মালদা, 26 এপ্রিল: ভরা সভায় প্রকাশ্যে সরকারি দুই আমলাকে ধমক দিচ্ছেন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ৷ বুধবার এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ৷ সরকারি পাট্টা বিলি নিয়ে এদিন সভানেত্রী ও পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষের অনুগামীদের মধ্যে হাতাহাতিও বেঁধে যায় ৷ যদিও গোটা বিষয়টিকে অনভিপ্রেত বলেছেন বিডিও ৷
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট ৷ আর তাকে কেন্দ্র করে জন সংযোগ যাত্রায় নেমেছেন খোদ অভিষোক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এমনকী দলের নেতাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারিও শোনা গিয়েছে অভিষেকের গলায় ৷ তার মাঝেই, এই ঘটনায় চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল শিবির ৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো এদিন দুয়ারে সরকারের ষষ্ঠ অধ্যায়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক কমিউনিটি হলে ভূমিহীনদের পাট্টা বিলির আয়োজন করেছিল ব্লক প্রশাসন ৷ মোট 66 জনকে এদিন সরকারি জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে ৷ সেই অনুষ্ঠান চলাকালীনই কমিউনিটি হলে সপার্ষদ উপস্থিত হন হরিশ্চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী কোয়েল দাস ৷ অভিযোগ, সেখানে এসেই রীতিমতো হম্বিতম্বি করতে থাকেন সভানেত্রী ৷ অভিযোগ, ধমক দিয়ে তিনি বিডিও এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে পাট্টা বিলি অনুষ্ঠান বন্ধ করতেও বলেন ৷
যদিও হরিশ্চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী কোয়েল দাসের পালটা অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকা কাটমানি নিয়ে যাদের জমি ও বাড়ি রয়েছে, তাদের নাম পাট্টাপ্রাপকদের তালিকাভুক্ত করেছেন ৷ যদিও সভানেত্রীর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে অনুষ্ঠান চালিয়ে যান দুই সরকারি আমলা ৷ অন্যদিকে, বাইরে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতি বেঁধে যায় ৷ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী কোয়েল দাস বলেন, "রাতের অন্ধকারে পাট্টা প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে ৷ এই কাজ করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ ৷" এই ঘটনার সঙ্গে সরকারি কর্তারাও জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, "আমাকে ছাড়াই পাট্টা দেওয়া হল ৷ পঞ্চায়েত সমিতির রেজুলেশনেও আমার স্বাক্ষর নেই ৷ আজ ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মারামারি করার জন্য গুণ্ডা নিয়ে এসেছেন ৷"
উল্লেখ্য, হরিশ্চন্দ্রপুরে বন্যাত্রাণ দুর্নীতিতে কোয়েল দাসের বিরুদ্ধেই কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৷ যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা এখনও বিচারাধীন ৷ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কোয়েল দাসকে বিঁধেছেন পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য মিশ্র ৷ তিনি বলেন, "পাট্টা বিলিতে কোনও দুর্নীতি হয়নি ৷ একাধিকবার তদন্ত করে প্রাপকদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ৷ আর যিনি অভিযোগ তুলছেন, তাঁরাই এই এলাকার এক নম্বর খতিয়ানের জমি বিক্রির নায়ক ৷" বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করার কথাও জানিয়েছেন আদিত্য মিশ্র ৷ তিনি বলেন, "আমার কাছে সব প্রমাণ আছে ৷ বন্যাত্রাণের 10 কোটি টাকা কোথায় গেল? তাঁর নামে মামলা হল কেন ? বন্যাত্রাণের টাকা অবৈধভাবে বিলি হয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: কালিয়াগঞ্জে থানায় ঢুকে পুলিশ কর্মীদের পেটাল উত্তেজিত জনতা
এদিন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ভিক্টর সাহা সাফ বলেন, "ধমক দিয়ে কোনও লাভ নেই ৷ আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবই ৷ সব কিছু খতিয়ে দেখে, একাধিকবার তদন্ত করে ভূমিহীন মানুষের তালিকা তৈরি করা হয়েছে ৷ এখানে দুর্নীতির কোনও প্রশ্ন নেই ৷ তাছাড়া আজকের অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীকে যে আমন্ত্রণ জানাতেই হবে, এমন কোনও বিষয় নেই ৷" বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, "যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত এবং দুর্ভাগ্যজনক ৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে এখানে পাট্টা বিলি অনুষ্ঠান করা হয়েছে ৷ তবে এখানে দুর্নীতির প্রশ্নই ওঠে না ৷" পাশাপাশি আইন মোতাবেক কাজ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি ৷