালির বেড়ানোর দুই সেরা সময় গরম আর পুজোর ছুটি । কোরোনা এবার আগেই মাটি করেছে গরমের ছুটি । কাড়তে চলেছে পুজোর ছুটির মৌতাতও। স্বাভাবিকভাবেই মুখ বেজার বাঙালির । মুখে হাসি নেই ট্রাভেল এজেন্টদেরও। তাঁরা জানাচ্ছেন, এবার পুজোর মরশুমে ব্যবসা পুরোপুরি মাটি হতে বসেছে। শুধুমাত্র এই জেলায় 10 কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতি হবে। রাজ্যে এই ক্ষতি দাঁড়াবে প্রায় 200 কোটি টাকায় ।

আর মাত্র 29 দিন। তারপরেই বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসবে মেতে ওঠার কথা বাঙালির । শুরু হবে দুর্গাপুজো । প্রতি বছর এই সময় সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া অধিকাংশ বাঙালির দীর্ঘদিনের অভ্যেস । গোটা বছরের একঘেঁয়ে জীবন থেকে কিছুটা মুক্তির স্বাদ, তার সঙ্গে মনের অক্সিজেন কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া। এটাই ভ্রমণপিপাসু বঙ্গ জীবনের অঙ্গ । কিন্তু এবার কোরোনা বাঙালিকে সেই অক্সিজেন বুকে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনলক চারেও এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি রেল ও বিমান পরিষেবা । বাস পরিষেবার একই হাল বলা চলে । কিছু স্পেশাল ট্রেন চালু করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে, আগামী 30 পর্যন্ত রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । তারপর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।

রেল কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, 30 সেপ্টেম্বরের পরেও পুরোনো সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল সম্ভব নয়। পরিষেবা স্বাভাবিক হতে অন্তত আরও দু'মাস সময় লাগবে। একই কথা শোনা যাচ্ছে বাস ও বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রেও। তবে সিংহভাগ বাঙালি ট্রেনে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে ভালোবাসে। সমস্যা আরও রয়েছে। বর্তমানে সরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন রাজ্য পর্যটন খুলে দিলেও কোরোনার আতঙ্কে সেখানকার মানুষ পর্যটকদের ভালো নজরে দেখছে না। অনেক জায়গায় হোটেল পরিষেবাও ঠিকমতো চালু হয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয়, বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ভিন রাজ্যে সমস্যায় পড়তে হতে পারে এই রাজ্যের পর্যটকদের । এই অবস্থায় অনেকেই উত্তরবঙ্গ কিংবা সিকিমে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু সিকিম সরকার এখনও পর্যটকদের জন্য নিজেদের রাজ্য উন্মুক্ত করেনি। ডুয়ার্স কিংবা উত্তরের পাহাড়ে পর্যটন সরকারিভাবে খুললেও বেশিরভাগ হোটেল এখনও বন্ধ রয়েছে। গাড়ির সমস্যাও রয়েছে। তার উপর সেই এলাকাগুলিতেও স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। তাই এবারের পুজোয় ভ্রমণ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদার বেশিরভাগ পর্যটক ।

মালদা শহরের একটি স্কুলের শিক্ষিকা রত্না দত্ত । বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে তিনবার বেড়াতে যান । গত মার্চ মাস থেকে তিনি ঘরবন্দী । পুজোতেও এবার বাইরে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, "এ-বছর পরিস্থিতি বেড়ানোর সহায়ক নয়। সবাই কোরোনার জন্য গৃহবন্দী। বলতে গেলে খাঁচায় বন্দী । প্রতিবছর দু'তিনবার বেড়াতে যাই । সাধারণত একটা ট্যুর শেষ করার পরেই আমরা পরের ট্যুরের প্ল্যান করে নিই । সেই অনুযায়ী প্রতি মাসে টাকা জমা করি। মাসের বাজার করার মতো আমরা বেড়ানোর জন্যও প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করি। অন্য বছর এই সময় পুজোর সমস্ত প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়ে যায় এমনকি বাক্স-প্যাঁটরাও প্রায় গুছিয়ে ফেলি । কিন্তু এবার যা পরিস্থিতি, তাতে টিকিট কাটা তো দূরের কথা, টিকিট কাটলেও যাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ । কারণ, বাইরে বেড়াতে গিয়ে কোনও সমস্যায় পড়লে সহায়তা পাব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । কাছের সিকিম কিংবা দার্জিলিংও এখন অনেক দূরের হয়ে গিয়েছে। শুনছি, সেসব জায়গায় নিজেরা গাড়ি নিয়ে গেলেও স্থানীয়রা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বাড়ি থেকে বেরোনোর সাহস পাচ্ছি না। এবার দক্ষিণ ভারত যাওয়ার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু তা কিছুতেই সম্ভব নয়। কাছাকাছি কোথাও যেতেও সাহস পাচ্ছি না। বাচ্চা নিয়ে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না ।"

ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পায়ে বেড়ি!

শিক্ষকতা করেন গৃহবধূ তুলিকা বাগচিও। বেড়ানো তাঁর শখ নয়, নেশা। তিনি বলেন, "এই অতিমারিতে এবার গরমের ছুটি আমাদের ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। আমরা বছরে প্রায় পাঁচবার বেড়াতে যাই। পুজোর সময় দূরে কোথাও । কিন্তু এবার এখনও পর্যন্ত বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছি না। এখনও ঠিকমতো ট্রেন চলছে না। গাড়িঘোড়াও অনিয়মিত । আমার 6 বছরের বাচ্চা রয়েছে। খুব ছোট থেকে সে বেড়াতে যায়। তাকে নিয়ে বাইরে গেলে সব জায়গায় সঠিক ব্যবস্থা পাব কি না তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে ।" আর এক ভ্রমণপ্রেমী কমল রাম বলেন, "সাধারণত গরম ও পুজোর ছুটিতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাই। এবার একটু দোটানায় রয়েছি । বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাব চলছে। সরকার বেড়ানোর ছাড়পত্র দিলেও কিছুটা আতঙ্কে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি। এ নিয়ে খানিকটা মানসিক অবসাদে ভুগছি। গরমের সময় অসম যাওয়ার কথা ছিল । সেটা বাতিল করতে হয়েছে । পুজোর ছুটিতে কোথাও যাওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন সামনে আসছে। এসব নিয়েই দোটানায় রয়েছি ।"

মালদা শহরের অন্যতম ট্রাভেল এজেন্ট তুলসি ট্রাভেলসের মালিক মনমোহন সারদা বলেন, "এবারের পরিস্থিতি খুব খারাপ। অন্যান্য বছর এই সময় আমাদের নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না। বিশেষ করে ট্রেন ও বিমানের টিকিটের চাহিদা সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এবার কোনও চাহিদা নেই। মানুষ বাইরে যেতে চাইছে না। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত ট্রেন ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এবারের পুজোয় পর্যটন ব্যবসা পুরোপুরি মার খেল ।" আর এক ট্যুর অপারেটর, ডায়মন্ড ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক সন্তোষ কেশরী বলেন, "কোরোনা এবার আমাদের ব্যবসায় প্রচুর প্রভাব ফেলেছে। এবার গরমের ছুটিতে আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল । দুর্গাপুজোতেও ব্যবসা পুরোপুরি মাটি হতে বসেছে । পুজোর ছুটিতে এখানকার মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায় । মার্চে পুজোর কিছু বুকিং হয়েছিল। কিন্তু এপ্রিলেই সব বুকিং ক্যানসেল হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আর একটিও বুকিং হয়নি । প্রায় 12 বছর ধরে ব্যবসা করছি। এমনটা কখনও হয়নি ।"

