মালদা, 24 ডিসেম্বর: আবাস যোজনায় (PM Awas Yojana) অবাক কাণ্ড ৷ সরকারি ঘর প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে কলেজের শিক্ষক, হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য, এমনকী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নামও ৷ তালিকা দেখে চোখ কপালে উঠেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষেরই ৷
তবে এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে মশালদহ ও দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৷ প্রকাশিত তালিকায় এমন সব নাম থাকার কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়েছে গোটা ব্লক জুড়ে ৷ অভিযোগ, তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের আসল বাড়ির ছবি-সহ বিডিওর কাছে অভিযোগ জানাতে যান স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ কিন্তু বিডিও নাকি সেই অভিযোগপত্র জমা নিতে অস্বীকার করেন ৷ শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে সমস্ত নথি গিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে আজ ওই এলাকায় বিক্ষোভও দেখান গ্রামবাসীরা ৷ যদিও বিডিওর সাফাই, তাঁর কাছে কেউ অভিযোগই দায়ের করতে আসেনি ৷ তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তালিকা থেকে নাম কাটানোর হিড়িক পড়েছে ৷
সম্প্রতি মালদা জেলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ৷ জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ঝাড়াই বাছাইয়ের পর এই প্রকল্পে জমা পড়া আবেদনপত্রের সংখ্যা হয় এক লক্ষ 67 হাজার 243টি ৷ পরবর্তীতে সেই তালিকার সার্ভে করা হয় ৷ সার্ভেতে 36 হাজার 145টি আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে ৷ গ্রাম সংসদে অনুমোদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত পর্যায়ে উপভোক্তাদের নাম পোর্টালে আপলোড করা হচ্ছে ৷ সেই কাজ প্রায় শেষের দিকে ৷ 31 ডিসেম্বরের মধ্যেই এই প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ের টাকা কেন্দ্রের কাছে দাবি করা হবে ৷
আরও পড়ুন: ফের আবাস যোজনায় বঞ্চনার অভিযোগ, পুরুলিয়ায় পথ আবরোধ গ্রামবাসীদের
কিন্তু প্রশাসনিক সার্ভে কি ঠিকমতো করা হয়েছে? এ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লক কংগ্রেস নেতৃত্ব (Congress Protest) ৷ সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হয়েছে এই ব্লকেই ৷ সংখ্যাটি প্রায় ন’হাজার ৷ স্বাভাবিকভাবেই ওই ব্লকের আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷ কংগ্রেস নেতৃত্ব সরাসরি দাবি করেছেন, এই বেনিয়মে বিডিওর হাত রয়েছে ৷ তিনিও শাসকদলের কাছ থেকে কাটমানি নিয়েছেন ৷
এ নিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগকারী তথা হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, "যাঁরা চাকরিজীবী, বাড়ি-গাড়ি, বাড়িতে বাতানুকূল যন্ত্র, সবই রয়েছে, তাঁদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে ৷ অথচ গরিব মানুষ ফুটপাথে থাকলেও ঘর পাচ্ছেন না ৷ শাসকদলের মদতেই এসব কাজ হচ্ছে ৷ এ নিয়ে আমি 19 ডিসেম্বর উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দিয়ে বিডিও অফিসে অভিযোগ জানাতে যাই ৷ অফিসের রিসিভিং সেকশন সেই অভিযোগ নিতে চায়নি ৷ এরপর বিডিওর কাছে গেলে তিনিও সব দেখে অভিযোগপত্র জমা নিতে অস্বীকার করেন ৷ অবশেষে 22 তারিখ আমি জেলাশাসকের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি ৷ বিডিও নিজে শাসকদলের সঙ্গে কাটমানি লেনদেনে জড়িত ৷ তাই তিনি আমার অভিযোগ জমা নেননি ৷ আমরা এ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হচ্ছি ৷"
আরও পড়ুন: আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল নেতাকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ, জুতোর মালা পড়িয়ে ঘোরানোর হুঁশিয়ারি
যদিও বিডিও বিজয় গিরি দাবি করেছেন, তাঁর কাছে কেউ কোনও অভিযোগ জানাতে আসেনি ৷ তাছাড়া এ নিয়ে তিনি কিছু মন্তব্য করবেন না ৷ যা বলার জেলাশাসক বলবেন ৷ তবে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের হতেই তালিকা থেকে নাম কাটানোর ধুম পড়েছে ৷ ইতিমধ্যে মহেন্দ্রপুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ও সামসী কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক মোজাহিদ রহমান তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন (Professor and teachers name in PM Awas Yojana list) ৷ একই পথে পা বাড়িয়ে রেখেছেন আরও অনেকে ৷