মালদা,14 জুন : নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ থেকে পুরোহিতদের সরকারি ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নির্বাচনী প্রচারে প্রায়ই তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে এই প্রতিশ্রুতির কথা । কিন্তু, চাঁচল মহকুমার পুরোহিতদের অভিযোগ, তাঁরা এখনও কোনও ভাতা পাননি । তাহলে পুরোহিতদের সরকারি ভাতা কি শুধুই তৃণমূল নেত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ? তেমনটাই অভিযোগ করছে উত্তর মালদার ব্রাহ্মণ সমাজ ৷ চাঁচল মহকুমার পুরোহিতরা প্রকাশ্যেই বলছেন, ভোটে জিততে নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ থেকে পুরোহিতদের সরকারি ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ভোট মিটে গিয়ে নতুন সরকারের কাজকর্ম শুরু হলেও এখনও ভাতা পাননি পুরোহিতরা ৷ যদিও ইমাম-মোয়াজ্জিনরা সেই ভাতা নিয়মিত পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ৷ পেট চালাতে অনেক পুরোহিত এখন আইসক্রিম কিংবা ঝালমুড়িও বিক্রি করছেন বলে দাবি তাঁদের ৷ এই পরিস্থিতিতে দ্রুত পুরোহিত ভাতার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা ৷ কেন পুরোহিত ভাতা এখনও চালু হল না, তা জানা নেই প্রশাসনের ৷ তবে চাঁচলের তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের জন্যই পুরোহিতরা এখনও সরকারি ভাতা পাননি ৷
কোভিড পরিস্থিতিতে পুজোপার্বণ, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ ৷ কিছু বিয়ে হলেও তার বেশিরভাগ আইনি মতেই করা হচ্ছে ৷ ফলে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে পুরোহিতদের ৷ সংসার চালাতে অনেক পুরোহিত পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন ৷ এই বিষয়ে চাঁচল ঠাকুরবাড়ির পুরোহিত রাজু পাণ্ডে বলেন, “চাঁচল 1 নম্বর ব্লকে প্রায় আড়াই হাজার পুরোহিত ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ৷ এখনও পর্যন্ত একজনও ভাতা পাননি ৷ অনেকেই বলছেন, ভোটের আগে ওটা মুখ্যমন্ত্রীর চমক ছিল ৷ এখন আর কেউ ভাতার আশা করছেন না ৷ করোনার জন্য পুজো-পার্বণ বন্ধ ৷ বিয়ে কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানও হচ্ছে না ৷ অনেক পুরোহিতকে আইসক্রিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৷ সংসারটা তো চালাতে হবে ৷ এই ভাতাটা পেলে তাঁদের কিছুটা সুবিধে হত ৷ ইমাম ও মোয়াজ্জিনরা কিন্তু ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন ৷ শুধু পুরোহিতরা পাচ্ছেন না ৷ আমরা ভাতার আশা ছেড়েই দিয়েছি ৷”
চাঁচলরাজ এস্টেটের পুরোহিত অচিন্ত্য মিশ্রও ভাতা না পেয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন । বলছেন, “রাজ্য সরকার ঘোষিত ভাতা পেতে প্রায় 11 মাস আগে আমরা চাঁচল মহকুমাশাসক কিংবা বিডিও দফতরে আবেদন জমা দিয়েছিলাম ৷ আমার সঙ্গেই প্রায় 50 জন আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন ৷ আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের ৷ পুজো-পার্বণ করেই সংসার চালাই ৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, তাঁরা নাকি পুরোহিতদের ভাতা করে দিয়েছেন ৷ কিন্তু আমরা সেই ভাতা পাইনি ৷ আমাদের আর কী কী নথি জমা দিতে হবে, সেটাও বলা হচ্ছে না ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের আবেদন, তাঁর ঘোষণা ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি যেন দ্রুত আমাদের ভাতার ব্যবস্থা করে দেন ৷”
আরও পড়ুন, করোনায় স্তব্ধ মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর, ভাটা পড়েছে পর্যটনে
একই বক্তব্য আরেক পুরোহিত অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ৷ তাঁর বক্তব্য, “ব্লক অফিস থেকে দু’তিনবার ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছিল । আমরা ভাতা পেয়েছি কি না ৷ এটা ইয়ার্কি ছাড়া আর কিছু নয় ৷ শুধুমাত্র মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে ৷ আমরা ধরে নিয়েছি, নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ কোভিড পরিস্থিতিতে পুরোহিতদের অনেকে আইসক্রিম, ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন ৷”
এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল বল ঠেলে দিয়েছেন বিডিওর কোর্টে ৷ তিনি বলেন, “এই বিষয়টি পুরোপুরি বিডিওরা দেখাশোনা করেন ৷ তাঁরাই এনিয়ে কিছু বলতে পারবেন ৷” চাঁচল 1 নম্বরের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, তিনি পুরোহিতদের আবেদনপত্র উপরমহলে পাঠিয়ে দিয়েছেন ৷ কী কারণে তাঁদের ভাতা চালু হল না, তা তাঁকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে ৷ এদিকে চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ি করেছেন ৷ তিনি বলেন, “রাজ্যের বাজেট সাধারণত মার্চ মাসে হয় ৷ কিন্তু সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলেই নির্বাচন ঘোষণা করে ৷ নির্বাচন বিধির জটে রাজ্যের বাজেট করা যায়নি ৷ ভোট অন অ্যাকাউন্ট করা হয়েছিল ৷ তাই এমন বেশ কিছু বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি কাজ করতে পারেনি ৷ আগামী মাসের 2 তারিখ থেকে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে ৷ সেই সময় পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা হবে ৷ তাহলেই পুরোহিতদের এই সমস্যা দূর হবে ৷”
আরও পড়ুন, ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগ, ধ্বংসের মুখে রায়পুর রাজবাড়ি
সংসার চালাতে এখন অনেকেই আইসক্রিম কিংবা ঝালমুড়ি পর্যন্ত বিক্রি করছেন ৷ যাঁদের বয়স বেশি, তাঁরা সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন । এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কবে বাস্তবিত হবে, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সবাই ৷