মালদা, 22 সেপ্টেম্বর : বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। গোটা দেশ, এমনকি বিশ্বেও বাঙালির গায়ে সেঁটে গিয়েছে এই তকমা । হবে নাই বা কেন! হাতে কয়েকদিন ছুটি, আর পকেটে খানিকটা রেস্ত থাকলেই "তুলল ঝোলা, চলল ভোলা ।" সেটা দুরদেশই হোক অথবা দিপুদা (দিঘা, পুরী, দার্জিলিং) । ঘর থেকে বের হতে পারলেই হল। কিন্তু 'আপদ' কোরোনা এবার বাঙালির সেই তকমা যেন ছিনিয়ে নিতে বসেছে। বাঙালির বেড়ানোর দুই সেরা সময় গরম আর পুজোর ছুটি । কোরোনা এবার আগেই মাটি করেছে গরমের ছুটি । কাড়তে চলেছে পুজোর ছুটির মৌতাতও। স্বাভাবিকভাবেই মুখ বেজার বাঙালির । মুখে হাসি নেই ট্রাভেল এজেন্টদেরও। তাঁরা জানাচ্ছেন, এবার পুজোর মরশুমে ব্যবসা পুরোপুরি মাটি হতে বসেছে। শুধুমাত্র এই জেলায় 10 কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতি হবে। রাজ্যে এই ক্ষতি দাঁড়াবে প্রায় 200 কোটি টাকায় ।

আর মাত্র 29 দিন। তারপরেই বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসবে মেতে ওঠার কথা বাঙালির । শুরু হবে দুর্গাপুজো । প্রতি বছর এই সময় সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া অধিকাংশ বাঙালির দীর্ঘদিনের অভ্যেস । গোটা বছরের একঘেঁয়ে জীবন থেকে কিছুটা মুক্তির স্বাদ, তার সঙ্গে মনের অক্সিজেন কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া। এটাই ভ্রমণপিপাসু বঙ্গ জীবনের অঙ্গ । কিন্তু এবার কোরোনা বাঙালিকে সেই অক্সিজেন বুকে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনলক চারেও এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি রেল ও বিমান পরিষেবা । বাস পরিষেবার একই হাল বলা চলে । কিছু স্পেশাল ট্রেন চালু করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে, আগামী 30 পর্যন্ত রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । তারপর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।

রেল কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, 30 সেপ্টেম্বরের পরেও পুরোনো সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল সম্ভব নয়। পরিষেবা স্বাভাবিক হতে অন্তত আরও দু'মাস সময় লাগবে। একই কথা শোনা যাচ্ছে বাস ও বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রেও। তবে সিংহভাগ বাঙালি ট্রেনে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে ভালোবাসে। সমস্যা আরও রয়েছে। বর্তমানে সরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন রাজ্য পর্যটন খুলে দিলেও কোরোনার আতঙ্কে সেখানকার মানুষ পর্যটকদের ভালো নজরে দেখছে না। অনেক জায়গায় হোটেল পরিষেবাও ঠিকমতো চালু হয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয়, বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ভিন রাজ্যে সমস্যায় পড়তে হতে পারে এই রাজ্যের পর্যটকদের । এই অবস্থায় অনেকেই উত্তরবঙ্গ কিংবা সিকিমে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু সিকিম সরকার এখনও পর্যটকদের জন্য নিজেদের রাজ্য উন্মুক্ত করেনি। ডুয়ার্স কিংবা উত্তরের পাহাড়ে পর্যটন সরকারিভাবে খুললেও বেশিরভাগ হোটেল এখনও বন্ধ রয়েছে। গাড়ির সমস্যাও রয়েছে। তার উপর সেই এলাকাগুলিতেও স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। তাই এবারের পুজোয় ভ্রমণ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদার বেশিরভাগ পর্যটক ।

