মালদা, 30 মে : প্রায় দু’বছর ক্লাসরুমে বসে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিল করোনা ৷ খুদে পড়ুয়ারা স্কুলের চেনা জগৎটাই ভুলে গিয়েছিল ৷ অতিমারির সেই প্রকোপ কমলে ফের স্কুল খোলে ৷ হইহই করে স্কুল যেতে শুরু করে অধিকাংশ পড়ুয়া ৷ কিন্তু, সেটাও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ৷ গরমের জন্য টানা 45 দিন ছুটি ঘোষণা করে রাজ্য সরকার ৷ সরকারি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে হইচইও কম হয়নি ৷ এই বিষয়টি ভাবিয়েছিল ইংরেজবাজার ব্লকের শোভানগর এলাকার কিছু মানুষকে ৷ তার মধ্যে ছিলেন সদ্য উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া ছাত্রছাত্রীরাও ৷ করোনা পরবর্তী সময়েও স্কুল বন্ধের কারণে খুদে পড়ুয়ারা যাতে পড়াশোনায় পিছিয়ে না যায় তার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা ৷ গ্রামে গ্রামে খুলে ফেলেছেন খুদেদের পাঠশালা (Summer Camp in Malda to Involve Primary Students in Study) ৷ যেখানে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন স্থানীয় শোভানগর হাইস্কুলের 19 জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ৷ সঙ্গে রয়েছেন আরও অনেকে ৷
এলাকারই বাসিন্দা বৃক্ষয় দাস এই ভাবনার একজন শরিক ৷ তিনি বলেন, “এটাকে আমরা আসলে সামার ক্যাম্প নাম দিয়েছি ৷ এলাকারই কিছু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নিয়ে আমরা এই ক্যাম্পের আয়োজন করেছি ৷ বাড়ির আশেপাশে থাকা বাচ্চাদেরই এখন পড়ানো হচ্ছে ৷ শোভানগর অঞ্চলে আমরা এমন 17টি সেন্টার খুলেছি ৷ এখন 200 জনের বেশি খুদে পড়ুয়া এই ক্যাম্পগুলিতে পড়ছে ৷ ক্যাম্পগুলি কারও বাড়ি কিংবা কোনও ক্লাবঘরে চলছে ৷ আসলে করোনার জন্য দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল ৷ সেই সময় সংক্রমণের জন্য তাদের এভাবে পড়ানোর ব্যবস্থাও করা যায়নি ৷ স্কুল খোলার পর ফের দেড়মাসের জন্য স্কুলে গ্রীষ্মকালীন ছুটি হয়ে গিয়েছে ৷ এ সবে বাচ্চারা পড়াশোনায় খুব পিছিয়ে পড়েছে ৷ বাচ্চারা যাতে পড়াশোনার সংস্পর্শে থাকতে পারে, তার জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা ৷’’
আরও পড়ুন : HC on summer vacation: সরকারি স্কুলে কেন এতদিন গরমের ছুটি ? রাজ্যের বক্তব্য জানতে চাইল হাইকোর্ট
এমনই একটি সেন্টারে খুদেদের পড়াচ্ছিলেন অয়ন চৌধুরী ৷ এ বার শোভানগর হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন ৷ তিনি জানান, “আমি এ বার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি ৷ এখন হাতে অনেকটা সময় রয়েছে ৷ গত দু’বছর করোনার জন্য গ্রামের ভাই-বোনরা পড়াশোনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল ৷ স্কুল খুলতেই ফের দেড়মাসের জন্য গরমের ছুটি হয়ে গিয়েছে ৷ বাচ্চারা যাতে পড়াশোনা ভুলে না যায়, তার জন্য আমরা তাদের পড়াচ্ছি ৷ আমাদের গ্রামে দু’টি ক্যাম্প রয়েছে ৷ অন্যান্য গ্রামগুলোতেও এমন ক্যাম্প রয়েছে ৷ বাচ্চাদের পড়াতে বেশ ভাল লাগছে ।”
এই ক্যাম্পগুলিতে পড়াশোনার জন্য অভিভাবকদের কোনও টাকা পয়সা দিতে হয় না ৷ খেলার ছলে দাদা-দিদিরা তাদের পড়াচ্ছেন ৷ বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে যোগ-বিয়োগ, ছবি আঁকা থেকে গান-বাজনা, সবই তারা শিখছে দাদা-দিদিদের কাছে ৷ এক পড়ুয়ার অভিভাবক প্রতিমা কর্মকার বলছেন, “লকডাউনে অনেকদিন স্কুল বন্ধ ছিল ৷ এখন স্কুলে গরমের ছুটি ৷ বাচ্চারা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না ৷ তাই এই ক্যাম্পে বাচ্চাদের পড়াতে পাঠাচ্ছি ৷ এখানে কোনও টাকাপয়সা নেওয়া হয় না ৷ এখানে ক্লাস ফোর পর্যন্ত বাচ্চাদেরই পড়ানো হচ্ছে ৷’’