মালদা/হুগলি, 24 মে: মঙ্গলবার কালবৈশাখীর কবলে পড়ে রাজ্যে দু'টি পৃথক ঘটনায় মৃত্যু হল তিনজনের ৷ এর মধ্যে মালদায় ঝড়ের মধ্যে বাগানে আম কুড়োতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দু'জনের ৷ আহত হয়েছেন আরও দু'জন ৷ মঙ্গলবার বিকেলে মানিকচক ব্লকের দুই থানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে ৷ দুটি দেহই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে মানিকচক ও ভূতনি থানার পুলিশ ৷ মৃতদের পরিবার যাতে সরকারি সাহায্য পায়, তার জন্য পুলিশের তরফে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷ অন্যদিকে কালবৈশাখীর কারণে দেওয়াল চাপা পড়ে হুগলিতে মৃত্যু হয়েছে একজনের। মৃতের নাম পাঁচকড়ি মাঝি। বয়স 73 বছর ৷ সিঙ্গুরের বারুইপাড়া পলতাগর পঞ্চায়েতের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
ঝাড়খণ্ডে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে সোমবার রাত থেকে মেঘলা আকাশ ছিল জেলাগুলিতে ৷ মাঝেমধ্যে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়াও বইছিল ৷ মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ জেলাজুড়ে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয় ৷ মুহুর্মুহু বজ্রপাত চলছিল ৷ ঝড়ের মুহূর্তে আম কুড়োতে নাবালক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পাশে আমবাগানে যান মানিকচক থানার এনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা হারেস মোমিন ৷ আম কুড়োনোর মধ্যেই হঠাৎ ওই বাগানে বাজ পড়ে ৷
ঘটনাস্থলে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় 44 বছর বয়সি হারেসের ৷ আহত হয় তাঁর নাবালক ছেলেও ৷ বিষয়টি নজরে আসতেই গ্রামবাসীরা মানিকচক থানায় খবর দেন ৷ হারেসের ছেলেকে তড়িঘড়ি মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে সে ৷ মানিকচক থানার আইসি পার্থসারথি হালদার জানিয়েছেন, বজ্রপাতে মৃত হারেস মোমিনের পরিবার যাতে সরকারি সহায়তা পায়, তার জন্য তাঁরা যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছেন ৷ হারেসের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে ৷
এ দিকে একই সময় মানিকচক ব্লকেরই উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহেব রামটোলা গ্রামের বাসিন্দা কবিতা মণ্ডল, মেয়ে সুপ্রিয়াকে নিয়ে বাড়ির কাছে একটি বাগানে আম কুড়োতে গিয়েছিলেন ৷ সেই সময় বজ্রাহত হয়ে ওই আমবাগানেই মৃত্যু হয় 38 বছর বয়সি কবিতার ৷ গুরুতর আহত হয় সুপ্রিয়াও ৷ ঘটনাটি জানতে পেরেই সেখানে যান ওই গ্রামের ভিলেজ পুলিশকর্মী ৷ তিনি ভূতনি থানায় খবর দেন ৷ পুলিশের গাড়িতেই আহত সুপ্রিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় মালদা মেডিক্যালে ৷ পরে কবিতার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয় ৷ ভূতনি থানার ওসি কুণালকান্তি দাস জানিয়েছেন, কবিতার পরিবার যাতে সরকারি সহায়তা পায় তার জন্য তিনি মানিকচকের বিডিওর সঙ্গে কথা বলেছেন ৷ সব ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
গতকালের কালবৈশাখী ঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে হুগলির বিভিন্ন এলাকা । কালবৈশাখীর প্রকোপে হুগলির সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর ও ধনিয়াখালীতে ভেঙে পড়েছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি ৷ উড়ে গিয়েছে একটি বাড়ির চাল । আরামবাগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প । এছাড়া বৈদ্যবাটিতে একটি শনি মন্দির ভেঙে পড়েছে । একাধিক জায়গায় রাস্তার উপর উপড়ে পড়েছে গাছ । ভেঙে পড়েছে দেওয়াল । রাস্তার উপর ইলেকট্রিক পোস্ট ভেঙে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা । সিঙ্গুর থেকে বলরামবাটি যাওয়ার রাস্তার উপর গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা । সাইকেল কাঁধে নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে দেখা যায় মানুষজনকে ।
হুগলিj জেলাশাসক পি দিপাপ প্রিয়া জানিয়েছেন, সিঙ্গুর হরিপাল তারকেশ্বরে ঝড়ে বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । গাছ ভাঙা, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ার পাশাপাশি প্রায় পঞ্চাশটি কাঁচা বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে । বিপর্যয় মোকাবিলার কর্মীরা নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে যদি কেউ বিপদে পড়ে তাকে উদ্ধার করার ।
আরও পড়ুন: মাত্র 15 মিনিটের ঝড়ে তছনছ হবিবপুর; মৃত নাবালিকা-সহ 2, আম ও ফসলের বিরাট ক্ষতি