মালদা শহরের একটি স্কুলের শিক্ষিকা রত্না দত্ত । বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে তিনবার বেড়াতে যান । গত মার্চ মাস থেকে তিনি ঘরবন্দী । পুজোতেও এবার বাইরে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, "এ-বছর পরিস্থিতি বেড়ানোর সহায়ক নয়। সবাই কোরোনার জন্য গৃহবন্দী। বলতে গেলে খাঁচায় বন্দী । প্রতিবছর দু'তিনবার বেড়াতে যাই । সাধারণত একটা ট্যুর শেষ করার পরেই আমরা পরের ট্যুরের প্ল্যান করে নিই । সেই অনুযায়ী প্রতি মাসে টাকা জমা করি। মাসের বাজার করার মতো আমরা বেড়ানোর জন্যও প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করি। অন্য বছর এই সময় পুজোর সমস্ত প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়ে যায় এমনকি বাক্স-প্যাঁটরাও প্রায় গুছিয়ে ফেলি । কিন্তু এবার যা পরিস্থিতি, তাতে টিকিট কাটা তো দূরের কথা, টিকিট কাটলেও যাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ । কারণ, বাইরে বেড়াতে গিয়ে কোনও সমস্যায় পড়লে সহায়তা পাব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । কাছের সিকিম কিংবা দার্জিলিংও এখন অনেক দূরের হয়ে গিয়েছে। শুনছি, সেসব জায়গায় নিজেরা গাড়ি নিয়ে গেলেও স্থানীয়রা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বাড়ি থেকে বেরোনোর সাহস পাচ্ছি না। এবার দক্ষিণ ভারত যাওয়ার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু তা কিছুতেই সম্ভব নয়। কাছাকাছি কোথাও যেতেও সাহস পাচ্ছি না। বাচ্চা নিয়ে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না ।"

ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পায়ে বেড়ি!

শিক্ষকতা করেন গৃহবধূ তুলিকা বাগচিও। বেড়ানো তাঁর শখ নয়, নেশা। তিনি বলেন, "এই অতিমারিতে এবার গরমের ছুটি আমাদের ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। আমরা বছরে প্রায় পাঁচবার বেড়াতে যাই। পুজোর সময় দূরে কোথাও । কিন্তু এবার এখনও পর্যন্ত বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছি না। এখনও ঠিকমতো ট্রেন চলছে না। গাড়িঘোড়াও অনিয়মিত । আমার 6 বছরের বাচ্চা রয়েছে। খুব ছোট থেকে সে বেড়াতে যায়। তাকে নিয়ে বাইরে গেলে সব জায়গায় সঠিক ব্যবস্থা পাব কি না তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে ।" আর এক ভ্রমণপ্রেমী কমল রাম বলেন, "সাধারণত গরম ও পুজোর ছুটিতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাই। এবার একটু দোটানায় রয়েছি । বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাব চলছে। সরকার বেড়ানোর ছাড়পত্র দিলেও কিছুটা আতঙ্কে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি। এ নিয়ে খানিকটা মানসিক অবসাদে ভুগছি। গরমের সময় অসম যাওয়ার কথা ছিল । সেটা বাতিল করতে হয়েছে । পুজোর ছুটিতে কোথাও যাওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন সামনে আসছে। এসব নিয়েই দোটানায় রয়েছি ।"

মালদা শহরের অন্যতম ট্রাভেল এজেন্ট তুলসি ট্রাভেলসের মালিক মনমোহন সারদা বলেন, "এবারের পরিস্থিতি খুব খারাপ। অন্যান্য বছর এই সময় আমাদের নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না। বিশেষ করে ট্রেন ও বিমানের টিকিটের চাহিদা সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এবার কোনও চাহিদা নেই। মানুষ বাইরে যেতে চাইছে না। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত ট্রেন ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এবারের পুজোয় পর্যটন ব্যবসা পুরোপুরি মার খেল ।" আর এক ট্যুর অপারেটর, ডায়মন্ড ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক সন্তোষ কেশরী বলেন, "কোরোনা এবার আমাদের ব্যবসায় প্রচুর প্রভাব ফেলেছে। এবার গরমের ছুটিতে আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল । দুর্গাপুজোতেও ব্যবসা পুরোপুরি মাটি হতে বসেছে । পুজোর ছুটিতে এখানকার মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায় । মার্চে পুজোর কিছু বুকিং হয়েছিল। কিন্তু এপ্রিলেই সব বুকিং ক্যানসেল হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আর একটিও বুকিং হয়নি । প্রায় 12 বছর ধরে ব্যবসা করছি। এমনটা কখনও হয়নি ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.